Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

একই পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী

খাগড়াছড়ি জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় মেরুং বাজার থেকে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে ভুইয়াছড়া গ্রামে পরিবারের ছয় সদস্য নিয়ে আবদুল কাদেরের বসবাস। এ পরিবারের সবাই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। ছোট্ট বেড়ার ঘরে হতদরিদ্র এই পরিবার থাকে। জন্ম থেকে চোখের সমস্য নিয়ে বড় হয়েছেন তারা। ছয়জনই দিনের বেলায় মাঝারি বা ঝাপসা দেখলে রাতে একেবারেই দেখতে পান না।
এ পরিবারের ১ সদস্য সাহারা খাতুন জানান, আমিসহ পরিবারের ছয়জন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। আমার মেয়ে এবং ছেলে মাঝারি দেখতে পায়। রাতের বেলায় একদমই দেখতে পায় না। মেয়ের ঘরে দুই নাতিও দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। কোনো ভারী ও সূক্ষ্ণ কাজ করতে পারে না। রাতের বেলায় আমিও কোনো কাজ করতে পারি না।
জানা যায়, সাহারা খাতুনের মেয়ে খালেদার বয়স ২৭ বছর। এর মধ্যে চট্টগ্রামে একবার অপারেশন করিয়ে চোখের কিছুটা দৃষ্টি ফিরে পেয়েছে। খালেদার স্বামী গাড়িচালক। অভাব এবং দরিদ্রের সঙ্গে সংগ্রাম করে দিন পার করা এই পরিবারের পক্ষে দুই সন্তানের চোখের অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তার দুই সন্তান শারমিন ও খোরশেদ উভয়ই দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী খালেদা জানান, স্থানীয় ইউপি সদস্য (রতন মেম্বার) প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেয়ার কথা। কিন্তু সেই কার্ড এখনো পায়নি। অথচ আমাদের পরিবারে ছয়জন প্রতিবন্ধী। কারো কার্ড নেই। ঘর করার অর্থও নেই। তাই ছোট্ট বেড়ার ঘরে আমাদের জীবন বাঁচে। ঝড় বৃষ্টির দিনে এই ঘরে থাকাও যায় না। এসময় খালেদা আরো জানান, একটা প্রতিবন্ধী কার্ড আমাদের দরকার। গ্রামের লোকজনের কাছে শুনি প্রতিবন্ধীতের জন্য কার্ডের ব্যবস্থা রয়েছে অথচ আমরা কেউ পেলাম না।
সাহারা খাতুনের ছেলে মনির হোসেন মাঝারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। তিনি জানান, ঝাপসা দেখতে পাই। আমার দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীর স্মার্টকার্ড আছে। অথচ কোনো ভাতা পাই না। চোখে না দেখলে কীভাবে কাজ করব। সরকারি কোনো সহায়তাও পাই না। সাহারা খাতুনের ভাইয়ের কন্যা সাবিনা ইয়ামিনও আংশিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। সাহারা খাতুন জানান, মনির, খালেদা ও সাববিনা ইয়াসমিন চক্ষু অপারেশন করা হয়েছে। তারা দিনের বেলায় আংশিক দেখতে পায়। কিন্তু তাদের স্বাভাবিক দৃষ্টি ফিরেনি।
মেরুং ইউপি চেয়ারম্যান রহমান কবির রতন জানান, প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ড, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং জন্মনিবন্ধন সনদ ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিতে হবে। আমরা রেজুলেশন করে জমা দেব। পরবর্তীতে সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে ভাতার ব্যবস্থা করব।
জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, বিষয়টি আমার আগে জানা ছিল না। চক্ষু বিষয়ক চিকিৎসক সরেজমিন পরিদর্শন করে জেলা প্রতিবন্ধী অফিস থেকে তাদের সব ধরনের সহায়তা করব।
খাগড়াছড়ি জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের আমরা প্রতিবন্ধী স্মার্টকার্ডের আওতায় নিয়ে আসব। খুব দ্রæত সময়ের মধ্যে তারা যাতে ভাতা পায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের ভাতা না পাওয়ার বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না। ভাতা প্রদানের পাশাপাশি তাদের এককালীন সহায়তা করার উদ্যোগ নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ