Inqilab Logo

বুধবার, ২২ মে ২০২৪, ০৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বরিশালের প্রিয় হানিফ স্যার-এর চলে যাওয়া নিভে গেল দক্ষিণাঞ্চলে শিক্ষার বাতি ঘর

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৫ মার্চ, ২০২১, ৬:২০ পিএম

টানা ৯০ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টেনে নিভে গেল দক্ষিনাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর। প্রফেসর মোঃ হানিফ। তার অসংখ্য ছাত্রÑছাত্রী আর ভক্তদের শোকসাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন সোমবার রাতে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত দেশের অন্যতম সেরা এ শিক্ষাবীদ দীর্ঘদিন ধরইে অসুস্থ ছিলেন। আর এ অবস্থাতেই ঢাকার ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীনবস্থায় হাতে গড়া অসংখ্য ছাত্রÑছাত্রী আর শুভান্যুধায়ীদের রেখে তাকে চলে যেতে হয়েছে দুনিয়ার মায়া চেড়ে। সোমবার রাতেই এ শিক্ষাগুরুর মৃত্যু সংবাদে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিনাঞ্চরেল বিভিন্ন জনপদে শোকের স্তব্ধতা নেমে আসে।
মঙ্গলবার তার মররদেহ বরিশালে পৌছলে ঢল নামে সর্বস্তরের মানুষের। বরিশাল টাউন হল প্রাঙ্গনে মরহুমের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হলে সেখানে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। নগরীর প্রাণকেন্দ্রে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রনে অতিরিক্ত ট্্রাফিক পুলিশও মোতাায়েন করতে হয়। বিএম কলেজের বিশাল নামাজে জানসাজায় অসংখ্য মানুষ অংশ নেন।
‘হানিফ স্যার’ খ্যাত এ শিক্ষাবীদ শিক্ষাকেই তার জীবনের ধ্যানজ্ঞান হিসেবে আজীবন লালন করে গেছেন। কর্মজীবনে দক্ষিণাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত বরিশাল সরকারী বিএম কলেজ ও সরকারী হাতেম আলী কলেজের প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করে গেছেন অত্যন্ত সাফল্যের সাথে। সরকারী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহনের পরে বরিশালের ইসলামীয়া কলেজেরও প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। নিজের জন্ম ভিটা ভোলাতেও তিনি একাধীক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে পেশাকে তিনি কখনো শুধু চাকুরী হিসেব নেননি। অর্থনীতির এ শিক্ষক আগাগোড়াই ছিলেন প্রকৃতি প্রেমিক। তার প্রমান হয়ে দাড়িয়ে আছে অনেকটাই তার হাতে গড়া হাতেম আলী কলেজ, বিএম কলেজ ও ইসলামীয়া কলেজে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অসংখ্য বৃক্ষরাজী কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়ে দন্ডায়মান।
আর শিক্ষকতা জীবনে প্রতিটি ছাত্রÑছাত্রীর নাম তার মুখস্থ ছিল আজীবন। জীবনে একবার যে ছাত্রের নাম তিনি শুনছেন, তা ভোলেননি কোন দিনই । ব্যক্তিগত জীবনে ৪ ছেলে ও দুই কণ্যার জনক হলেও সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার ছাত্রÑছাত্রীও ছিল তার সন্তানতুল্য। তিনি যখন যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই উন্নয়নের ছোয়া রেখেছেন। এমনকি বিএম কলেজের শতবর্ষ পূর্তি তিনি উদযাপন করেছেন দেশের প্রেসিডেন্টকে প্রধান অতিথি করে। শতাধীক বছরের পুরোনো বিএম কলেজের মূল ভবনটির আদল বজায় রেখে পরিপূর্ণ সংস্কারের মত দুরুহ কাজটি তিনি করেছিলেন নিজের মেধা ও বুদ্ধিমত্তায়। ঝুকিপূর্ণ এ কাজের জন্য তিনি কোন প্রকৌশলীরও পরামর্শ নেননি। এমনকি তার প্রিয় এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনেক অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তিনি তৎকালীন যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদও গ্রহন করেন নি।
তবে এসব কিছুর চেয়েও বড় বিষয় ছিল তিনি শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনদিন কোন বিষয়ে কখনো আপোষ করেন নি। নিজের বিষয় নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সব ছাত্রÑছাত্রীকে মানুষ করেছেন নিজ সন্তানের মত। তাদের সব বিষয়ে খোজ খবর রেখেছেন সব সময়। হানিফ স্যার তার কর্মকালে অর্থের অভাবে কোন ছাত্রÑছাত্রীর পড়াশোনা ব্যহত হতে দেননি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ড প্রতিষ্ঠায়ও তার অবদান ছিল ব্যপক। এ লক্ষে আন্দোলন সংগ্রামেও তিনি যথেষ্ঠ অবদান রেনখে গেছেন। বরিশাল বিশ^বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবার পরে তিনি দীর্ঘদিন এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। বার্ধক্যজনিত কারনে শেষ জীবনে শরীর যখন চলছিলনা, তখনো তিনি তার প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খোজ খবর রাখতেন। খোজ নিতেন প্রিয় ছাত্রÑছাত্রীদেরও। তাই জীবনের শেষ সময়েও কিছু ছাত্রÑছাত্রী তাদের প্রিয় ‘হানিফ স্যার’ এর খোজ খবর রাখতেন।
দক্ষিণাঞ্চলের সেই প্রিয় হানিফ স্যার সব মায়া কাটিয়ে সকলকে ছেড়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার এ মৃত্যুতে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে সারা দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে যে অপুরনীয় ক্ষতি হল তা আর পুরন হবার নয় বলে মন্তব্য করেছেন অনেক বিশিষ্ট শিক্ষাবীদও। অনেকেই মন্তব্য করেছেন হানিফ স্যার-এর এ মৃত্যুর ফলে নিভে গেল দক্ষিণাঞ্চলের শিক্ষার বাতিঘর।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ