Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

প্রকাশের সময় : ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দেশের বিভিন্ন স্থানে নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরদিকে বেশ কয়েকটি নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নচাপের প্রভাবে দেশে উপকূলীয় এলাকার নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকার পুরাতন জরাজীর্ণ বাধগুলো আসড়েপড়া ঢেউয়ের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশ কয়েকটি বাধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। কপোতাক্ষ নদীর ঝিকরগাছায় ৮২ সেন্টিমিটার, সুরমায় কানাইঘাটে ১৯ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার ও অমলশীতে ১০৭ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার শ্যাওলায় ৬০ সেন্টিমিটার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, পদ্মায় সামান্য পানি কমলেও বানভাসি মানুষের দূর্ভোগ কমেনি। ঘরবাড়ি জমি জিরাত পানি বন্দী। বাতাসের ঝাপটায় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরের ঘরবাড়ি গুলোর উপর। গত তিনদিনে পানি কমেছে দশ সেন্টিমিটারের মত। এতে করে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। পানি আর না বাড়লেও পদ্মায় বেড়েছে তীব্র স্রোত। সাথে ঝড়ো হাওয়া। পানির মধ্যে দাড়িয়ে থাকা বাঁশখুটির ঘরগুলো যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে। পদ্মার ভাঙ্গন থেকে নগর রক্ষার জন্য গ্রোয়েন ও স্পার নির্মাণ করলেও সংস্কারের অভাবে সেগুলোর অবস্থাও নাজুক। অনেক স্থানে অস্তিত্ব নেই। মুল গ্রোয়েন হলো শ্রীরামপুরে টি গ্রোয়েন। এটি মূলত টিকিয়ে রেখেছে শহর রক্ষা বাঁধকে। যদি কোন কারণে ভেঙ্গে যায় তবে মুহূর্তের মধ্যে শহর তলিয়ে যাবে আট দশ ফুট পানির নীচে। কেননা পদ্মার তলদেশ ভরাট হতে হতে নগরীর তলদেশের চেয়ে সাত আট ফুট উঁচু হয়ে গেছে। পানি প্রবেশ করলে তা বের হবার রাস্তাও নেই। সেই টি গ্রোয়েন পর্যন্ত সংস্কারের অভাবে পড়েছে ঝুঁকির মুখে। গত কদিন ধরে হঠাৎ করে ফাটল দেখা দেয়ায় আতংকিত নগরবাসী। প্রথমে আট দশ ইঞ্চির মত স্থানে ফাটল হলেও এখন অনেক বড়। বাধের পশ্চিমাংশ পাঁচ থেকে ফুট দেবে গেছে। সবচেয়ে ঝুঁকির বিষয় হলো পানির নীচের গ্রোয়েনের অবস্থা। গ্রোয়েনের উপর পানির প্রচণ্ড চাপ। স্রোতের ঘুর্নী চলছে মাথায়। নীচে কেমন অবস্থা বোঝার উপায় নেই। প্যাথম্যাট্রি সার্ভের পানির নীচের অবস্থা জানা যায়। সে ব্যবস্থা এখানকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে নেই। গ্রোয়েনের ফাটল প্রথমে বালি ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা খুব একটা কাজে আসছেনা বলে এখন বড় বড় বোল্ডার ফেলা হচ্ছ্ শত শত বস্তা জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। এরপর ফেলা হচ্ছে বড় বড় বোল্ডার। তীব্র স্রোতের কারণে ফেলা জিও ব্যাগ ও বোল্ডার ঠিকমত স্থানে থাকছে কিনা তা খুব একটা বোঝা যাচ্ছেনা। যদিও পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে আতংকের কিছু নেই। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কাজ চলছে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ হচ্ছে। গ্রোয়েন এলাকায় মানুষের চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নগরীর পূর্বাঞ্চলে পঞ্চবটী এলাকায় নির্মিত কংক্রিটের আইবাঁধ আছড়ে পড়ছে পানি। সেখানে স্রোতকে দুরে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। যাতে করে পাড়ে আঘাত না করে। বাধের মাথায় দাঁড়ালে দেখা যায় প্রচণ্ড গতিতে স্রোতের ছুটে চলা ও গর্জন। অনেক আগে নির্মিত বড়কুঠি, হাদিরমোড় এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্পারের অস্তিত্ব আর নেই। সাধারণ মানুষ দুষছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। গত বছর মুল গ্রোয়েন টি বাঁধের সামান্য পশ্চিমে বেশ খানিকটা অংশ হঠাৎ করে ধ্বসে গেলেও তা এখন পর্যন্ত পুরোপুরি মেরামত করতে পারেনি। নদীর ভাঙ্গন থেকে শহর রক্ষার জন্য তীর সংরক্ষণের কোন কার্যক্রম নেই। ভাঙ্গন রোধ করতে না পারার কারণে দক্ষিণের বিশাল জনপদ চলে গেছে নদী গর্ভে। এমনকি সীমান্ত ফাড়ি সীমানা পিলারও চলে গেছে। এখন ঐসব স্থানে আন্তর্জাতিক আইনের দোহাই দিয়ে ভারত তাদের দখলিস্বত্ব কায়েম করেছে। চরখিদিরপুর খানপুর ভেঙ্গে যাওয়ায় ভারতীয় বিএসএফ তাদের অভ্যন্তরের পাঁচ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত মোহনগঞ্জ ক্যাম্প সরিয়ে এনেছে। নদী গর্ভে চলে যাওয়া ভূখণ্ডে বাংলাদেশীদের নৌকা চলাচলে তারা বাধা দিচ্ছে হয়রানী করছে। যে কয়টি গ্রাম বাকী রয়েছে তা রক্ষার উদ্যোগ না নিলে সেগুলো চলে যাবে নদী গর্ভে। আর বাংলাদেশ হারাবে তারা একক জমির মালিকানা। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, তারা দক্ষিণে ও উত্তরে তীর রক্ষার জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্প পাঠিয়েছিল কিন্তু তা অনুমোদন লাভ করেনি। এ ব্যাপারে তাদের দোষারোপ করার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন । পরিবেশ ও নদী বিশেষজ্ঞ বলছেন মানবসৃষ্ট দুর্যোগের কারণে আজ পদ্মার এমন বেহাল দশা। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে ফারাক্কা ব্যারেজ দিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান করতে হবে। পাশাপাশি গঙ্গা ব্যারেজ নির্মাণ আর জরুরী প্রয়োজন পদ্মায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং। নদীর উভয় তীর সুরক্ষার জন্য পরিকল্পিত কর্মকাণ্ড শুরু। নইলে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে ।
দৌলতপুর (কুষ্টিয়া) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফারাক্কা ব্যারেজের খুলে দেওয়া ১০৪ টি কপাটের বিরূপ প্রভাবের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পানি পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দু’টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়। শনিবার থেকে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি ২ সেন্টিমিটার কমেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তবে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৪ টি গ্রাম এখনও পানিবন্দি অবস্থায় থাকায় কমেনি তাদের দুর্ভোগ। এদিকে পদ্মার পানি ধীর গতিতে কমতে শুরু করলেও নতুন করে পদ্মার ভাঙ্গন আতংক দেখা দিয়েছে। গত দু’দিনে উপজেলার চিলমারী ও মরিচা ইউনিয়নের পশ্চিম উদয়নগর, ভবনন্দদিয়াড় ও মুল্লুকচাঁদপুর গ্রামের মুল্লুকচাঁদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতাধিক ঘর-বাড়ি নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও বন্যার কারণে দুর্ভোগের মধ্যে রয়েছে রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে ১৯টি গ্রামের মধ্যে ১৮টি এবং চিলমারী ইউনিয়নে ১৬টি গ্রামের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ। জনদুর্ভোগের পাশাপাশি গবাদি পশুর খাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছে বানভাসিরা। বানভাসিদের মাঝে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হলেও চারদিক জলমগ্ন থাকায় গবাদি পশুর খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে চরমে। সেই সাথে সংকট দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানিরও। তবে বন্যাকবলিত দুই ইউনিয়নের জন্য প্রতি টিমে ৪ সদস্য করে ৪টি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা নিজ নিজ এলাকায় কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন দৌলতপুর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মসিউল ইসলাম। এদিকে বন্যা কবলিত রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী বন্যার্তদের মাঝে সরকারীভাবে ২৩ মেট্রিক টন চাল ত্রাণ সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. তৌফিকুর রহমান। আরও ত্রাণ প্রদান করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আকস্মিক বন্যার কারণে রামকৃষ্ণপুর ও চিলমারী ইউনিয়নের ৩৪টি গ্রামের ১৫ হাজার পরিবারের প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। সেই সাথে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফারাক্কার পানির প্রভাব পড়েছে রাজবাড়ীর পদ্মা নদীতে। গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৪ সেন্টি মিটার। তবে তা বিপদ সীমার ৭৭ সেন্টি মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যদিও নদীতে রয়েছে তীব্র স্রোত। যে কারণে জেলা সদরের সাড়ে ৮ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। গত কয়েক সপ্তাহে জেলা সদরের বরাট ইউনিয়নের উড়াকান্দা ও লাল গোলা এলাকাতেই পাঁচ শতাধিক বাড়ী ঘর এবং শত একর ফসলী জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। মানবেতর জীবন-যাপন করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। ভাঙনে তীব্রতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে তা এখন রাজবাড়ী শহর রক্ষা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়ি বাঁধের কয়েক মিটারের মধ্যে চলে এসেছে। অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে পরে গেছে এই বেড়ি বাঁধ। তবে ভাঙ্গন তীব্র আকার ধারণ করলেও অনেকটাই নিশ্চুপ ছিলো রাজবাড়ীর পানি উন্নয়ন বোর্ড। তাদের কাছ থেকে কোন সহযোগিতা না পাওয়া ভাঙ্গন প্রতিরোধে শুরু থেকেই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেনি বলে গতকাল সকালে জানিয়েছেন রাজবাড়ী-১ আসনের এমপি কাজী কেরামত আলী। তিনি বলেন, গত ২১ আগস্ট থেকে পুরোদমে ভাংছে পদ্মা নদী। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে নদী ভাঙ্গনের ফলে এ এলাকার চেহারাই পাল্টে গেছে। হুমকির মধ্যে পড়ে গেছে বেড়ি বাঁধ। অথচ শুরু থেকেই পানি সম্পদ মন্ত্রী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেছেন। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং চাহিদা পত্র প্রদানের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো করতে কালক্ষেপণ করেছেন। যে কারণে বরাদ্দ আসতে সময় লেগেছে। ফলে ভাঙন রোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপই নেয়া সম্ভব হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ