পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজে ধীরগতিতে চরম দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রধান সড়কে তীব্র যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। বিঘ্নিত হচ্ছে সার্বিক আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন। চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নগরীর লালখান বাজার পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এ মেগা প্রকল্পের কাজ যত বিলম্বিত হচ্ছে, ততই দীর্ঘায়িত হচ্ছে নগরবাসীর ভোগান্তি।
নগরীর বিমানবন্দর সড়কে চট্টগ্রাম বন্দর, কাস্টম হাউস ছাড়াও দেশের সর্ববৃহৎ ইপিজেড চট্টগ্রাম ইপিজেড, কর্ণফুলী ইপিজেড, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক, এলাকা ছয়টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। এই সড়কে দিনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৫০ হাজার যানবাহন আর কয়েক লাখ মানুষের চলাচল। কাজে ধীরগতির কারণে তীব্র জট ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের সড়কেও। এতে বিগত দুই বছর ধরে অসহনীয় দুর্ভোগ নগরবাসীর নিত্যসঙ্গী। বারিক বিল্ডিং থেকে আগ্রাবাদ বাদামতল মোড় পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হওয়ায় যানজট আরও প্রকট হয়েছে।
প্রকল্পের নকশা নিয়ে জটিলতা, চট্টগ্রাম বন্দর আর ট্রাফিক পুলিশের আপত্তি, কাজে সমন্বয়হীনতা, মহামারি করোনাসহ নানা কারণে বিলম্বিত হচ্ছে এ প্রল্পের কাজ। চলতি বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা। অথচ এখনও পর্যন্ত কাজ হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। ফলে আগামী ২০২৩ সালের আগে কাজ শেষ হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
দেশের প্রধান এ বাণিজ্যিক নগরীকে ঘিরে এই অঞ্চলে উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ১২ অক্টোবর চট্টগ্রাম সফরকালে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দেন। এরপর ২০১৭ সালের ১১ জুলাই একনেক সভায় তিন হাজার ২৫০ কোটি ৮৩ লাখ টাকার এ প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। তখন তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়।
চারলেইনের এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দৈর্ঘ্য হবে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার। কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সাথে এ এক্সপ্রেসওয়ের মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সঙ্গে নগরীর সরাসরি সংযোগ স্থাপিত হবে। আবার আউটার রিং রোড হয়ে এক্সপ্রেসওয়ে সংযুক্ত হবে দেশের লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাথে। নগরীর সিডিএ এভিনিউ, শেখ মুজিব রোড এবং বিমানবন্দর সড়কের উপর এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হলে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মোড়গুলোতে যানজট নিরসন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী এর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।
প্রথমে পতেঙ্গা কাটগড় এলাকায় কাজ শুরু হলে তীব্র যানজটে অচল হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। কথা ছিলো সিটি আউটার রিং রোড চালু হওয়ার পর এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে। তবে ধীরগতির কারণে রিং রোড নির্মাণও ঝিমিয়ে পড়ে। এখন রিং রোড যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলেও সংযোগ সড়ক না হওয়ায় তার সুফল মিলছে না। পোর্ট কানেকটিং রোডের সংস্কার কাজও শেষ হয়নি।
এদিকে গত গত বছরের শুরুতে পতেঙ্গা থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত ফাইলিং কাজ শেষে ইপিজেড ও বন্দর এলাকায় কাজ করতে গেলে চট্টগ্রাম বন্দর ও ট্রাফিক বিভাগের আপত্তিতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এরপর করোনা মহামারিতে কাজ একেবারেই বন্ধ থাকে কয়েক মাস। চট্টগ্রাম বন্দর এলাকার উপর দিয়ে এ মেগা প্রকল্প নেওয়ার কাজ শুরু হলেও বন্দরের সাথে কোন আলোচনা করেনি সিডিএ। এমনকি প্রকল্পের নকশা তৈরিতেও বন্দরকে সম্পৃক্ত করা হয়নি।
তবে আপত্তির মুখে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বন্দরের সাথে বসে কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার বন্দরে এক সভায় এক্সপ্রেসওয়ের নকশা কিছুটা পরিবর্তন করে কাজ এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী সল্টগোলা ক্রসিং থেকে কাস্টম হাউস মোড় পর্যন্ত অংশে মূল সড়কে পাশ দিয়ে বন্দরের জায়গায় এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করা হবে। তবে কাস্টম হাউস থেকে বারিক বিল্ডিং পর্যন্ত অংশে মূল সড়কের উপরেই চলবে প্রকল্পের কাজ। এ জন্য নতুন করে আর কোন ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না।
গতকাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে ইপিজেড থেকে সল্টগোলা ক্রসিং হয়ে বন্দর এবং বারিক বিল্ডিং হয়ে আগ্রাবাদ পর্যন্ত তীব যানজট। সল্টগোলা ক্রসিং থেকে বারিক বিল্ডিং অংশে কাজ শুরু না হলেও আগ্রাবাদ এবং ইপিজেড এলাকার তীব্রজট এ এলাকায়ও বিস্তৃত হয়েছে। সকালে অফিস শুরু আর আর বিকেলে ছুটির পর লাখো শ্রমিককে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বন্দরমুখী ভারী যানবাহনের দীর্ঘ লাইন লেগে থেকে রাত দিন। সড়কে আশপাশের ব্যবসায়ীরা বলছেন, তাদের ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে। ক্রেতারা এ এলাকা এড়িয়ে চলছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা পড়েছেন মহাবিপাকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (বন্দর) তারেক আহমেদ বলেন, সমন্বয়হীনতায় যানজট হচ্ছে। সিডিএর এক্সপ্রেসওয়ের পাশাপাশি ওয়াসাও পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ করছে। তবে কোন সমন্বয় নেই। চট্টগ্রাম বন্দরে কয়েক হাজার ভারী যানবাহন চলাচল করছে। বন্দরের ভেতরেও ভালো ট্রাফিক ব্যবস্থা নেই। সড়করে ভারী যানবহন রাখা হচ্ছে। এতে যানজট নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের মতামত ছাড়াই এক্সপ্রেসওয়ের নকশা চূড়ান্ত করে কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। তবে পরে আমরা বৈঠক করে নকশা কিছুটা পরিবর্তন এবং আরো কিছু শর্ত দিয়ে বন্দর এলাকায় প্রকল্পের কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বন্দর এলাকায় কাজ করার সময় সড়কের দুই পাশে ডাবল লাইনে যানচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। কেপিআই হিসাবে বন্দরের সীমানা প্রাচীর বৃদ্ধি করতে হবে এবং বন্দরের কোন গেইটের মুখোমুখি পিলার দেওয়া যাবে না।
প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, নানা কারণে কাজ বাধাগ্রস্থ হলেও এখন আর কোন সমস্যা নেই। এখন দ্রুত কাজ এগিয়ে নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত ৪৫ শতাংশ কাজ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন আগামী ২০২৩ সালের মধ্যে কাজ শেষ করা যাবে। পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত ফাইলিংয়ের কাজ প্রায় শেষ দিকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।