পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা মহামারিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিলেও অবশেষে হচ্ছে বাঙ্গালীর প্রাণের মেলা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাষার মাস ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে এবার মেলা হচ্ছে মার্চের দ্বিতীয়ার্ধে। ১৮ মার্চ থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ মেলার আর বাকি ৫দিন। পুরোদমে প্রস্তুতি চলছে মেলা প্রাঙ্গনে। করোনা পরিস্থিতিতে শারিরীক দূরত্বের বিষয়টি মাথায় রেখে এবার মেলার পরিসর বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গত সোমবার বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে মেলার স্টল বরাদ্দের ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এবার বইমেলায় অংশ নিবে ৫২২ টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ৫৩৮। ১৮১৭ টি ইউনিট এবং ৩৩টি প্যভিলিওন থাকলে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় বিক্রি নিয়ে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীকে ঘিরে ২০২১ সালের বইমেলা আয়োজিত হচ্ছে ভিন্ন আঙ্গিকে। করোনা মহামারি ও কাল বৈশাখী ঝড়ের বিষয়টি মাথায় রেখে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুরোদমে চলছে স্টল সাজানোর কাজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেল ৪টায় বইমেলার উদ্বোধন করবেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। এ বছর মেলার জন্য নির্ধারিত স্থান প্রায় ১৫ লক্ষ বর্গফুট, যা আগের বছরের চেয়ে ছয় লক্ষ ৫০ হাজার বর্গফুট বেশি।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে মেলার স্টল নির্মাণসহ সার্বিক প্রস্তুতি পরিদর্শন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, গতবারের চেয়ে মেলার পরিধি এবার অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। করোনার মধ্যে জনসমাগম বেশি হলে সামলাতে হিমশিম খেতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা খুব গভীরভাবে নিয়েছি। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে এবার রমনার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট ও স্বাধীনতা স্তম্ভ সংলগ্ন গেটগুলো মেলা চলাকালীন সময়ে ব্যবহার করা যাবে। একটি গেট প্রবেশের জন্য ও অন্যটি প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি সংলগ্ন একটি ও বাংলা একাডেমির বিপরীত দিকে একটি প্রবেশপথ রাখা হবে বলে জানান তিনি।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এবারের বইমেলা সাজবে ‘হে স্বাধীনতা’ থিমে। একুশের চেতনাকে ধারণ করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিব জন্মশতবর্ষ- সবকিছুই উঠে আসবে মেলায়। ১৮ মার্চ শুরু হয়ে মেলা শেষ হবে ১৪ এপ্রিল। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে এবারের মেলায় আগতদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় স্টল কিংবা প্যাভিলিয়ন নির্মাণের ক্ষেত্রেও বিবেচনায় থাকবে দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি। মেলা প্রঙ্গণ পরিদর্শন করে দেখা যায়, স্টল তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কারিগররা। মহামারী পরিস্থিতি বিচেনায় ভিড় এড়াতে স্টলের সামনে ফাঁকা জায়গা থাকছে বেশি; স্টলের দূরত্বও বাড়ানো হয়েছে। ফলে এবার প্রায় ১৫ লাখ বর্গফুটের বিশাল বিস্তৃতি পাচ্ছে বইমেলা; যা গতবারের প্রায় দ্বিগুণ। ২০২০ সালে বইমেলার আয়োজন হয়েছিল প্রায় আট লাখ বর্গফুট জায়গায়। স্বাস্থ্য সতর্কতার বিষয়ে, বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বলেন, প্রত্যেক প্রবেশপথে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা থাকবে। মেলায় প্রবেশ করতে হলে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে। ঝুঁকি এড়াতে মেলা প্রাঙ্গণের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়েছে। মেলায় প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা গেইট দিয়ে আরও একটি নতুন পথ করা হয়েছে। রাখা হয়েছে গাড়ি রাখার ব্যবস্থা।
এবারের বইমেলার সামগ্রিক সৌন্দর্য, বিন্যাস ও প্রকাশনায় থাকবে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আবহ। মেলার কারুকাজ ও আলোকচিত্রে থাকবে স্বাধীনতার চেতনার প্রকাশ। স্বাধীনতার পাঁচটি দশককে পাঁচটি আঙ্গিকে উপস্থাপন করা হবে। এতে করে দর্শনার্থীরা মেলায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর অনুভূতিও উপলব্ধি করতে পারবেন। স্বাধীনতা স্তম্ভের চারদিকে বর্ণমালা দিয়ে নির্মাণ করা হবে হরফ স্থাপনা। শাহবাগ থেকে টিএসসি, বাংলা একাডেমির সামনে দিয়ে দোয়েল চত্বরের রাস্তায় মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজে যেন মেলায় আসা দর্শনার্থীদের সমস্যা না হয়, সেজন্য ১৬ মার্চের মধ্যে ওই রাস্তা খালি করে দেওয়া হবে জানিয়ে জালাল আহমেদ বলেন, মেলা চলাকালে মেট্রোরেলের কাজ বন্ধ থাকবে। এছাড়া এই রাস্তায় যাতে বেশি জনসমাগম না হয়, সেজন্যই রমনার দিক দিয়ে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ রাখা হয়েছে। ঝড়-বৃষ্টি হলে কেউ যাতে না ভেজে, সেজন্য চারটি শেড নির্মাণ করা হবে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটও থাকবে। বৃষ্টি বা ঝড় না থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রগুলো মোড়ক উন্মোচনের স্থান ও লেখক আড্ডার জায়গা হিসাবে ব্যবহৃত হবে। এছাড়া ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়ে বইমেলায় বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থার ক্ষতি এড়াতে প্রতিটি স্টলের ওপরে ত্রিপলের বদলে দেওয়া হচ্ছে টিনের ছাউনি।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল মেলা প্রাঙ্গণে থাকবে লিটল ম্যাগাজিন চত্বর। অন্যবারের মত এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। এই কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হচ্ছে। মাসব্যাপী বইমেলায় এবারও শুক্র ও শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ ঘোষণা করা হবে। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নজরুল মঞ্চ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী থাকবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের শুরুতে প্রতিদিনই থাকছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ ও আবৃত্তি। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকবে। তবে শুক্রবার বেলা ১টা থেকে বেলা ৩টা এবং শনিবার বেলা ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিরতি থাকবে।
প্রতিবছর বইমেলায় বিক্রয়কর্মী থেকে শুরু করে পাঠক-শ্রেণী পর্যন্ত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশগ্রহণ থাকে। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো এখনো পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে। মার্চের শেষ দিকে স্কুল কলেজ খুললেও বন্ধ থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। এছাড়াও রয়েছে কাল-বৈশাখী ঝড়ের আশঙ্কা। সবকিছু মিলিয়ে প্রকাশকরা কিছুটা উদ্বিগ্ন হলেও আশাবাদী। তারা বলছেন, যেহেতু করোনার প্রকোপ ইতোমধ্যে অনেক কমে গেছে। আমরা আশাবাদী সবকিছু মিলিয়ে এবার একটা ভালো মেলাই হবে। মেলায় বেচাবিক্রিসহ সার্বিক বিষয়ে ড. জালাল আহমেদ বলেন, ছাত্রদের অনেকেই ঢাকায় চলে এসেছে। করোনার পরিস্থিতিরও উন্নতি হয়েছে। আশা করি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে ছাত্র-শিক্ষক-প্রকাশক নির্বিশেষে সকল শ্রেণির পাঠকের সন্নিবেশে একটা ভালো মেলাই হতে যাচ্ছে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।