Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভয়নগরের কৃষকের সবুজ স্বপ্নের হাতছানি

নিজস্ব অর্থায়নে বেড়িবাঁধ নির্মাণ

নজরুল ইসলাম মল্লিক, অভয়নগর (যশোর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

যশোরের ভবদহের পানিবদ্ধতার করালগ্রাসে মানুষ যখন দিশেহারা, তখনই শত প্রতিক‚লতার মধ্যে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে এ অঞ্চলের হাজারো কৃষক। নিজস্ব অর্থায়নে বেড়িবাঁধ তৈরি করে সেচ দিয়ে শুরু করেছে বোরো আবাদ। সবুজে সবুজে ভরে উঠেছে শত শত একর কৃষি জমি। দীর্ঘ বছর পর দেখা দিয়েছে সবুজ স্বপ্নে হাতছানি।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানান, ১৯৮৩ সাল থেকে ভবদহ অঞ্চলে দেখা দেয় পানিবদ্ধতা। পানিবদ্ধতা নিরসনে কাজ করলেও স্থায়ী সমাধান এখনো হয়নি। ১৯৯০ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত স্থায়ী পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তৎকালিন সরকার টিআরএম প্রকল্পের মাধ্যমে অস্থায়ী সমাধান করলেও বর্তমানে পানিবদ্ধতা ভয়বহ আকার ধারণ করে। যশোর-খুলনা-সাতক্ষীরা জেলার অনেক উপজেলা পানিবদ্ধতার কবলে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় কৃষিকাজ। বর্তমান সরকার পানিবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নিয়ে কাজ শুরু করেছে। আশাকরি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যার কিছু সমাধান হবে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভবদহ অঞ্চলের অর্ন্তগত যশোরের অভয়নগর উপজেলার পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নবাসী নিজেদের অর্থায়নে বেড়িবাঁধ দিয়ে পানি নিষ্কাশন করে বোরো আবাদ শুরু করেছে।
চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা চাতরা বিল কৃষি ও মৎস্য প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস তরফদার জানান, পানিবদ্ধতার কারণে তলিয়ে যায় কয়েকটি গ্রামসহ কয়েক হাজার হেক্টর ফসলি জমি। ৯৫৫ হেক্টর জমির মধ্যে ৫শ’ হেক্টর জমিতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধ দেয়া হয়। এরপর ২০টি পাম্প বসিয়ে পানি অপসারণের কাজ শুরু করি। প্রায় একমাস সেচের পর ফেব্রুয়ারিতে বোরো আবাদ শুরু করে কৃষকরা। ৫শ’ হেক্টর জমির মধ্যে প্রায় সাড়ে ৪শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। কৃষক এখন সবুজ স্বপ্নে বিভোর।
সুন্দলী ইউনিয়নের কৃষক প্রবির কুমার রায় জানান, নিজস্ব অর্থায়নে সেচের মাধ্যমে ৩শ’ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ শেষ করেছি। সবুজে ভরে উঠেছে গোটা বিল। পানি উন্নয়নের বোর্ডের অদূরদর্শীতার কারণে প্রতিবছর পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এ অঞ্চলের মানুষ মানবতার জীবন যাপন করছে। প্রেমবাগ ও পায়রা ইউনিয়নের বিভিন্ন কৃষকের সাথে কথা হলে তারা জানান, অনেক কষ্ট করে এবার বোরো আবাদ করছি। বিল থেকে পানি সরাতে পাইনি কোনো সরকারি সহযোগীতা। আশা করছি ফসল ঘরে নিতে পারবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা গোলাম ছামদানী জানান, অভয়নগর উপজেলায় ২৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমির মধ্যে ১৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। বাকি জমি এখনও পানির নিচে। উপজেলার ভবদহ অঞ্চলের চারটি ইউনিয়নের কৃষকরা বোরো আবাদ করেছে নিজস্ব উদ্যোগে।
ভবদহ পানি নিষ্কাশন আন্দোলন কমিটির আহবায়ক ও অভয়নগর উপজেলা আ.লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল জানান, ভবদহের পানিবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘ দিন আন্দোলন সংগ্রাম করা হচ্ছে। সরকার কৃর্তক আমডাঙ্গা খাল সংস্কার ও ভবদহ ২১ ভেন্ট সøইচ গেটে সেচপাম্প দিয়ে পানি অপসারণ করায় অনেক এলাকায় বোরো আবাদ হয়েছে। কৃষক হতাশার পরিবর্তে আশার আলো দেখছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ