পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যু কোন বিচ্ছিন্ন ও স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, যারা স্বাধীনভাবে উক্ত গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারি হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে। তার সর্বশেষ নির্মম শিকার হলেন মুশতাক আহমেদ। মূলতঃ মুশতাক আহমেদের ওপর কারাগারে অবর্ণনীয় নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মুশতাক লুটপাটকারী কিংবা কালোবাজারী, সন্ত্রাসী ও ডাকাত ছিলেন না, বরং ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছাত্র মুশতাক আহমেদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে গিয়ে অকালে তার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দেয়া হলো।
গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।
মুশতাকের এই নির্ভিক আত্মদানের মধ্য দিয়েই দেশের তরুণ সমাজ জেগে উঠবে আশা প্রকাশ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তরুণ সমাজের জাগরণের মাধ্যমেই দেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিক স্বাধীনতাসহ সুশাসন ও আইনের শাসন ফিরে আসবে। কারণ মুশতাক একজন সৎ ও সাহসী মানুষ ছিলেন, তিনি চিরদিন অধিকারহারা মানুষের নিকট প্রেরণার আলোকবর্তিকা হয়ে থাকবেন। তিনি দেশবাসীর প্রার্থনা, চেতনা ও অনুভবে চিরদিনের জন্য বিরাজ করবেন ব্লগার মুশতাক আহমেদ ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় গতবছর মে মাসে গ্রেফতার হন। গত বৃহস্পতিবার রাতে তিনি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে কারাবন্দী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
এই ঘটনায় বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমাজ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন সংগতি, অসংগতি, নিয়ম-অনিয়ম, কীর্তি-অপকীর্তি ইত্যাদি বিষয়ে স্বাধীনচেতা মানুষের অভিমত, বিশ্লেষণ ইত্যাদি প্রকাশের সুযোগ আজ গণতান্ত্রিক বিশ্বে সর্বজনস্বীকৃত। কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকার তাদের অপকর্ম ও ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কোন ধরণের সমালোচনা যাতে প্রকাশ না হয়ে পড়ে সেজন্য নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মন্তব্য লেখা বা পোস্টকে কোনভাবেই বরদাস্ত করছে না। যারা স্বাধীনভাবে উক্ত গণমাধ্যমে নিজের মত প্রকাশের চেষ্টা করছে তাদের জীবনে নেমে আসছে এক ভয়ঙ্কর দুর্বিষহ পরিণতি। হয় তাদের গুমের শিকার হতে হচ্ছে নতুবা সরকারী হেফাজতে প্রাণ দিতে হচ্ছে।
দেশে শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশে আইন-কানুন, সুষ্ঠু বিচারিক ব্যবস্থা না থাকার কারণেই সারাদেশে এক শ্বাসরোধী পরিবেশ বিরাজ করছে। মানুষের জানমালের কোন নিরাপত্তা নেই। সারাজাতির ওপর ঘোর দুর্দিন নেমে এসেছে। দেশে এখন নব্য বাকশালী শাসন জারী রাখা হয়েছে, যাতে কেউ টু শব্দ করতে না পারে। মানুষকে নিঃশব্দ করতেই গুম, খুন, ক্রসফায়ার, পুলিশী হেফাজতে মৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় জীবনের অনুষঙ্গ করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে সত্য সমালোচনাতেও তারা আঁতকে ওঠে। রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে রুপান্তর করা হয়েছে। নিষ্ঠুর একদলীয় কর্তৃত্ববাদী শাসনের সকল বৈশিষ্ট্য এখন ফুটে উঠেছে। রাষ্ট্র ক্রমান্বয়ে মাফিয়ারুপ ধারণ করেছে। সরকার নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে দেশে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিতে দ্বিধা করছে না। সরকারের এই রক্তঝরা কর্মসূচির প্রধান শিকার হচ্ছে বিরোধী দল, মত ও স্বাধীন চিন্তার মানুষরা। নজীরবিহীন অপশাসন ও কুকীর্তি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার যে ঝড় বইয়ে যাচ্ছে সেটি মানুষের দৃষ্টি থেকে ভিন্ন দিকে সরাতেই জাতীয়তাবাদী শক্তিসহ বিবেকবান, স্বাধীনচেতা অনলাইন বøগার ও লেখকদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার।
এই দুর্বিনীত দুরাচারের পরিণতি হবে ভয়াবহ হবে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, মুশতাকের এই মৃত্যুতে সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ ক্ষোভে-বেদনায় ফেটে পড়েছে। মুশতাকের মতো একজন অরাজনৈতিক, নিরীহ এবং নিজস্ব চিন্তায় স্বায়ত্বশাসিত ফেসবুকে ফ্রিল্যান্সার লেখকের মৃত্যু কোন স্বাভাবিক ঘটনা নয়, এর সাথে রাষ্ট্রশক্তি জড়িত। সরকারি হেফাজতে কারাগারে মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে মির্জা ফখরুল তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ ও রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। পাশাপাশি মুশতাক আহমেদের কারান্তরীণ অবস্থায় মৃত্যুতে স্বচ্ছ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করার দাবি করেন।
দেশজুড়ে আবারো মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে : মাহমুদুর রহমান মান্না
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, সারা দেশজুড়ে আবারো মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে। সরকার যখন ঘটা করে সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিববর্ষের কথা বলছে তখন দেশে অত্যাচার-নির্যাতন ধীরে ধীরে আরো বাড়ছে। একদিকে করোনার বিভীষিকা, অর্থনীতি বিপর্যস্ত, আরেক দিকে দেশব্যাপী সমস্ত নির্বাচন ব্যবস্থাকে একেবারে তছনছ করে দেয়া হয়েছে। গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ সব বলেন।
মান্না বলেন, দেশবাসীর কাছে আমার এ সমস্ত কথা বলার কারণ হচ্ছে, এখনো কি আপনারা চুপ করে বসে থাকবেন? এভাবে মৃত্যুর মিছিল বাড়বে। এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যার মিছিল বাড়বে। যারা এদেশে সত্যের পথে লিখেন, বুদ্ধিজীবীরা আছেন ন্যায়ের পক্ষে কথা বলেন, তাদের মৃত্যুর মিছিল ভারি হবে। আর আমরা কি সবাই চুপচাপ বসে বসে কেবল এসব দেখব?
ডাকসুর সাবেক ভিপি বলেন, গত বছরের জানুয়ারিতে লেখক মুশতাককে সঙ্গে কার্টুনিস্ট কিশোরকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল এটা সবাই জানে। এ ঘটনায় তাদের গ্রেফতারে সারা দেশের মানুষ প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং মুক্তি চেয়েছে। তাদের নামে ওই সময় মামলা দেয়া হয়েছিল ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এর মধ্যে অনেকেই ছাড়া পেয়েছেন। কিন্তু মুশতাক এবং কিশোর ছাড়া পাননি। আজকের পত্রিকায় দেখলাম লেখা হয়েছে মুশতাক ছাড়া পেলেন, সত্যিকার অর্থে তিনি এই দুনিয়া থেকে মুক্তি পেলেন।
তিনি বলেন, মুশতাক সাহসী এবং নির্লোভ মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় লিখেছেন অন্যায়ের বিপক্ষে। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুশতাক কেন মারা গেছেন? এটা এখন আমরা জানিনা। তবে ডাক্তার স্পষ্ট করে বলেছেন যে, তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। ২৪ ফেব্রুয়ারি একটা লোক আদালতে আসেন সুস্থ অবস্থায়। এক দিন পরেই সন্ধ্যায় অসুস্থ হয়ে এমন কি অবস্থা হলো হাসপাতালে নিতে নিতেই তিনি মারা গেলেন? এর দায় জেল কর্তৃপক্ষ তথা কারাগারকে নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।