Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নিভে গেল দক্ষিণাঞ্চলের জ্ঞানের প্রদীপ

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০২১, ১২:০১ এএম

অধ্যাপক মো. হানিফ। একটি নামই একটি প্রতিষ্ঠান। একজন মানুষ গড়ার কারিগর। টানা ৯০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টেনে চলে গেলে না ফেরার দেশে। নিভে গেল দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর। তার অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী আর ভক্তদের শোকসাগরে ভাসিয়ে গেলেন। দেশের অন্যতম সেরা এ শিক্ষাবীদ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ইন্তেকালের খবরে বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জনপদে শোকের স্তব্ধতা নেমে আসে।
হানিফ স্যার শিক্ষাকেই তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান হিসেবে লালন করে গেছেন। কর্মজীবনে বরিশাল সরকারি বিএম কলেজ ও সরকারি হাতেম আলী কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন সাফল্যের সাথে। সরকারি চাকরি থেকে অবসরের পর বরিশালের ইসলামীয়া কলেজেরও প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। নিজের জন্মভিটা ভোলাতেও তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
অর্থনীতির এ শিক্ষক আগাগোড়াই ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক। তার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতেম আলী কলেজ, বিএম কলেজ ও ইসলামীয়া কলেজে নিজ হাতে গড়া অসংখ্য বৃক্ষরাজী। যা কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়ে দন্ডায়মান।
জীবনে একবার যে ছাত্রের নাম তিনি শুনছেন, তা ভোলেননি কোন দিনই। ব্যক্তি জীবনে ৪ ছেলে ও ২ মেয়ের বাবা হলেও দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে থাকা হাজার হাজার শিক্ষার্থীও ছিল তার সন্তানতুল্য। তিনি যখন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছেন, সেখানেই উন্নয়নের ছোঁয়া রেখেছেন। এমনকি বিএম কলেজের শতবর্ষ পূর্তি তিনি উদযাপন করেছেন দেশের প্রেসিডেন্টকে প্রধান অতিথি করে। শতাধিক বছরের পুরোনো বিএম কলেজের মূল ভবনটির আদল বজায় রেখে পরিপূর্ণ সংস্কারের কাজটিও তিনি করেছিলেন নিজের মেধা-মননে। এ কাজে তিনি কোন প্রকৌশলীর পরামর্শ নেননি।
প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্র-ছাত্রীকে মানুষ করেছেন নিজ সন্তানের মত। তাদের সব বিষয়ে খোঁজ খবর রেখেছেন সব সময়। হানিফ স্যার তার কর্মকালে অর্থের অভাবে কোন ছাত্র-ছাত্রীর পড়াশোনা ব্যাহত হতে দেননি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠায়ও তার ব্যপক অবদান ছিল। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পর তিনি দীর্ঘদিন ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ জীবনে শরীর যখন চলছিল না, তখনো তিনি তার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোঁজ খবর রাখতেন। খোঁজ নিতেন প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীদেরও। তাই জীবনের শেষ সময়েও কিছু ছাত্র-ছাত্রী তাদের প্রিয় ‘হানিফ স্যার’ এর খোঁজ খবর রাখতেন।
গত ১ মার্চ সোমবার দিনগত রাত সোয়া ১০টায় দক্ষিণাঞ্চলের এই প্রিয় শিক্ষক সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ