পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
টিকা গ্রহণে আগ্রহ বাড়ছে। টিকা কেন্দ্রগুলোতে টিকা নিতে আসা মানুষের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। অফিস-আদালত, সর্বোত্রই আলোচনা কারা টিকা নিয়েছেন-নিচ্ছেন তা নিয়ে। কে কোথায়, কখন টিকার জন্য নিবন্ধন করলেন, টিকা নিলেন। এটা আর গোপন থাকছে না। নিবন্ধন বা টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছে মানুষ। এমনকি টিকা গ্রহণে অপেক্ষায় থাকার দৃশ্যও সবার কাছে জানিয়ে দিচ্ছেন টিকা নিতে আগ্রহীরা। ইতিমধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ অধিকাংশ মন্ত্রী, এমপি, প্রধান বিচারপতি, সচিবসহ বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা টিকা গ্রহণ করেছেন। বাদ পড়েনি সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষও। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় দিন দিন টিকা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ছে। এতে করোনার টিকা বিষয়ে বিভ্রান্তি কেটে প্রতিদিনই বাড়ছে ভিড়। রাজধানীর বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ভেদাভেদ ভুলে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা নিচ্ছেন সব পেশার মানুষ। ভিআইপি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই টিকা নেয়ার জন্য আগ্রহ ভরে অপেক্ষা করছেন। অনেক কেন্দ্রে ভিআইপিদের গাড়ীর দীর্ঘ লাইনও দেখা গেছে।
সরেজমিনে টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছ, টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসবের আমেজ। কে আগে নিতে পারলেন টিকা এটাই যেন এখন মুখ্য বিষয়। আর টিকা গ্রহণ করেই তা দিচ্ছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। রাজধানীর মুগদা হাসপাতালে টিকা গ্রহণ করে ফেসবুকে পোষ্ট দিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করা আরাফাত দাড়িয়া (৪৬) বলেন, টিকা নিতে পেরে খুবই খুশি। সুস্থ আছি। আমার মতো সবাই টিকা নিন। নিজে করোনামুক্ত থাকুন অন্যকে সুস্থ রাখুন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ তথ্য মতে, ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার প্রায় দেশের ৪৬ লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা নিতে রেজিস্ট্রেশন করেছে এবং ইতোমধ্যেই ৩৬ লাখ ৬০ হাজারেরও বেশি মানুষ টিকা গ্রহণ করেছে। আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় আগ্রহভরে উৎসবের আমেজে সবাই টিকা নিতে চলে আসছেন। অবশ্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, টিকার কোনো সঙ্কট হবে না। টিকার চাহিদা বাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনিকার আরও তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন।
জানতে চাইলে করোনাভাইরাসের টিকাদান কেন্দ্র রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালের অফিসার ইনচার্জ ডা. আয়েশা আক্তার ইনকিলাবকে বলেন, টিকা গ্রহণে প্রতিদিনই বাড়ছে মানুষের মধ্যে আগ্রহ। নির্ধারিত সময়ের পরও অনেকে ভিড় করছেন। তিনি বলেন, কে টিকা নিতে পেরেছেন তা দ্রুত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশসহ প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে এক ধরণের উৎসব লক্ষ্য করা গেছে।
প্রতিদিন টিকা গ্রহণের আগ্রহ বাড়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা নেয়ার পর এখনও কোনো মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার খবর নেই, সবাই সুস্থ। একই সঙ্গে পরবর্তী সময়ে টিকা যদি বিনামূল্যে না মেলে, টিকা নেয়ার সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে তাই মানুষের আগ্রহও বাড়ছে। পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নিয়েছেন এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি তাই টিকা নেয়া যেতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া টিকা নেওয়ার ফলে বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুবিধা রয়েছে। যেখানে আগে করোনার সার্টিফিকেটের প্রয়োজন ছিল।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, করোনার টিকা বিষয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ থেকে বোঝা যাচ্ছে, করোনার টিকা প্রয়োগ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনাও সফলভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। গত ১ মাস দেশব্যাপি টিকা প্রদানে বাংলাদেশের প্রশংসা কেবল দেশেই নয়, বিদেশ থেকেও হয়েছে এবং হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের ১ হাজার ৭টি টিকা বুথে পর্যাপ্ত টিকা পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে উপজেলা পর্যায়ে টিকা দেয়া হচ্ছে। খুব শিগগিরই ইউনিয়ন পর্যায়ে নেয়া হবে। আগামী জুলাই পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে কোভ্যাক্স এর ১ কোটি ৯ লাখ টিকাসহ মোট ৪ কোটি টিকা দেশের মানুষের শরীরে প্রদানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। টিকা প্রদানে বিশে^র বহু দেশ এখনও হিমশিম খাচ্ছে। কিন্তু দেশের স্বাস্থ্যখাত এই টিকা প্রদানে এখন পর্যন্ত যথেষ্ট সফলতা দেখিয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করতে পারলে আগামীতেও টিকা প্রদানে দেশের সুনাম বিশ্বব্যাপি অক্ষুন্ন থাকবে।
টিকা প্রদানে ভবিষ্যতে যাতে কোন রকম সমন্বয়হীনতা দেখা না দেয় সেজন্য প্রতি ১৫ দিন পর পর সচিবালয়ে অন্তত একটি করে সভা করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। জাহিদ মালেক বলেন, পরবর্তী ধাপে দেশের সকল শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট একটি অংশসহ দেশে থাকা বিদেশি নাগরিকদের, বিভিন্ন বন্দরে কর্মরত ব্যক্তিদের, দেশের পাঁচ তারকা হোটেলে কর্মরত ব্যক্তিদেরকেও টিকা প্রদান করা হবে। আগামীতে আরও টিকা ক্রয় করতে বিশে^র বিভিন্ন দাতা সংস্থাসমূহ প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা প্রদানে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে পর্যাপ্ত টিকা হাতে চলে এলে ৪০ বছরের বাধ্যবাধকতা কমিয়ে আনা হতে পারে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে যারা সমালোচনা করেছিলেন, তারাই এখন টিকা নিচ্ছেন। প্রতিদিনই বাড়ছে টিকা গ্রহণে আগ্রহীর সংখ্যা।
এদিকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জনসন অ্যান্ড জনসনের তৈরি এক ডোজের টিকা পেতে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নান। তিনি বলেন, টিকার জন্য জনসন অ্যান্ড জনসনের সাথে কথা হয়েছে। তাদের টিকা আমাদের দেশে রাখার মতোই। তবে কোভ্যাক্স ফেসিলিটি এই টিকাকে তাদের সাথে যুক্ত করেনি। এটা এক্সক্লুসিভলি তাদের দেশে ব্যবহার করছে। সেটা আমরা কিভাবে আমদানি করবো?
আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। যদি কোনো সুযোগ আসে, নিশ্চয়ই আমরা এটা নিয়ে আসবো। এতে করে এক ডোজ করে দেয়ায় আমাদের সময় বাঁচবে। আর যদি সেটা না হয়, তাহলে অক্সফোর্ড-অস্ট্রাজেনিকার যে টিকা আছে, ওটাই চালিয়ে যাবো। তিনি বলেন, আমাদের টিকার কোনো সঙ্কট হবে না। এগুলো শেষ হতে না হতেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও তিন কোটি ডোজ টিকা ক্রয়ের নির্দেশনা দিয়েছেন। সেগুলোও অক্সফোর্ডের টিকাই আনা হবে।
কোভ্যাক্সের টিকা কবে আসছে এ বিষয়ে আব্দুল মান্নান বলেন, তারা জানিয়েছে মার্চ মাসেই টিকা পাঠাবে। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই পাবো। তবে এখনও তারা আমাদেরকে কোনো নির্ধারিত তারিখ জানায়নি। বাংলাদেশে কবে তারা টিকা দেবে এটা বড় কথা নয়, কথা হলো এশিয়ার অন্য কোনো দেশ যদি আগে পেয়ে যায়, তাহলে বলতে পারেন যে, কেন আমরা আগে পেলাম না।
পরীক্ষায় দেখা গেছে, এই টিকাটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া ঠেকাতে পারে। তবে সাধারণ আক্রান্ত হওয়ার হার ঠেকাতে সক্ষম ৬৬ শতাংশ ক্ষেত্রে। বেলজিয়ান প্রতিষ্ঠান জ্যানসেন এটি তৈরি করেছে। এই টিকার সুবিধা হলো, এটিকে সাধারণ রেফ্রিজারেটরেই সংরক্ষণ করা যাবে। চলতি বছরের জুন মাস নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রকে ১০ কোটি টিকার ডোজ দিতে সম্মত হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডাও এই টিকার জন্য চাহিদা জানিয়েছে। পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলোকে দেয়ার জন্য যে কোভ্যাক্স প্রকল্প নেয়া হয়েছে, সেই প্রকল্পে ৫০ কোটি টিকা কেনার চাহিদা দিয়েছে।
এছাড়া নিবন্ধন করে টিকা গ্রহণের তারিখ না পাওয়ায় টিকা কেন্দ্রে ভিড় করছেন অনেকে। যদিও ইতোমধ্যে করোনার টিকা নেয়ার জন্য টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে নিবন্ধনের সুবিধা বন্ধ করা হয়েছে। চাহিদা কম থাকায় শুরুর দিকে যেমন নিবন্ধনের দু’একদিন পরই টিকা প্রদানের সময় দেয়া হতো। এখন চাহিদা বেশি হওয়ায় তা থেকে কিছুটা সরে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বর্তমানে বয়স অনুযায়ী নিবন্ধনের ১-২ সপ্তাহ পরে সময় দেয়া হচ্ছে। আর তাই কেন্দ্রগুলোতে টিকা গ্রহণে আগ্রহীদের ভিড় সামলানোই এখন সরকারের সামনে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, সরকারের লক্ষ্য টিকাদান কর্মসূচি স্বতঃস্ফ‚র্ত রাখা। মানুষ যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে টিকা নিতে পারেন তা নির্বিঘœ করার লক্ষ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিবি হাসপাতালে টিকা নিয়ে সৈয়দ আহাসানুর রহমান বলেন, আল্লাহর রহমতে প্রথম ধাপেই কোনো ধরণের ঝামেলা ছাড়াই টিকা পেয়েছি। সবাইকে সচেতন নাগরিক হিসেবে টিকা নেয়া উচিত। একই সঙ্গে টিকা গ্রহণকালে স্বাস্থ্যকর্মীরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কেও নির্দেশনা দিয়েছেন। তাই ভয়ের কিছু থাকছে না।
সূত্র মতে, প্রথমে ৫৫ বছরের ওপরে নাগরিকদের নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়েছিল। পরে টিকা গ্রহণে মানুষের সাড়া কম থাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বয়সসীমা ৫৫ থেকে কমিয়ে ৪০ বছর করা হয়।
উল্লেখ্য, বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস গত বছরের মার্চে বাংলাদেশে আঘাত করে। ভাইরাসটি আঘাতের পর থেকে বাংলাদেশে এ পর্যন্ত প্রায় সারে পাঁচ লাখ মানুষ সংক্রমিত হয়েছে এবং মৃত্যু হয়েছে প্রায় সারে আট হাজার।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।