Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বসন্তবাতাসে হেলেদুলে পাপড়ি মেলে ডাকছে ফুলরাজ্য

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:২৪ পিএম

ফুলে ফুলে ভরে গেছে ফুলের রাজধানী যশোরের গদখালির মাঠ। বসন্তবাতাসে হেলেদুলে পাপড়ি মেলে ডাকছে সৌন্দর্য়পিপাসুদের। রঙিন মাঠে দৃষ্টিনন্দন আকর্ষন। মনমাতানো নয়নাভিরাম দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানো কঠিন।

রঙের বৈচিত্র ও গন্ধের মাধুর্যে সে এক ভিন্ন অনুভূতি। আনন্দে ভরে ওঠে মন। মাথার উপর থেকে সূর্য হেলে গেলে মিষ্টি রোদে রঙিন মাঠে কী যে আনন্দ তা ভাষায় বুঝানো যাবে না। আসলেই অনুভূতির পারদ হয় লাগামছাড়া। সৌন্দর্যপিপাসু প্রত্যেক মানুষই ফুলের চাদর পাতা মনকাড়া দৃশ্যে হন বিমোহিত।

হরেক রঙের মিশ্রণে রঙিন মাঠ ফুলরাজ্যে গিয়ে এমনটিই মনে হয়েছে। সৌন্দর্য, উৎকর্ষতা ও ¯িœগ্ধতার প্রতীক ফুল এতো বিকিকিনি হয় তা রীতিমতো কল্পনার অতীত। মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবসে। এখন ভরা মৌসুম। একদিন পরেই মহান শহীদ দিবস। সামনে ২৬মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যেও প্রস্ততি চলছে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিমের বাড়ি যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালিতে। তিনি আধুনিক ফুল চাষ ও সম্প্রসারণের অগ্রণী ভুমিকা রেখেছেন। নিজেও একজন ফুলচাষি। তিনি দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, ফুল শুধু সৌন্দর্যের প্রতীকই নয়, এর বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিরাট। এলাকার মাঠ এখন ফুলে ভরে গেছে। ভরা মৌসুম চলছে। বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবসে কোটি টাকার ্যফুল বিক্রি হয়েছে গদখালির মাঠ থেকে। মহান শহীদ দিবসসহ ৩টি দিবসে মোট প্রায় ১২ কোটি টাকার টার্গেট রয়েছে।

যশোর-বেনাপোল সড়কের গাঁ ঘেষে ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালি বাজার। বাজারটি মূলত ফুলের বড় পাইকারী বাজার। গদখালী বাজার পয়েন্ট থেকে সোজা দক্ষিণে পটুয়াপাড়া, হাড়িয়া, নীলকন্ঠনগর, পানিসারা, কাউরা, নারাঙ্গালী, কৃঞ্চচন্দ্রপুর, কুলিয়া. চাদপুর, কানাইরালি, আশশিংড়ীসহ গ্রামের পর গ্রামের মাঠে মাঠে শুধু ফুল আর ফুল চাষ হচ্ছে। বিশাল মাঠে যতদুর চোখ যায় শুধু ফুল আর ফুল।

রজনীগন্ধার পাশাপাশি ঝাউ কলম ফুল, জারবেরা, গ্লাডিওলাস, লিলিয়াম, লাল গোলাপ, সাদা গোলাপ, কালো গোলাপ, হলুদ গোলাপ, গাঁদা, জবা ও জুইসহ মানসন্মত বিভিন্ন ফুল উৎপাদন হচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকার মাঠে মাঠে লাল, হলুদ, খয়েরী ও হলুদসহ রঙ বেরঙ এর সমাহার।

হাড়িয়াখালি গ্রামের ফুল চাষি সাজেদা বেগম জানালেন, এবারের মৌসুমে ফুলের উৎপাদন ও বিক্রি খুবই ভালো। ভালো লাভ হচ্ছে। ফুল চাষিরা জানান, এবার গাঁদা ফুল, লাল গোলাপ, জারবেরা ও লিলিয়াম ফুল খুব বেশি চাহিদা। গাদা ফুল ১০/১২দিন পর্যন্ত তাজা থাকে। বছরের ৩ মাস ফুলের ব্যবসা হয় রমরমা।

ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিমের কথা, বিদেশে ফুলের চাহিদা ব্যাপক। কিন্তু নীতিমালার অভাবে ঠিকমতো রফতানি হচ্ছে না। এটি হলে সেক্টরটি আরো এগিয়ে যেত। টুকিটকি যে সমস্যা আছে তা সমাধানের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালের তিনি। যশোর মাইকেল মধুসূদন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অর্থনীতির প্রফেসর সেলিম রেজা জানালেন, ফুল খাতটি খুবই সমৃদ্ধ। এর রয়েছে অর্থনীতির গুরুত্ব। আমাদের দেশের ফুল বিদেশে চাহিদা বাড়ছে। এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বহু লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। রঙীন ইতিহাসের পাশাপাশি অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এ্যাগ্রো প্রোডাক্ট প্রসেসিং টেকনোলজি ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে ফুল বাজারজাত ও রফতানির ব্যাপারে বললেন, ফুল চাষ ও সংগ্রহের সময়কাল সম্পর্কে ফুলচাষিদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। শুধু কোয়ালিটি এনসিউর করলেই হবে না, ফুল ট্রান্সপোর্টে কুলিং সিষ্টেম দরকার। তিনি জানান, পর্যাপ্ত ফুল উৎপাদন হচ্ছে, এর সঠিক বাজারজাত ও রফতানীর ব্যাপারে জোর দিলে সম্ভাবনাময় খাতটির স্থায়িত্ব হবে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি জানায়, ফুল উৎপাদনের সূতিকাগার যশোরের অনুকরণে ঝিনাইদহ, মহেশপুর, কালীগঞ্জ, সাভার, মানিকগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের ২৫টি জেলায় ফুল উৎপাদন বিস্তৃতি ঘটেছে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৬হাজার হেক্টর জমিতে রকমারি ফুল উৎপাদন হচ্ছে। সরাসরি ২০হাজার কৃষক কাজ করছেন। এর বাইরে ফুল উৎপাদন, বিপননসহ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৩০লাখ মানুষ। তাদের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে ফুল শিল্পে। বহু মানুষের ভাগ্য বদলের মাধ্যম ফুল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ