Inqilab Logo

সোমবার, ১০ জুন ২০২৪, ২৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

এক বৈশ্বিক চীনা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানার পিছনে রহস্য নিয়ে প্রশ্ন

প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : পিংইয়াং কাউন্টির সবুজ পাহাড় এখনো বহুকাল আগে হারিয়ে যাওয়া চীনের আভাস বহন করে। এর ব্যস্ত শহরগুলোর চারপাশে রয়েছে ধানক্ষেত ও গ্রামগুলো, কৃষকরা আজো কষ্ট করে কাদার মধ্যে ধানের চারা রোপণ করে যা তারা করে আসছে হাজার বছর ধরে। বৈশ্বিক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের উল্লাসমত্ত হয়ে ওয়াল স্ট্রিটে যারা মাথা তুলছে সেই চীনা কর্পোরেট পাওয়ার হাউজের পিছনের লোকদের খুঁজে পাওয়ার জন্য এটা এক বাজে জায়গা। তারপরও এলাকাটি হচ্ছে এমন ধরনের এক ক্ষুদ্র গ্রুপের বাসস্থান যারা স্বল্পকালীন ব্যবসায়ী ও গ্রামবাসীÑ যারা আনবাং ইনস্যুরেন্স গ্রুপে বহুশত কোটি ডলারের বাজি নিয়ন্ত্রণ করে। এই গ্রুপ হচ্ছে নিউ ইয়র্কের ওয়ালডর্ফ এস্টোরিয়ার মালিক এবং বিশ্বব্যাপী নাম ও সম্পত্তির দফতর। মার্কিন নিয়ন্ত্রকগণ এখন জিজ্ঞেস করছেন এই শেয়ারহোল্ডাররা কারা এবং তারা অন্যদের পক্ষে কাজ করছে কিনা।
এসব প্রশ্ন একটি কোম্পানিকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি করেছে যেটি কোথাও থেকে আসেনি বলে মনে হয় এবং বিশ্বব্যাপী সম্পদের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি অর্থ দেয়ার প্রস্তাব দিয়ে ডিল মেকারদের বিস্মিত করেছে।
আনবাং-এর ক্রয়োন্মত্ততা হচ্ছে চীন হতে বাইরে অর্থপ্রবাহের একটি অংশ যা বিশ্ববাজারকে ঢেলে সাজিয়েছে অথচ গোপনীয়তার আবরণে ঢাকা। কোনো কোনো সময় বিশিষ্ট চীনারা দেশে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ না করে তাদের সম্পদ বিদেশে স্থানান্তর করতে সচেষ্ট হয়। এটা আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণকারীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে যারা প্রধান অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে পিছনের ক্রেতাদের চিহ্নিত করা ও তাদের কাজের ঝুঁকি নিরূপণের চেষ্টা করে।
পিনইয়াং কাউন্টি এলাকার আনবাং শেয়ার হোল্ডাররা হোল্ডিং কোম্পানিগুলোর বাইজান্টাইন সংগ্রহের মাধ্যমে তাদের স্টেকগুলো ধরে রাখে। তবে নিউইয়র্ক টাইমস কর্তৃক বহু ডজন সাক্ষাতকার ও হাজার হাজার পৃষ্ঠা আনবাং ফাইল পরীক্ষার পর অনেক কিছুই অভিন্ন পাওয়া গেছে। যেমন তারা হচ্ছে ঐ কাউন্টির অধিবাসী আনবাং-এর চেয়ারম্যান উ জিয়াওহুই-এর পরিবারের সদস্য ও পরিচিত যিনি ১৯৮০ ও ’৯০-এর দশকে চীনের সর্বোচ্চ নেতা দেং শিয়াওপিং-এর পরিবারে বিয়ে করেন।
বহু দিক দিয়েই আনবার ও উ-কে চীনের চার দশক ধরে একটানা প্রবৃদ্ধির জন্য অনুসৃত মুক্ত পুঁজিবাদ ও কম্যুনিস্ট পার্টির প্রাধান্যের সংমিশ্রণজাত আদি বস্তু বলে মনে হয়।
২০০৪ সালে চীনের পূর্বাঞ্চলীয় শহর নিংবোতে একটি অটো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি হিসেবে আনবারের যাত্রা শুরু হয়। কয়েক বছর ধরে এটি একটি বড় প্রতিষ্ঠানই শুধু ছিল। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি অর্থ বিনিয়োগ করে, চীনা ব্যাংকগুলোতে শেয়ার কেনে এবং সাধারণ চীনাদের কাছে উচ্চ ঝুঁকি, উচ্চ লাভের বিনিয়োগ তহবিলের শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে অর্থ আয় করে।
সাবেক গাড়ি বিক্রেতা ও চোরাচালান দমনের নিম্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ৪৯ বছর বয়স্ক এই রূপান্তরের মাধ্যমে আনবাং-এর নেতৃত্ব দেন। এখন তিনি চীনের সর্বাপেক্ষা সফল ব্যবসায়ীদের একজন হিসেবে খ্যাতিমান। তিনি সেরা দর্জির তৈরি স্যুট পরেন, পালিশ করা মূল্যবান জুতা পায়ে দেন, ব্ল্যাকস্টোনের স্টিফেন এ. সোয়ার্জম্যানের পছন্দ অনুযায়ী মেলামেশা করেন ও কখনো কখনো হার্ভাডেও দরবারের আয়োজন করেন। কিন্তু আনবাং-এর ফাইলে তার মালিক হিসেবে উপস্থিতি নেই।
চীনে বিভিন্ন কোম্পানিতে ধনী ব্যক্তিদের অন্যের নামে শেয়ার রাখা সাধারণ ঘটনা। চীনা ভাষায় বাইসুতাও বা সাদা দস্তানা নামে পরিচিত এ সব লোকগুলো বিশ্বস্ত আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তি হয়ে থাকে। অনেকেই তাদের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য এই পদ্ধতি গ্রহণ করেন, কারণ চীনে ধনীরা রাজনৈতিক দায় হতে পারেন। কিন্তু অন্যরা বলেন যে সাদা দস্তানারা অসদুপায়ে অর্জিত অর্থ গোপন করতে এবং দুর্নীতি তদন্ত ঠেকাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
উ শেয়ার হোল্ডার কিনা প্রশ্ন করা হলে আনবাং কোনো জবাব দেয়নি এবং এর মালিকানা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দিতেও অস্বীকার করে।
একজন মুখপাত্র বলেন, কোম্পানির বহু রকম শেয়ার হোল্ডার রয়েছে যারা চীনা আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সকল ঘোষণা প্রদান করেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যারা কোম্পানিতে বিনিয়োগের ব্যাপারে বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নেয়। আনবাং আজ একটি বৈশ্বিক কোম্পানি। এ জন্য দীর্ঘ-মেয়াদি শেয়ার হোল্ডারদের সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ।
সাদা দস্তানাধারীরা বিনিয়োগকারী ও নিয়ন্ত্রণকারীদের জন্য একজন চীনা ক্রেতার আর্থিক সামর্থ্য মূল্যায়ন করা কঠিন করে তুলতে পারে। মালিকানা কিছু লোকের হাতে মাত্র কেন্দ্রীভূত হতে পারে গোপন ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে এবং সরকারের সাথে সম্পর্কযুক্ত কোম্পানিগুলো রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে দুর্বল হয়ে পড়তে পারে অথবা দুর্নীতির চুম্বক হতে পারে।
কর্পোরেট জালিয়াতি তদন্তকারী প্রতিষ্ঠান হংকং-এর আলভারেজ ও মারসাল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কীথ উইলিয়ামসন বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে কাদের সাথে তারা শেষ পর্যন্ত ব্যবসা করছেন আর বিনিয়োগকারীদের জন্য জানা গুরুত্বপূর্ণ যে তারা কী বিনিয়োগ করছেন।
এটা পরিষ্কার নয় যে পিংইয়াং কাউন্টি অঞ্চলের শেয়ার হোল্ডাররা কারো পক্ষে বিপুল পরিমণ শেয়ার ধরে রাখছেন কিনা। তবে ২৭ মে আনবাং ১৬০ কোটি ডলারে আইওয়ার এক ইনস্যুরার ফাইডেলিটি অ্যান্ড গ্যারান্টি লাইফ কেনাার জন্য নিউইয়র্ক স্টেটের কাছে করা তাদের আবেদন প্রত্যাহার করে। নিয়ন্ত্রকরা একই পারিবারিক নাম সম্বলিত কয়েকজন শেয়ার হোল্ডারের মধ্যকার সম্পর্ক জানতে চেয়ে বলেন, পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি এ ব্যাপারে ব্রিফ করেছেন।
নিউইয়র্কের এসেক্স হাউস এবং কয়েকটি ফোর সিজনস স্থাপনাসহ একগুচ্ছ হোটেল কেনার ৬৫০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি মার্কিন সরকার কর্তৃক নিরাপত্তা মূল্যায়নের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছে। মার্চে আনবাং শেরাটন ও ওয়েস্টিন হোটেলের পরিচালক স্টারউড ক্রয়ের জন্য ১৪ বিলিয়ন ডলারের দর দিয়ে তা প্রত্যাহার করে যা ওয়াল স্ট্রিটকে বিস্ময়াভিভূত করে। সূত্র দি নিউইয়র্ক টাইমস। (আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এক বৈশ্বিক চীনা কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের মালিকানার পিছনে রহস্য নিয়ে প্রশ্ন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ