পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন-এমন তথ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-কে ২০১৬ সালেই সতর্ক করা হয়েছিল। কিন্তু দুদক সেটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে। এমনকি পি কে’র অন্যতম সহযোগী পিপলস লিজিংয়ের এক সময়কার চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেনকে দায়মুক্তিও দিয়ে দেয়। ২০১৫ সালে শুরু হওয়া ওই অভিযোগটির সঠিক অনুসন্ধান হলে আরো আগেই পি কে হালদারের আত্মসাৎ ঠেকানো সম্ভব ছিল। কিন্তু বিদায়ী কমিশন এ বিষয়ে আন্তরিক-তো ছিলোই না; বরং শেষ মুহূর্তে প্রকারন্তে তাকে রক্ষারই চেষ্টা করে। এমন তথ্য জানিয়েছেন খোদ দুদকের একাধিক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশে আপত্তি জানিয়ে কর্মকর্তারা জানান, প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পি কে হালদার ‘লো প্রোফাইল’ ব্যক্তিদের ব্যবহার করেও শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেন অনেকটা চোখের সামনেই। বিভিন্ন ব্যক্তির নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করে হাতিয়ে নেন এ অর্থ। যাদের মাধ্যমে অর্থ সরিয়েছেন তারা তখন দেশেই ছিলেন। এখনও অবস্থান করছেন। তাদের নাম-পরিচয়, অবস্থান সম্পর্কে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) বহু আগেই দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তথ্য দিয়ে সতর্ক করেছিল। কিন্তু অদৃশ্য ইশারায় দুদক পুরো সময় চোখ বন্ধ করে রাখে। ফলে পি কে হালদার দেশে অবস্থানকালে তাকে পাকড়াওয়ে কোনো আগ্রহই দেখায়নি দুদক। পি কে এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তাব সম্বলিত অনুসন্ধান প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিলে নানা ‘কয়েরি’ দিয়ে সেটি অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছেই ফেরত পাঠানো হতো। এমনকি সর্বশেষ যে ৫টি মামলার অনুমোদন দেয় কমিশন- সেটি প্রদানেও গড়িমসি করে বিদায়ী কমিশন।
দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, পি কে নিরাপদে দেশত্যাগের পরই হাইকোর্টের স্ব-প্রণোদিত আদেশে দুদক নড়েচড়ে বসে। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ইমিগ্রেশনকে চিঠি দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইন্টারপোলও রেড অ্যালার্ট জারি করে। পি কে হালদারের হরিলুট সম্পর্কে জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিতে অনাগ্রহী হওয়ার বড় প্রমাণ হচ্ছে, পি কে’র নিয়ন্ত্রণে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি:’ কোম্পানির সাবেক চেয়ারম্যান এম. মোয়াজ্জেম হোসেনকে গোপনে দায়মুক্তি দিয়ে দেয়া। মোয়াজ্জেমের ‘দায়মুক্তি’ এবং পি কে হালদারের নির্বিঘ্নে দেশত্যাগ একই সূত্রে গাঁথা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দেশে অবস্থানকালে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে এখন তার ‘সহযোগীদের ধরার চেষ্টা কার্যত : ‘ঠ্যাঙ ছেড়ে লাঠি ধরা’র মতো। হাতের মুঠোয় থাকা পি কে হালদারকে নির্বিঘ্নে বেনাপোল স্থল বন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো এবং ভারত হয়ে তৃতীয় দেশে চলে যাওয়া নিশ্চিত হওয়ার পরই দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এখন পি কে হালদারকে নয়-ধরতে হবে তার ‘সহযোগীদের’।
দুদক সূত্র জানায়, পি কে হালদার যাদের নামে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে, যাদের ব্যাংক একাউন্ট ব্যবহার করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অন্তত: এক ডজন মামলা প্রস্তুত রয়েছে। দু’য়েক দিনের মধ্যেই এ মামলা রুজু হবে বলে জানা গেছে। এসব মামলায় আসামি করা হচ্ছে পি কে’র কথিত সহযোগী ৬২ জনকে। ইতিমধ্যে সন্ধিঘœ এসব ব্যক্তির ব্যাংক একাউন্টে থাকা নগদ সাড়ে ১২শ’ কোটি টাকা (১২৫৯ কোটি), পি কে’র ব্যক্তিগত একাউন্টে থাকা ১৫৯ কোটি টাকা জব্দ করা হয়েছে। ১১শ’ কোটি টাকার বেশি স্থানান্তরে ব্যবহৃত একাউন্টগুলোও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
সূত্রমতে, চলতিবছর ২৫ জানুয়ারি পি কে হালদারসহ তার ৩৩ সহযোগীর বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলা করে দুদক। এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ৩শ’ ৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়। আসামি করা হয় ৩৩ জনকে। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। একটি মামলায় পি কে’র বান্ধবী অবন্তিকা বড়ালকে রিমান্ডে নেয়া হয়। অন্য মামলার আসামিদেরও রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করা হয়। সেই তথ্যের ভিত্তিতে জব্দ করা হয় পি কে এবং তার সহযোগীদের অর্থ-সম্পদ। মামলাও দায়ের করা হচ্ছে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতেই।
দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পিপলস লিজিংসহ কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অভিনব কৌশলে পি কে আমানতকারীদের অন্তত: ৩শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। এতে প্রতিষ্ঠানটি অস্তিত্বের মুখে পড়ে। এখন পিপলস লিজিং অবসায়ন প্রক্রিয়ায় রয়েছে। রিমান্ডে পি কে’র সহযোগীরা জানান, পি কে হালদার রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থাকাকালিন আত্মীয়-স্বজনদের আরো কয়েকটি লিজিং কোম্পানির ‘স্বাধীন পরিচালক’ পদে বসান। তাদের দিয়ে গ্রাহকের আমানতের টাকা হাতিয়ে নেন। প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তিও বিক্রি করে দেন। আত্মীয়দের সামনে রেখে নেপথ্যে কর্তৃত্ব করেন পি কে হালদার। আমানতকারীদের শেয়ার পোর্টফোলিও থেকে শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে সব টাকা সরিয়ে নেন নিজ একাউন্টে। এর মধ্যে বেশিরভাগ টাকা পাচার করেন বিদেশে।
প্রশান্ত কুমার হালদারের অর্থ আত্মসাতের সহযোগী রাশেদুল হক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক ও রেজা গ্রæপের চেয়ারম্যান এ কে এম শহীদ রেজা ছিলেন পি কে হালদারের লোক। তিনি বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে একাই ২শ’ কোটি টাকা ঋণ নেন। শহীদ রেজা আরো পাঁচটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ১০৪ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। কাগুজে প্রতিষ্ঠান ‘জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’র নামে খোলা হয়েছে ৭টি ব্যাংক হিসাব। এ হিসেব থেকে ৩৩টি চেকের মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংকের চট্টগ্রাম স্টেশন রোড শাখায় থাকা ব্যাংক এশিয়ার তৎকালিন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান আহমেদ খান হাতিয়ে নেন ৭৪ কোটি টাকা।
‘সিমটেক’র মালিক সিদ্দিকুর রহমান, ব্যাংক এশিয়ার সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান উদ্দিন আহমেদ, পিপলস লিজিংয়ের তৎকালিন চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পি কের সহযোগী রাজীব সোম, কাজী মোমরেজ মাহমুদ, স্বপন কুমার বিশ্বাস, অভিজিৎ, অমিতাভ অধিকারী, শঙ্খ বেপারী, সুস্মিতা সাহা, গোপাল চন্দ্র গাঙ্গুলি, অতশী মৃধা, অমল চন্দ্র দাস, রতন কুমার বিশ্বাসকে দিয়ে জালিয়াতির কাজটি করেন। যদিও রিমান্ডে আসামিরা দাবি করেছেন, এসব আত্মসাতের বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে ভুয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন পি কে হালদার নিজেই। লিজিং কোম্পানি থেকে শত শত কোটি টাকা পি কে হালদার লোপাট করেছেন-এটি তারা বুঝতে পারেননি। রিমান্ডে কয়েকজন আসামি নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করে জানিয়েছেন, পি কে হালদার কৌশলে অনেকের একাউন্ট ব্যবহার করেছেন। তাদের একাউন্টে অন্তত: ১১শ’ কোটি টাকা স্থানান্তর করেন। এ তথ্যের ভিত্তিতে ওইসব একাউন্টের টাকাগুলো জব্দ করেন তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান আনোয়ার প্রধান। জব্দ করা একাউন্টের মধ্যে নওশেরুল ইসলামের নামেও একটি ভুয়া কোম্পানি রয়েছে। ২০১৫ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে কাগুজে এ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ‘ঋণ’ দেখিয়ে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস লিজিং ও পিপলস লিজিং থেকে ৩শ’ ৫২ কোটি টাকা বিভিন্ন একাউন্টে রাখেন। এসব একাউন্ট থেকে পি কে হালদার পরে ২শ’ ৪৩ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এভাবে হাতিয়ে নেয়া অর্থের মধ্যে পি কে’র একাউন্টে এখনও ৯৫ কোটি টাকা রয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা একাউন্টটি পরে জব্দ করে দেন। মমতাজ বেগমের নামে করা কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণ নিয়ে তার একাউন্টে জমা করেন ৪ কোটি টাকা। এখান থেকেও পি কে পরে ২ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। একটি কাগুজে প্রতিষ্ঠানের মালিক বানানো হয়েছে বাসুদেব ব্যানার্জিকে। এটির বিপরীতে ঋণ নেয়া হয়েছে। পরে তার একাউন্ট থেকে টাকা নিয়ে পি কে হালদার নিজের বিভিন্ন একাউন্টে নিয়ে যান ৭শ’ ৬৪ কোটি টাকা। এখান থেকে পি কে ৪শ’ ৬২ কোটি টাকা উত্তোলন করেন। এই একাউন্টে এখন ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রয়েছে।
বাসুদেবের স্ত্রী পাপিয়া ব্যানার্জির নামেও রয়েছে কাগুজে প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে রয়েছে ৫ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে এই একাউন্টে লেনদেনকৃত মোট অর্থ ৩৪ কোটি টাকা। ৬১ কোটি টাকা এখন এই একাউন্টটিতে রয়েছে।
পি কে হালদার এবং সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক ৫টি মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় এরই মধ্যে আদালতের অনুমোদনক্রমে পি কে’র নামে কেনা রূপগঞ্জের ৬৭ একর জমি, ঢাকার আইবিএ হোস্টেল সংলগ্ন ৬৬ কাঠা জমি, কক্সবাজারে রেডিসন হোটেল, উত্তরার ১০ তলা বাড়ি, ধানমন্ডির ২ নম্বর রোডে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটসহ অন্তত: দেড় হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্ত ক্রোক করা হয়েছে।
এদিকে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, পি কে হালদারের মহা-লুণ্ঠনের বিষয়টি দুদককে আগেই অবহিত করা হয়েছিল। তা সত্তে¡ও বিদায়ী কমিশন অদৃশ্য ইশারায় তাতে কর্ণপাত করেনি। বরং ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়। যেমনটি করা হয়েছিল ‘বেসিক ব্যাংক ঋণ জালিয়াতি’ এবং ‘বিসমিল্লাহ গ্রুপ’র অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে। এমনটির বড় প্রমাণ হচ্ছে, ‘পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (পিএলএফসিএল)র এক সময়কার চেয়ারম্যান ও পরিচালক ক্যাপ্টেন এম. মোয়াজ্জেম হোসেনকে একটি অনুসন্ধান থেকে গোপনে দায়মুক্তি দিয়ে দেয়া হয়। তিনি পরবর্তীতে পি কে হালদারের অর্থ আত্মসাতের অন্যতম সহযোগী হিসেবে চিহ্নিত। আসামি উজ্জ্বল কুমার নন্দী তার জবানীতে মোয়াজ্জেম হোসেনকে পি কে হালদারের সহযোগী হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পিপলস লিজিং থেকে মোয়াজ্জেম এবং সাবেক পরিচালকগণ অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়েছেন বলেও জানান উজ্জ্বল কুমার নন্দী। অথচ এই মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধেই ‘কোম্পানির অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধানে প্রমাণিত না হওয়ায়’ দুদক অনুসন্ধানটির ‘পরিসমাপ্তি’ টানে। ইকবাল মাহমুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন এই ‘পরিসমাপ্তি’ অনুমোদন করে। দুদক মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত) সাঈদ মাহবুব খান গতবছর ২০ ডিসেম্বর মোয়াজ্জেমকে দায়মুক্তির সনদ (নথি নং-০০.০১.০০০০.৪১১.০১.০০৫.১৯) দেন। এ সময় সাঈদ মাহবুব খান দুদক সচিবের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগটির অনুসন্ধান শুরু হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।