Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

টিকা উৎপাদন সহজ করতে আইভিআই চুক্তিতে অনুসমর্থন

ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে পেটেন্ট আইন খসড়া অনুমোদন এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

নতুন আবিস্কৃত টিকার প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে নতুন টিকা উৎপাদন আরো সহজ করতে আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তি অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল বৈঠকে এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট (আইভিআই) প্রতিষ্ঠার চুক্তিতে অনুসমর্থনের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। ১৯৯৬ সালের ২৮ অক্টোবর ইউএনডিপির উদ্যোগে দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে একটি আন্তর্জাতিক ভ্যাকসিন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার চুক্তি হয়, যেখানে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু সেই ইনস্টিটিউটের পূর্ণ সদস্য হওয়ার জন্য আমাদের মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের দরকার, সেজন্য এ প্রস্তাব তোলা হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা যদি আমরা করি, তাহলে আমাদের বাংলাদেশে ভ্যাকসিন উৎপাদন এবং এ সম্পর্কিত গবেষণা কাজে প্রশিক্ষণ, কারিগরি সহায়তা পাওয়া যাবে। এতে দেশের ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। ভ্যাকসিন উৎপাদন, প্রয়োগ ও মান নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরো যুগোপযোগী হবে। নতুন আবিস্কৃত ভ্যাকসিনের প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে দেশে নতুন ভ্যাকসিন উৎপাদন সহজতর হবে। ফলে দেশে স্বল্পমূল্যে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে। আর ভ্যাকসিন রফতানির জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার যোগ্যতা অর্জনের পথও আমাদের সুগম হবে, যা বিদেশে বাংলাদেশের ভ্যাকসিনের বাজার সম্প্রসারণে সহায়ক হবে।
আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমাদের যেহেতু ফার্মাসিটিক্যালস উৎপাদন ও মান মোটামুটি মানসম্মত, যা বিশ্বে প্রমাণিত। সুতরাং এক্ষেত্রে আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই বা দ্রুত এগুলো অর্জন করতে পারব। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে এটা আরো বেশি প্রয়োজন বলে অনুভূত হয়েছে।
আমাদের কোম্পানি গ্লোব বায়োটেক করোনাভাইরাসের যে টিকা তৈরি করছে, সে বিষয়েও মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গ্লোব বায়োটেক এখনও তো ট্রায়াল শেষ করেনি। এ বিষয়েও আলোচনা হয়েছে মন্ত্রিসভায়। তারা যদি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকল মেনে করতে পারে, তাহলে তারা ট্রায়াল করবে, তারপর দেখা যাবে। আইভিআই-এর চুক্তিতে অনুসমর্থন না করলে দেশে টিকা তৈরির ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল কিনা অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, না না এতে কোনো সমস্যা না। ধরেন ফাইজারের সাথে যদি কেউ চুক্তি করে, অরিজিনাল চুক্তিতো ফাইজারের। এখন ফাইজার যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করে, তাদের সকল প্রটোকল অনুযায়ী, তাহলে আর ওই চুক্তি লাগে না। তবে নতুন করে বাংলাদেশের কোনো প্রতিষ্ঠান, যেমন গ্লোব বায়োটেক যদি কোনো প্রডাক্ট এখান থেকে উৎপাদন করতে চায়, তাহলে আমাদের চুক্তির অধীনে শর্ত মানতে হবে।
ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে পেটেন্ট আইন খসড়া অনুমোদন
আদেশ পালনে ব্যর্থ হলে ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণের বিধান রেখে ‘বাংলাদেশ পেটেন্ট আইন, ২০২১ এর খসড়া চ‚ড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন ২০২১ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রেজুলেশন অনুযায়ী এ দুটি আইন করা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, পেটেন্ট ও ডিজাইন আইন ছিল ১৯১১ সালের। সেটা দিয়েই চলছিল। পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন জটিলতার জন্য এত বেশি ডাইভারসিফিকেশন এবং স্পেশালাইজেশন হয়ে গেছে যে, একটা আইনে দুইটা কাভার করছিল না। পরের ২০১৬ সালে এ আইনটিকে দুই ভাগ করে একটা পেটেন্ট আইন, আরেকটি ডিজাইন আইনের খসড়া করা হয়েছিল। শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে আইনটি আনা হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন অনুযায়ী নতুনত্ব ও উদ্ভাবনী বিষয় বিদ্যমান থাকলে প্রযুক্তিগত যেকোনো পণ্য উদ্ভাবনী পেটেন্ট যোগ্য হবে। এটা আইনের মধ্যে বিধান রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কোনো একটি পেটেন্টের একক বা যৌথ উদ্ভাবনকে আবেদনের ফলে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে উদ্ভাবকরা যৌথ উদ্ভাবকের পেটেন্টের সুরক্ষা দেয়া হবে।
এদিকে বৈঠকে ‘বাংলাদেশ শিল্প-নকশা আইন, ২০২১ এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, আগের আইনের অধীনে ডিজাইন এবং ট্রেডমার্কস রেজিস্ট্রার অধিদফতর ছিল, সেটা বহাল থাকবে। এ অধিদফতরের অধীনে একটি শিল্প ইউনিট থাকবে। এ আইনের অধীনে শিল্প নকশা নিবন্ধন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম সম্পন্ন হবে। আইনের অধীনে বিধি দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে এবং ফি দেয়ার সাপেক্ষে শিল্প নকশার নিবন্ধনের মেয়াদ হবে পাঁচ বছর।
আর্কাইভস আইনের খসড়া চ‚ড়ান্ত অনুমোদন
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, আর্কাইভসের ক্ষতি সাধনের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ডের বিধান রেখে বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস আইন, ২০২১, এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় আর্কাইভস আইন-২০২১ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে। জাতীয় আর্কাইভস সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ১৯৮৩ সালের একটি আইন ছিল, হাইকোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে যেহেতু এটি আইনে পরিণত করতে হবে, সেহেতু এটি রিভাইস করে ২০২১ এ খসড়ায় নিয়ে আসা হয়েছে। জাতীয় আর্কাইভস পরিচালনায় একটি উপদেষ্টা পরিষদ থাকবে। এ উপদেষ্টা পরিষদের কাজ এখানে বলা হয়েছে। এখানে একজন মহাপরিচালক থাকবেন, অধ্যাদেশে এ মহাপরিচালক ছিলেন না। খসড়া আইনে রেকর্ড বিনষ্ট করার যে বিধান ছিল তা বাদ দেয়া হয়েছে। সচিব বলেন, আর্কাইভসের সফট কপি নিয়ে যত রেকর্ড থাকবে কালিয়াকৈরের ডাটা সেন্টারে লঞ্চ করতে হবে। দেশের সব রেকর্ডরুম যা আছে সবগুলোকে একটি নির্দিষ্ট সময় পরে আর্কাইভে দিয়ে দিতে হবে।
প্রস্তাবিত আইনের গবেষক ও তথ্যসেবা গ্রহিতাদের অনলাইন ডিজিটাল সেবা দেয়ার জন্য আর্কাইভস ডিজিটাল সেবা বা তথ্যপ্রযুক্তি সেবা দিতে নির্দেশনা রয়েছে। পেমেন্ট দিয়ে তারা কর্তৃপক্ষের কাছে দরখাস্ত দিলে গোপন কোনো দলিল না হলে সরবরাহ করবে। আর্কাইভস ক্ষতি সাধন করলে এবং অন্যান্য ক্ষতি সাধনের জন্য এক থেকে ৫ বছরের জেল এবং ১০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড রাখা হয়েছে।
এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে মন্ত্রিসভা। বৈঠকে শোক প্রস্তাব নেওয়া হয়। মন্ত্রিসভা শোক প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা ও চিত্রনাট্যকার এটিএম শামসুজ্জামান গত শনিবার সকালে তার সূত্রাপুরের বাসায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।
এছাড়া বৈঠকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্মৃতি জাদুঘর ও নয়াদিল্লীস্থ জাতীয় জাদুঘরের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিতকরণ করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ