Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শবে মেরাজ : ইতিহাসের বিস্ময়কর ঘটনা

মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান | প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০২১, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর
যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য সাত আসমানে বিশিষ্ট নবীগণকে রাখা হয়। প্রথম আসমানে হযরত আদম আ. তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। দ্বিতীয় আসমানে হযরত ঈসা আ. ও ইয়াহ ইয়া আ., তৃতীয় আসমানে হযরত ইউসুফ আ., চতুর্থ আসমানে হযরত ইদ্রীস আ., পঞ্চম আসমানে হযরত হারুণ আ., ষষ্ঠ আসমানে হযরত মূসা আ., এবং সপ্তম আসমানে হযরত ইবরাহীম আ. তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সপ্তম আসমানে বাইতুল্লাহর মত হুবহু একটা ঘর আছে, যার নাম বাইতুল মা’মুর । দুনিয়াতে যেমন আমরা কা’বা শরীফ তাওয়াফ করি তেমনি বায়তুল মামুরে সর্বক্ষণ ফেরেশতারা তাওয়াফ করেন। হাদীসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, প্রতিদিন সেখানে এমন ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফের জন্য আসেন, যারা ভবিষ্যতে আর কোন দিন এখানে আসবেন না। তাহলে কত অসংখ্য ফেরেশাত আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন। এই বাইতূল মামুনের পাশে আছে সিদরাতুল মুনতাহা। “সিদরাতুন” অর্থ বরই গাছ, আর মুনতাহা অর্থ সর্বশেষ ষ্টেশন। এটাকে সিদরাতুল মুনতাহা বা সর্বশেষ ষ্টেশন এজন্য বলা হয় যে, দুনিয়া থেকে যত ফেরেশতারা উপরের দিকে যান, তারা ঐ পর্যন্ত যেতে পারেন, এর উপরে আর যেতে পারেন না। তাই এখান থেকে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরও ঊর্ধ্বে আল্লাহর দরবার পর্যন্ত নেয়া হয়, তখন জিব্রীল আ. বলেছিলেন, এবার আপনি একাই যাবেন, আমার পক্ষে আর উপরে যাওয়া সম্ভব না। আর যদি একবার ডানা মেলেও উপরে যেতে চাই, তাহলে আল্লাহর তাজাল্লীতে আমার ডানা পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, এই সিদরাতুল মুনতাহার যে বরই গাছ, এই বরই গাছের এক একটা বরই হল হাজারের মটকার মত। তখনকার যুগে হাজার নামক জায়গায় বড় বড় মটকা তৈরি হতো। গ্রাম দেশে এখনও এরকম বড় বড় মটকা দেখা যায়। এরকম মটকার মত এক একটা বরই হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, তার এক একটা পাতা হল হাতির কানের মত।

এই সিদরাতুল মুনতাহার কাছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত জিব্রাইল আ. কে তার আসল রুপে দেখেছিলেন। তিনি দেখেছিলেন জিব্রাইল আ. এর ছয়শত ডানা আছে। তিনি এত বড় যেন মহাকাশের দুই প্রান্ত পর্যন্ত ভরে গেছে।

এই সিদরাতুল মুনতাহার পাশে আছে জান্নাত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমাকে জান্নাতের সব স্তর ঘুরিয়ে দেখানো হয়েছে। একটা ঘর দেখিয়ে জিব্রাইল আ. বলেছেন, হে মুহাম্মাদ! আপনার জন্য হবে এই ঘরটা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তখন আমার সঙ্গী ছিলেন জিব্রাইল আ. আর মিকাইল আ.। আমার ঘরটা দেখানোর পর আমি বললাম, আমাকে এই ঘরটায় একটু প্রবেশ করার অনুমতি দেয়া হোক। সঙ্গী ফেরেশতা বললেন, এখনও আপনার সময় হয়নি, এখনও দুনিয়ায় আপনার হায়াত বাকী রয়ে গেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কলমের লেখার খসখস আওয়াজ শোনোনো হয়েছিল। দুনিয়ার শুরু থেকে নিয়ে অনন্ত কাল পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে এবং ঘটবে, এই সব কিছু লওহে মাহফুজে লিখে রাখা হয়েছে। আল্লাহর হুকুমে বিশেষ একটা কলম এই সব কিছু লিখে রেখেছে। আল্লাহ কলমকে হুকুম দিয়েছিলেন; তুমি লিখে ফেল?। কলম বলেছিল ; কি লিখব?

আল্লাহ বলেছিলেন ঃ তাকদীর লেখ।
তখন আল্লাহর হুকুমে কলম যা কিছু হয়েছে এবং হবে সবকিছু লিখে ফেলে। লওহে মাহফুজ হল বিশেষ একটা সংরক্ষিত ফলক যাতে আদি-অন্তের সবকিছু লিখে রাখা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, লউহে মাহফূযে ঐ যে কলম লিখেছিল, কলমের সেই লেখার খসখস আওয়াজ আমাকে শোনানো হয়েছে।
এভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনেক কিছু দেখানো হয়, অনেক কিছু জানানো হয়। যত বিষয়ে আমরা না দেখে ঈমান রাখি, সে সব কিছু তাঁকে দেখানো হয়। এটাই মেরাজের শিক্ষা যে, গায়েবের সব বিষয়ে আমাদের বিশ্বাস ও ইয়াকীনকে আরো দৃঢ় করবো এবং মেরাজের রাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাযসহ যেসব বিধান আল্লাহর কাছ থেকে নিয়ে এসেছিলেন সেসব বিধান পালনে পাবন্দ হওয়া । শবে মেরাজের পুণ্য রজনীতে মহান আল্লাহ তাঁর যে সব কুদরতের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন, এ থেকে শিক্ষা নেয়ার মত আছে অনেক কিছুই।
লেখক ঃ শিক্ষাবিদ, গবেষক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ