Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী যোগাযোগ উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মানে এলজিাডি’র সাফল্য

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৯ মার্চ, ২০২১, ২:১৪ পিএম

দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায় পল্লী যোগাযোগ সহ নানামুখি উন্নয়ন অবকাঠামো নির্মান ছাড়াও মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে চলতি অর্থ বছরে প্রায় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর-এলজিইডি। এ অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় ৪ হাজার ১৩৬টি স্কিম বাস্তবায়ন করছে। ইতোমধ্যে প্রায় ৬শ কোটি টাকা বরাদ্ব অবমূক্ত করা হয়েছে। যারফলে অর্থ বছরের প্রথম ৬ মাসে প্রায় ৪২ ভাগ ভৌত অবকাঠমোর কাজ শেষ হয়েছে। আর্থিক অগ্রগতিও প্রায় ৪০%।

নতুন প্রকল্প ছাড়াও অতীতে বা¯তবায়িত প্রকল্পগুলোর রক্ষনাবেক্ষন ও মেরামত কাজে এলজিইডি এ বিশাল কর্মজজ্ঞ চালিয়ে যাচ্ছে। পাল্লী যোগাযোগ অবকাঠামো নির্মান ছাড়াও দক্ষিনাঞ্চলে ৪২টি উপজেলা যুড়ে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনগুলোর মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে এলজিইডি গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা পালন করছে। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনসমুহের মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ সীমানা প্রাচীর ও গেট পর্যন্ত নির্মান করছে এলজিইডি। এমনকি সড়ক ও সেতু ছাড়াও পল্লী এলাকার হাট-বাজার ও গ্রোথ সেন্টার নির্মান এবং মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনে বিশেষ ভূমিকার কথা জানিয়েছে এলজিইডি’র বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওয়হিদুর রহমান।
চলতি অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানটি ১ হাজার ১৮৩ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যায়ে দক্ষিণাঞ্চলে ২,৫১৭টি নতুন স্কিম ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মসূচীর আওতায় ১৮২.১৩ কোটি টাকা ব্যায়ে ৩৫৪টি স্কিম বাস্তবায়ন কাজ করছে। এছাড়া প্রথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় ১৭১.৬৭ কোটি টাকা ব্যায়ে আরো ১ হাজার ২৬৫টি স্কিম বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।
অতীতে নদ-নদী বহুল ও কৃষিনির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় পাকারাস্তা এবং কংক্রীটের সেতুÑকালভার্ট ছিল অনেকটাই স্বপ্নের মত। সে অবস্থার পরিবর্তন এসেছে ইতোমধ্যে। প্রায় ৫১ হাজার কিলোমিটার গ্রামীন, ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়ক দক্ষিণাঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় ব্যপক পরিবর্তন আনতে শুরু করেছে। এসব সড়ক ছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে বিপুল সংখ্যক সেতু ও কালভার্ট উন্নয়ন সম্পন্ন করেছে এলজিইডি। এছাড়াও প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার গ্রামীন, ইউনিয়ন ও উপজেলা সড়কের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার গ্রামীন সড়ক এবং প্রায় ৪ হাজার সেতু ও কালভার্ট নির্মানে ব্যায় হয়েছে সোয়া ৫শ কোটি টাকা।
‘দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশালের সানুহারÑধামুড়াÑসাতলা উপজেলা সড়কের ২৩ কিলোমিটারে ৫৬০ মিটার দীর্ঘ একটি পিসি গার্ডার সেতু নির্মান করেছে এলজিইডি। একই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশালের মুলাদী থেকে নাজিরপুরÑমোল্লারহাট হয়ে কুতুবপুর পর্যন্ত সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদ-এর ওপর ৪৩২ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু নির্মান কাজও শেষ হয়েছে। এছাড়াও প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যায়ে হারতা বাজার সংলগ্ন কঁচা নদীর ওপর ২৮০ মিটার দীর্ঘ আরো একটি সেতু নির্মানের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরফলে উজিরপুর ও কোটালীপাড়ার বিল অঞ্চলের দূর্গম এলাকার সাথে মূল জনপদের দ্রুত ও নির্বিঘœ সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
‘বৃহত্বর বরিশাল প্রকল্প’এর আওতায় প্রায় ২০কোটি টাকা ব্যায়ে বরিশাল মহানগরীর সাথে চরমোনাই-বুখাইনগরÑবিশ্বাসেরহাট সড়কের ‘কড়াইতলা সেত’ুটির নির্মান কাজও সম্পন্ন হয়েছে। একই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বাকেরগঞ্জের গারুরিয়াÑগোবিন্দপুর সড়কের তুলাতলা নদীর ওপর ১১টি স্প্যানে ৪৪০মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতুটির নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
এছাড়াও ‘দক্ষিণাঞ্চলীয় পল্লী সড়ক ও কালভার্ট মেরামত কর্মসূচী’, ‘বৃহত্বর বরিশাল জেলা গ্রামীন যোগাযোগ ও হাট বাজার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘জরুরী ঘূর্ণিঝড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প’, ‘গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘অগ্রাধিকার ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ন পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘সড়ক ও জনপথ থেকে স্থানান্তরিত সড়ক প্রকল্প’, ‘উপজেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’, ‘আরআইএমপিÑএলসিএস প্রকল্প’, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচী’, ‘অংশগ্রহনমূলক ক্ষুদ্রকার অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ সহ দক্ষিণাঞ্চলের পল্লী এলাকায় প্রায় ৩০টি প্রকল্পের আওতায় কয়েক হাজার স্কীম বাস্তবায়ন করছে এলজিইডি।
দক্ষিণাঞ্চলের ৪২টি উপজেলায় ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স-এর নির্মানকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়াও হাজারখানেক ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাকে বাসস্থান নির্মান করে দিচ্ছে এলজিইডি। ঝালকাঠীতে প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রাইমারী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিউট-পিটিআই’এর নির্মান কাজও সম্পন্ন করেছে এলজিইডি।
পিরোজপুরে নাজিরপুরে প্রায় ৩৮ কোটি টাকা ব্যায়ে দির্ঘা নদীর ওপর ৩৬০মিটার লম্বা পিসি গার্ডার সেতুর নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। নেসারাবাদের কালিগঙ্গা নদীর ওপর ৬শ মিটার লম্বা একটি সেতু নির্মানে ১১৫কোটি টাকার প্রকল্পের কাজও শুরু হয়েছে। দ্বীপজেলা ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় সোয়া ২শ কোটি টাকা ব্যায়ে ৪২টি সাইক্লোন শেল্টার কাম প্রাইমারী স্কুল নির্মান কাজও শেষ পর্যায়ে। বরগুনার বদনীখালী খালে ৭.৭৮ কোটি টাকা ব্যায়ে ১২০মিটার দীর্ঘ একটি আরসিসি গার্ডার সেতুর নির্মান কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যায়ে বেতাগী ও পাথরঘাটা উপজেলা কমপ্লেক্স ভবনের নির্মান কাজও সম্পন্ন করেছে এলজিইডি।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ৯৩ কোটি টকা ব্যায়ে আন্ধারমানিক নদীর ওপর ৬৭৭ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মান কাজ প্রায় শেষ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যায়ে পটুয়াখালীর বিভিন্ন উপজেলাতে সড়ক এবং সেতু ও কালভার্ট নির্মান কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়াও দক্ষিণাঞ্চলে পল্লী যোগাযোগ এবং প্রাথমিক শিক্ষা সহ গ্রামীন হাট-বাজার উন্নয়নে এলজিইডি আরো একাধীক প্রকল্প প্রনয়ন করছে বলেও জানিয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমাান।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ