Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভাগ্য বিড়ম্বনায় ২৫০ চিকিৎসক

বিএসএমএমইউ’র পদোন্নতি বঞ্চিতদের দেড় যুগ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১তম সিন্ডিকেট সভা

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

এ যেন বিড়ম্বিত ভাগ্য! চিকিৎসা দিয়ে অসুস্থ হাজারো মানুষকে সারিয়ে তোলেন; অথচ নিজেদের মনে অসুখের বাসা। বুকভরা বেদনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন দিনরাত। এই ভাগ্যবিড়ম্বিতরা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ২৫০ জন চিকিৎসক। দেড় যুগের বেশি সময় ধরে চাকরি করছেন; অথচ পদোন্নতি পাচ্ছেন না। দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও সবচেয়ে বড় চিকিৎসক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসব বঞ্চিত চিকিৎসকরা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও মানষিকভাবে তারা বিপর্যস্ত। প্রফেসর হওয়ার স্বপ্ন দেখা এসব চিকিৎসকদের অনেকেরই অবসরে যাওয়ার সময় হয়ে আসছে।

সূত্র মতে, চিকিৎসা পেশায় স্ব স্ব ক্ষেত্রে সহকারী, সহযোগী বা প্রফেসর হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য যতগুলো শর্ত রয়েছে সবই পূরণ করছেন তারা। চিকিৎসা শাস্ত্রের ওপর উচ্চতর ডিগ্রিও নিয়েছেন সবাই। এরপরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটা আইন রহিত করায় আটকে আছে সবার পদোন্নতি। এমন পরিস্থিতিতে পূর্ব আশ্বাস বা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আজ রোববার অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮১তম সিন্ডিকেট সভা। যদিও এই সভায় বঞ্চিতদের পদোন্নতির শতভাগ আশ্বাস দিতে পারছেন না প্রশাসন। তারপরও আশায় বুক বেধেছেন বঞ্চিতরা।
ভুক্তভোগী চিকিৎসকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস কোর্স শেষে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসক হয়েছেন। বিএসএমএমইউ’র নিয়মিত চিকিৎসক হিসেবে দেড় যুগের বেশি সময় ধরে রোগীদের সেবায় নিরলসভাবে কাজ করছেন। হাতে-কলমে সেবা দেয়ার পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নে একাধিক বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রিও সম্পন্ন করেছেন। দেশি-বিদেশি মেডিকেল জার্নালে চিকিৎসা গবেষণা বিষয়ক তাদের একাধিক আর্টিকেলও প্রকাশিত হয়েছে। তবে এতকিছুর পরও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলায় মেডিসিন, নিউরোমেডিসিন, নিউরোলজি, নিউরোসার্জারি, গাইনি, কার্ডিওলজি, অর্থোপেডিকস, রিউম্যোটোলজিসহ প্রায় ৫৪টি বিভাগের ২৫০ জন চিকিৎসক পদোন্নতি পাননি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের প্রথম ও সর্বোচ্চ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চিকিৎসকরা এফসিপিএস, এমডি ও এমএস বিষয়ের ওপর পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেও সাধারণ মেডিকেল অফিসার পদে কাজ করছেন। পদোন্নতি বঞ্চিতদের অনেকের অবসর নেয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। অন্যদিকে তাদের সঙ্গে পাশ করা অন্য সহপাঠিরা অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ও মেডিকেলে সহকারী, সহযোগী অধ্যাপক ও প্রফেসর পদমর্যাদায় পদোন্নতি পেয়েছেন। আর তাদের দীর্ঘ ১২ বছর পদোন্নতি না হওয়ায় অন্য সহকর্মীদের থেকে পদবিতেও ছোট হয়ে যাচ্ছেন। দক্ষ চিকিৎসক হওয়ার পরও সামাজিক মর্যাদা পাচ্ছেন না।

তবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরে যারা পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করবেন, এ ধরনের চিকিৎসকদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে একটি নীতিমালা ছিল। যেখানে পোস্ট গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর তাদেরকে স্ববেতনে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া হতো। পরবর্তীতে বিভাগের প্রয়োজন অনুযায়ী সেই পদে আত্মীকরণ করা হতো। কিন্তু ২০০৯ সালে সেই আইনটি রহিত করা হয়। যে কারণে বিএসএমএমইউ দেশের প্রথম শ্রেণির মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হলেও স্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত চিকিৎসকদের পদোন্নতির সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় বঞ্চিত হচ্ছেন এই চিকিৎসকরা।

সূত্র মতে, পদোন্নতির দাবিতে ২০১৯ সালের ১ ডিসেম্বর চিকিৎসকরা বিএসএমএমইউ’র ভিসি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান ও অবস্থান ধর্মঘট পালন করলে কর্তৃপক্ষ দ্রুত সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেয়। তবে দীর্ঘ অপেক্ষার পর দাবি পূরণ না হওয়ায় ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি আরও একবার স্মারকলিপি দিয়ে দাবি দাওয়া পেশ করা হয়। ওই সময়ে (২০২০ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত) বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৬তম সিন্ডিকেট সভায় চিকিৎসকদের পদোন্নতির নীতিমালা প্রণয়নের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হলেও কার্যক্রমে ভাটা পড়ায় ১৩ আগস্ট তৃতীয়বারের মতো মানববন্ধন শেষে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়। এবার ওই কমিটি একটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা তৈরি করে। যা আজকের সিন্ডিকেট বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে সর্বস্মতিক্রমে পাশ হলে আড়াইশ’র অধিক সিনিয়র চিকিৎসক দীর্ঘদিনের পদোন্নতি বঞ্চনা থেকে মুক্তি পাবেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চিকিৎসক বলেন, তাদের বঞ্চনার এই বিষয়টি মানবিকভাবে বিবেচনা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি, কোষাধ্যক্ষ, সকল সিন্ডিকেট সদস্য, সকল বিভাগীয় প্রধান, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, বিশ্ববিদ্যালয় স্বাচিপের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক প্রফেসর ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহসহ সব পর্যায়ের নীতি-নির্ধারণী ব্যক্তিদের কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। যারা প্রতিবারই পদোন্নতির আশ্বাস দিয়েছেন।
চিকিৎসকরা ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ করোনার এই পরিস্থিতিতে টেলিমেডিসিন সেবা, বহির্বিভাগের সেবা, ইনডোরে রাউন্ড, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য বিশেষায়িত ফিভার ক্লিনিক এবং করোনা ইউনিটের রোগীদের সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থসেবার মানকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এসব বিবেচনায় আজ সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত বিএসএমএমইউ’র সিন্ডিকেট সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হলে বঞ্চিত এসব চিকিৎসকদের পদোন্নতিতে আর কোন বাধা থাকবে না।

পদোন্নতির জন্য গঠিত সুপারিশ কমিটির সভাপতি, বর্তমান সংসদ সদস্য ও বিএসএমএমইউ’র সিন্ডিকেট সদস্য প্রফেসর ডা. মো. আব্দুল আজিজ বলেন, চিকিৎসকরা দীর্ঘদিন ধরে সেবা দিচ্ছেন। চাকরি বিধি মোতাবেক স্ববেতনে পদোন্নতির জন্য আমরা সুপারিশ করেছি। একই সঙ্গে সিনিয়রিটির ভিত্তিতে পদন্নোতির কথাও বলা হয়েছে। তবে সভায় বিষয়টি পাশ হবে কিনা সেটা বলা যাচ্ছে না, সিন্ডেকেট সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএসএমএমইউ’র ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়–য়া বলেন, সিন্ডিকেটর সিদ্ধান্তের আগে এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না। তবে পদোন্নতির বিষয়টা বিবেচনা করে এজেন্ডাটা (আলোচ্য সূচি) দেয়া হয়েছে। এ জন্য একটা সুপারিশও আছে। আলোচনা শেষে বলা যাবে। সিদ্ধান্ত ভালো হলে সবার জন্য ভালো হবে। আমরাও খুশি হব।



 

Show all comments
  • kalam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:০০ পিএম says : 0
    প্রমোশন বিবেচনা করবে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট । তার জন্য স্বাচিব আর ডাব নামক চিকতসা পেশার বাঁশ দাতাদের শরনাপন্ন কেন? ... তোমাদের বিদ্যার জোড় না থাকলে বাজারে গিয়ে পার বিক্রি কর যাও।
    Total Reply(0) Reply
  • kalam ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:০২ পিএম says : 0
    প্রমোশন বিবেচনা করবে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট । তার জন্য স্বাচিব আর ডাব নামক চিকতসা পেশার বাঁশ দাতাদের শরনাপন্ন কেন? .. তোমাদের বিদ্যার জোড় না থাকলে বাজারে গিয়ে পার বিক্রি কর যাও।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসক

১৩ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ