Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মোদির জন্য প্রস্তুত হচ্ছে ওড়াকান্দি

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০২১, ১:৫১ পিএম

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বরণে প্রস্তুত হচ্ছে মতুয়াদের প্রধান তীর্থ পীঠ গোপালগঞ্জের শ্রীধাম ওড়াকান্দি।
আগামী ২৭ মার্চ নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দি আসবেন। এদিন তিনি ওড়াকান্দির ঠাকুর পরিবারের সাথে নাট মন্দিরে মত বিনিময় করবেন। পরে তিনি হরিচাঁদ মন্দিরে পূজা দেবেন। এছাড়া মতুয়া প্রতিনিধিদের সাথে তাঁর স্বাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের বিধান সভা নির্বাচনে মতুয়া সম্প্রদায়রে ভোট পেতেই মোদি মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণ ও প্রধান পীঠস্থান ওড়াকান্দিতে আসছেন বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
মোদীর ওড়াকান্দি সফরের কথা নিশ্চিত করেছেন মতুয়া সাংঘাধিপতি ও মতুয়া আচার্য পদ্মনাভ ঠাকুর।
তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে বরণ করে নিতে আমরা প্রস্তুতি শুরু করেছি। ইতিমধ্যে মতুয়াদের নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রস্তুতি সভা করেছি। তারতীয় হাই কমিশনার, ডেপুটি হাই কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান, গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা ওড়াকান্দি পরিদর্শণ করেছেন। এছাড়া আইন শৃংখলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা দিনরাত কাজ করছেন। প্রয়োজনীয় হেলিপ্যাড নির্মাণ ও ওড়াকান্দিতে সাজ সজ্জার কাজ চলছে। আমরা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উষ্ণ অভিন্দন ও হৃদয়ের ভালাবাসা জানাতে আমরা সব রকমের ব্যবস্থা রাখবো।
মতুয়া সাংঘাধিপতি পদ্মনাভ ঠাকুর অরো বলেন,ওড়াকান্দিতে পূজা দিলে হরিচাঁদ ঠাকুরের অনুসারী মতুয়া ভক্তরা মোদির প্রতি সু দৃষ্টি দিতে পরেন। আসন্ন পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে এর প্রভাব পরতে পারে। পশ্চিমবঙ্গে মতুয়াদের ৩ কোটি ভোট আছে। এ ভোট বিধানসভা নির্বাচনে জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পাবে বলে ধারণা করছি। ভারতে মতুয়ারা খুবই সুসংগঠিত। এ কারণে তাদের সরকার মূল্যায়ন করছে।
ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও কাশিয়ানী উপজেলা চেয়ারম্যান সুব্রত ঠাকুর হিল্টু বলেন, ১২১৮ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন মাসের মধু ত্রয়দশী তিথিতে হরিচাঁদ ঠাকুর অর্বিরভূত হন। তিনি মতুয়া মতবাদের প্রবর্তক। ১২৮৪ বঙ্গাব্দের একই তিথিতে তিনি নিত্যধামে গমন করেন।
এ তিথিতে ওড়াকান্দির হরি মন্দিরে পূজা আর্চনা ও ¯œানোৎসব অনুষ্ঠিত হয়। তিনি আরো বলেন, বর্ণবাদ যাদের অস্পৃশ্য করে রেখেছিলো তারাই মতুয়া অনুসারী। মতুয়া এক ঈশ^রবাদে বিশ^াসী। নারী ও পুরুষের সমান অধিকার, বিধবা বিবাহ, শিক্ষা প্রসার, জাত-পাত প্রথা বিলোপ সহ মানব ধর্মের সব গুনাবলী রয়েছে মতুয়া মতবাদের মধ্যে। এ মতবাদের প্রবর্তক হরিচাঁদ ঠাকুর মতুয়াদের কাছে অবহেলিত ও বঞ্চিতদের ত্রাণকর্তা হিসেবে বিবেচিত। তিনি মতুয়াবাদ প্রচারে ব্রিটিশ, জমিদার ও ব্রাহ্মণ্য বাদের বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছেন। ঠাকুরের মৃত্যুর পর তাঁর ছেলে গুরুচাঁদ ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়ের হাল ধরেন। তিনি ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে ২ হাজার পাঠশাল প্রতিষ্ঠা করেন। পরে তিনি সাড়ে ৪ হাজার প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করেন। তিনি ব্রিটিশদের সাথে দেন দরবার করে ১৯০৮ সালে নমঃশূদ্রদের সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করান। এখন মতুয়া অনুসারীরা বিশে^র বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছেন। সমাজে পেয়েছে প্রতিষ্ঠা। তারা চাকরি, ব্যবসা বানিজ্য সহ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর মতুয়াদের একটি বড় অংশ ভারত চলে যায়। ভারতের পশ্চিম বঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ঠাকুর নগরে মতুয়াদের ধর্মকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বনগাঁও আসন থেকে ঠাকুর বংশের শান্তনু ঠাকুর বিজেপির টিকেটে লোক সভার সদস্য নির্বাচিত হন।
ওড়াকান্দির ছোট মা সীমা ঠাকুর বলেন,বাংলাদেশে আমরা শান্তিপূর্ন সহ অবস্থান করছি। এখানে কোন সাম্প্রদায়িক অশান্তি নেই। বিশ^ এজতেমার পর দ্বিতীয় বৃহত্তর জনসমাগম হয় ওড়াকান্দির মহাবারুনীর ¯œানোৎসবে । এখানে প্রায় পৌনে শ’ বছর ধরে চলে আসা ¯œানোৎসবে হিন্দুদের সব সম্প্রদায়ের মানুষ সহযোগিতা করে আসছে। আমরা এখানে বেশ ভাল আছি।
মতুয়া অনুসারী সুবল রায় বলেন, মতুয়াদের অন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিতে নরেন্দ্র মোদি ওড়াকান্দিতে আসছেন। এরমধ্য দিয়ে আমাদের মধ্যে নব জাগরণের সৃস্টি হয়েছে। বঞ্চিত মতুয়াদের প্রত্যাশিত সব অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমি বিশ^াস করি। অমরা নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করতে প্রস্তুতি শুরু করেছি। আশাকরি তাকে ভালভাবেই বরণ করে নিতে পারবো।
ওড়াকান্দির হরি মন্দিরের পূরোহিত হরি গোসাই বলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী ওড়াকান্দি আগমনে আমরা আনন্দিত ও গর্বিত। তিনি আমাদের মন্দিরে পূজা দেবেনে। এ পূজায় মতুয়া ভক্ত ও বিশ^বাসীর মঙ্গল ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। যে উদ্দেশ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ওড়াকান্দি আসছেন, হরিচাঁদ ঠাকুর নিশ্চই তাঁর মনোস্কামনা পুরণ করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ