পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ডিএনডির জন্য স্পেশাল প্ল্যন দরকার : বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি অধ্যাপক আকতার মাহমুদ
সিটি করপোরেশনকে ড্রেনেজের অরগানাইজেশনাল সেপআপ তৈরি করতে হবে : ড. মুজিবুর রহমান
সামান্য বৃষ্টিতে ডুবে যায় রাজধানী ঢাকা। বর্ষায় এলে রাস্তাঘাট তলিয়ে যায়। গেল বছরও টানা বৃষ্টির পানিতে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাভুক্ত অধিকাংশ এলাকার রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। বছরের পর বছর রাজধানীবাসী বর্ষায় পানির সাথে যুদ্ধ করে চলেছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় বের করার চেষ্টা চললেও কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বিশেষজ্ঞরা এজন্য সিটি করপোরেশন, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও রাজউকের সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করেছেন।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা খুবই নাজুক। এ কারণে বর্ষা মৌসুমে অধিকাংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় লাখ লাখ মানুষকে। দক্ষিণ সিটির পানি নিস্কাশনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৫০টি সøুইস গেট আছে। এগুলোর মধ্যে ৩৭টিই বিকল। বাকি ১৩টি আংশিক সচল থাকলেও পানি সরবরাহ নেই বললেই চলে। এ অবস্থায় বিকল সøুইস গেট সচল করে হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে ডিএসসিসি। ঢাকা দক্ষিণ এলাকার পানিবদ্ধতা নিরসনে এই দায়িত্ব নিতে চায় ডিএসসিসি। এরআগে ওয়াসার কাছ থেকে ২৬টি খাল চলতি বছরের শুরুতে দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তর করা হয়।
তবে গত বুধবার দক্ষিণ মান্ডা এলাকায় নিয়মিত পরিদর্শনে গিয়ে দক্ষিণের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস পানিবদ্ধতা নিরসনে অচল পাম্পস্টেশনকে বড় প্রতিক‚লতা উল্লেখ করে বলেছেন, আমরা ওয়াসা থেকে যে পাম্পস্টেশন পেয়েছি সেগুলো অচল, আমরা এগুলো এখনো চালু করতে পারিনি। আমরা বিশেষজ্ঞ এবং কারিগরি বিশেষজ্ঞদের দিয়ে কাজ করাচ্ছি।
এদিক, ঢাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার সাথে ডিএনডি বাঁধ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ঢাকা শহরের পানি যায় ডিএনডি প্রকল্পে। ডিএনডির পানি সময়মতো ও সঠিকভাবে নিষ্কাশন না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) বাঁধ। এলাকার রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, শিল্প-কারখানাসহ বিভিন্ন স্থাপনা থাকে পানির নিচে। বিভিন্ন স্থানে হাঁটুপানি থেকে কোমর পানিতে ডুবে যায়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে অন্তত ২০ লাখ মানুষ। এই সবগুলোই এক সুতায় বাঁধা বলে মনে করেন বাংলাদেশ ইনস্টিউট অব প্লানার্স (বিআইপি) এর সভাপতি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, ডিএনডির চারপাশেই কিন্তু বাঁধ দেয়া। ডিএনডির এই বাঁধগুলোতে যদি পাম্পগুলো না চলে তাহলে সমস্যা কোনদিন সমাধান হবে না। কারণ সেখানে অলরেডি চারপাশে ব্লক করে ফেলা হয়েছে। সেটা ন্যাচারাল গ্রাবিটেশন প্রক্রিয়ায় যাবে না। সুতরাং অবশ্যই সেখানে পাম্পগুলো সচল করতে হবে। তিনি বলেন, খালে যে নেটওয়ার্ক আছে ডিএনডির ভেতরে সেগুলো পরিস্কার করতে হবে। ড্রেনেজের মূলত তিনটা ভাগ। ঢাকা পূর্ব, ঢাকা পশ্চিম এবং ডিএনডি। সুতরাং ডিএনডির জন্য স্পেশাল আলাদা চিন্তাভাবনা করতে হবে। স্পেশাল প্ল্যান করে আগাতে হবে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক (অব.) ড. মুজিবুর রহমান মনে করেন, ঢাকা সিটি করপোরেশনের কাছে ওয়াসার খাল হস্তান্তরের পাশাপাশি দক্ষ জনবলও ট্রান্সফার করা উচিত ছিল। তিনি বলেন, আসলেতো ওয়াসার কাছ থেকে সিটি করপোরেশনকে যে খালগুলোর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, সেগুলোর অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। খালগুলো ফাংশনাল ছিল না, পাম্পিং স্টেশনগুলোর ব্যাপারে তাপস সাহেব ঠিকই বলেছেন। সেগুলো ফাংশনাল ছিল না। আমার ধারনা ছিল ঢাকা ওয়াসার যে ড্রেনেজ ডিভিশন ওরগানাইজেশনগুলোর স্কিলড লোকজন সহই তো ট্রান্সফার করা উচিত ছিল। নাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশনে ড্রেনেজ নিয়ে কাজ করে এমন লোক ছিল না।
অন্যদিকে, দুই সিটি ওয়াসার কাছ থেকে পেয়েছে ২৬টি খালের দায়িত্ব। এবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাতে থাকা বাকি ১৩টিরও দায়িত্ব চায় দুই সিটি করপোরেশন। তবে এক্ষেত্রে শুধু দায়িত্ব নিলেই হবে না, সেই সাথে জনবল, কারিগরি সহায়তা ও যন্ত্রপাতিও প্রয়োজন বলে মনে করেন নগরবিদ অধ্যাপক আকতার মাহমুদ। তিনি বলেন, দায়িত্বটা পেয়েছে সাথে সাথে আরও যেগুলো দরকার সেগুলো হলো জনবল, কারিগরি সহায়তা ও যন্ত্রপাতি। এই তিনটা জিনিস অবশ্যই সিটি করপোরেশেনের কাছে আসতে হবে। এগুলো ছাড়া তারা ঐ প্ল্যাননগুলো বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তিনি বলেন, এপ্রিল মাস আসতে কিন্তু মাত্র দুই মাস বাকি। এরপরই বৃষ্টিবাদল শুরু হয়ে যাবে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, ডিএনডি বাঁধের ভেতরে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বসবাস করে। এ সব এলাকার পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় ও ড্রেনগুলো ময়লায় ভরে যাওয়ায় এলাকার বাসিন্দাদের পয়ঃনিষ্কাশনের পানিতেই বিভিন্ন এলাকা এখনই তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। আর বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই।
অন্যদিকে, ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম আমিন উল্লাহ নুরীর স্বাক্ষর করা চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ৫০টি স্লুইসগেট সংস্কার করে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা প্রয়োজন।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ডিএসসিসির পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের দায়িত্বে থাকা তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্লুইস গেট দীর্ঘদিন বিকল পড়ে আছে। ওয়াসার মতো এগুলোও সিটি করপোরেশনের কাছে হস্তান্তরের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়েছি। হস্তান্তর করা হলে স্লুইস গেটগুলো সচল করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবো আমরা।
এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক আকতার বলেন, পাম্পগুলো চালু না করলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। দীর্ঘদিনের সমস্যা এটা। করতে সময় লাগবে, তা আমরা বুঝি। কিন্তু এখানে সিটি করপোরেশনও আন্তরিকতার সাথে খালগুলো পরিস্কার করা এবং রাস্তার পাশে যে ড্রেনগুলো আছে স্ট্রোম ড্রেনের নেকওয়ার্ক যেটা আছে, এগুলো পরিস্কার করে প্রতিবন্ধকতা সরিয়ে ফেলতে হবে। পাম্পগুলো নষ্ট হয়ে আছে-পাম্পগুলোকে ঠিক করতে হবে। বৃষ্টি যখন হবে তখন প্রত্যেকটা পাম্পগুলো কিন্তু চালু করতে হবে। প্রতিটা পাম্প চালু না করলে কিন্তু পানি নিষ্কাষণ করা সম্ভব হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।