Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কারাগারে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল

বসুরহাটে সহিংসতা মির্জার বিরুদ্ধে মামলা না নেয়ার অভিযোগ কঠোর অবস্থানে পুলিশ : গ্রেফতার ৬

নোয়াখালী ব্যুরো : | প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০২১, ১২:০০ এএম

নাশকতার এক মামলায় ডিবি পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসময় সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদলকে নতুন আরেকটি মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দুপুরে নোয়াখালী জুডিশিয়াল কোর্টের বিচারক সোয়েব উদ্দিন খাঁন এ আদেশ দেয়। তার বিরুদ্ধে আগের আরো ৩টি মামলার জামিন আবেদনও নাকচ হয়। এছাড়া, কোম্পানীগঞ্জে চলমান বিরোধ ও সহিংসতার ঘটনার তৃতীয় দিনেও সর্তক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

নোয়াখালী ডিবির ওসি হোসাইন আহম্মদ জানান, একটি নাশকতা মামলায় গত বৃহস্পতিবার বিকালে আটকের পর আইনানুগভাবে গতকাল দুপুরে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। শুনানি শেষে বিচারক জামিনের আবেদন নাকচ করে বাদলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীপক জ্যোতি খীসা জানান, গ্রেফতারকৃত মিজানুর রহমান বাদলকে চাপরাশিরহাট পূর্ব বাজারে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা মামলায়ও গ্রেফতার দেখিয়ে নোয়াখালী বিচারিক সোয়েব উদ্দিন খাঁনের আদালতে পাঠানো হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়।

এদিকে, পৌর এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে ৭টি ককটেল ও ২৫টি লাঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এসব অভিযানে মুছাপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ নতুন আরও ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনিয়ে পৃথক মামলায় ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মোতায়েন রয়েছে অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। গতকাল সকালেও বসুরহাট বাজারের বিভিন্ন পয়েন্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। ফের কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ও বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এড়াতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ছাড়াও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ১ জন এসপি, সার্বক্ষণিক ২ জন এএসপি এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও প্রায় ৩০জন পুলিশ পরিদর্শকের নেতৃত্বে ৩ শতাধিক পুলিশ ও ডিবি পুলিশ এবং র‌্যাবের ২টি টিম মোতায়েন রয়েছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি জানান, সংঘর্ষে জড়িতদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মুছাপুর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি ইকবাল চৌধুরীসহ নতুন আরও ৬জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এনিয়ে পৃথক মামলায় ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার আলমগীর হোসেন বলেছেন, কোম্পানীগঞ্জে আর কোনোভাবে বিশৃঙ্খলা হতে আমরা দেব না। সে লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থনে মাঠে রয়েছে।

মির্জার বিরুদ্ধে মামলা নিচ্ছে না পুলিশ : কোম্পানীগঞ্জে মির্জা কাদের ও বাদল গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পরিবারের মামলা পুলিশ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। এ জন্য অসহায় পরিবারটি সকল মহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরকালী গ্রামে নিহতের নিজ বাড়িতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করে নিহতের পরিবার।
সংবাদ সম্মেলনে নিহতের মা মরিয়মের নেছা ও ছোট ভাই এমদাদ হোসেন, এ হত্যাকান্ডের জন্য বসুরহাট পৌরসভার মেয়র কাদের মির্জাকে দায়ী করে হত্যাকান্ডে জড়িতদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। একই সাথে ঘটনার তিন দিন অতিবাহিত হলেও নিহতের পরিবারের হত্যা মামলা পুলিশ রুজু না করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নিহতের ছোট ভাই এমদাদ হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় মামলা নিয়ে আমি থানায় যাই। পরে আমি মামলার স্লিপটি ওসি সাহেবকে দেয়ার পর প্রথম আসামি তারা মির্জার নামটা দেখার পর ওসি সাহেব বলে মির্জার নামটি কেটে দিলে তারা মামলা দিবে। কাদের মির্জাকে প্রধান আসামি করায় পুলিশ মামলা নিচ্ছে না। এখন থানায় মামলা রুজু না করায় নিহতের পরিবার আদালতে মামলা দায়ের করবে জানিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে বাদলের পরিবার : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের নিঃশর্ত মুক্তি চাইলেন তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার কাকলী। এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের চরকালী গ্রামে নিজ বাড়িতে বাদলের মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার কাকলী তার স্বামীকে নির্দোষ দাবি করে বলেন, মির্জা কাদেরের যড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিনা কারণে তার স্বামী জেলে রয়েছে। কোম্পানীগঞ্জে সকল সংঘর্ষ, সহিংসতা, রক্তপাত ও খুনের জন্য একমাত্র আবদুল কাদের মির্জা দায়ী। কাদের মির্জা কোম্পানীগঞ্জের সকল অপরাজনীতির হোতা বলেও তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরো অভিযোগ করেন, যাদের লোক মারা গেছে তাদের কোনো মামলা নেয়া হয়নি, পুলিশ তালবাহানা করছে। কিন্তু যাদের লোক মারা যায়নি তাদের মামলা নেয়া হয়েছে। এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন, বাদলের মা, বড় বোন ফাতেমা আক্তার বকুল, ছোট বোন আমেনা বেগম।

কাদের মির্জার বিরুদ্ধে ভাগিনা মঞ্জু : কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ.লীগের সদস্য মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু তার মামা কাদের মির্জাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বিগত দিনের কোম্পানীগঞ্জের অপরাজনীতির হোতা তিনি। সাংবাদকর্মী বোরহান উদ্দিন মুজাক্কির এবং যুবলীগকর্মী আলাউদ্দিন হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়নি। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় নিজের ফেইজবুক লাইক ফেইজ থেকে লাইভে এসে তিনি এসব কথা বলেন। জানা যায়, মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু কাদের মির্জার আপন বড় বোনের ছেলে এবং উপজেলা আ.লীগের সদস্য। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের জনপ্রিয় সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে কাদের মির্জা বিরোধী বলয় থেকে মির্জা কাদেরের অপরাজনীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিস্ফোরক মন্তব্য করছেন ভাগিনা মাহবুবুর রশীদ মঞ্জু। তিনি বলেন, আমরা একজন সংবাদ কর্মী হারিয়েছি। আমরা দলের একজন নেতাকে হারিয়েছি। দুটো তাজা প্রাণ এ অপরাজনীতির হোতা কাদের মির্জার কারণে ঝরে গেছে। আমরা কোম্পানীগঞ্জের প্রশাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ