Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিভেদ ছড়ানো বড় ধরনের অপরাধ

সৈয়দ শামছুল হুদা | প্রকাশের সময় : ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:৪১ এএম | আপডেট : ১২:৫৬ এএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১

ভ্রাতৃঘাতী সঙ্ঘাত, হানাহানি, অপতৎপরতা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এসব কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা করা, দূর থেকে কোনো প্রকার ইন্ধন যোগানো, বিভেদের পালে হাওয়া যোগানো কুরআন ও সুন্নাহর দৃষ্টিতে জঘন্য অপরাধ। মুসলিম সমাজে ভ্রাতৃত্ববোধ জেগে উঠে মহান আল্লাহ তায়ালার অসীম রহমত ও দয়ায়। এখন কেউ যদি এমন সব তৎপরতার সাথে জড়িয়ে যায়, যে কারণে মুসলিম সমাজে ছড়িয়ে পড়ে সঙ্ঘাত, উস্কে উঠে বিভেদ তাহলে আল্লাহ তায়ালার কাছে সে একজন জঘন্য অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হবে।

সুরা হুজরাতের ৯ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘মুমিনদের দুই দলে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে, অতঃপর তাদের একদল অপর দলকে আক্রমণ করলে আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে যতক্ষণ না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে, যদি তারা ফিরে আসে তবে তাদের মধ্যে ন্যায়ের সাথে ফায়সালা করবে এবং সুবিচার করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন।’

এ আয়াতে যারা বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের বিরুদ্ধে মুসলিম সমাজকে যুদ্ধ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে। যদিও এতে রক্তপাত হওয়ার সম্ভাবনা আছে, নতুন করে ফেতনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা আছে, তথাপি আল্লাহ তায়ালা কেন এই কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন? কারণ, মুসলিম সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ছড়িয়ে দেয়া আরো বড় ধরনের অপরাধ।

আজকের সমাজে কতিপয় মানুষ আছে যাদের কাজই হলো দ্বন্দ্ব লাগানো। সমাজে এক ধরনের মানুষ আছে এই ঝগড়া লাগিয়ে আনন্দ পায়। এর মধ্যে নিজেদের আয়-উন্নতি অনুসন্ধান করে। বিশেষ করে কতিপয় রাজনীতিবিদ, আইনবিদ এরা এতটাই নোংরা মানসিকতার যে, তারা চেষ্টা করে যে কোনোভাবে সমাজের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে যেন ঝগড়া লেগেই থাকে। তারা সমাধানের পথে না গিয়ে কিভাবে ঝগড়া আরো বাড়বে, তার চেষ্টা করে। মিথ্যা মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে দ্ব›দ্ব জিইয়ে রাখার উপাদান তৈরি করে দেয়। তারা আল্লাহ তায়ালার দরবারে কী জবাব দিবে?

ভ্রাতৃত্ববোধে উজ্জীবিত সমাজ শক্তিশালী সমাজ। যে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা নেই, সে সমাজের মানুষ চরম অশান্তিতে ভুগতে থাকে। তাদের অন্যরা সহজেই ব্যবহার করতে পারে। এটা শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমিত নয়, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই কুরআনিক এই নির্দেশনা প্রযোজ্য। কোনোভাবে এর ব্যত্যয় ঘটে এমন কোনো কাজ কোনো ঈমানওয়ালা করতে পারে না। পবিত্র কুরআনে সকল মুমিনকে পরস্পরে ভাই হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝগড়া হতে পারে। এটা অসম্ভব নয়।

কিন্তু কোনো কারণে ঝগড়া হলে অন্য ঈমানদারদের কাজ হলো সেটা মিটিয়ে দেয়া। দূর করা। সমঝোতা করে দেয়া। যে কোনোভাবেই হোক ভাইয়ে-ভাইয়ে, সমাজে-সমাজে, পাড়ায়-পাড়ায় ছড়িয়ে পড়া ভুল বোঝাবুঝি, রেষারেষি, আক্রোশ, প্রতিহিংসা ইত্যাদি বিষয়গুলো দূরীভূত করা। এটা ঈমানী দায়িত্ব। অনেক পুণ্যের কাজ। আমাদের সমাজে কিছু ইবাদতগুজার মানুষকে দেখা যায়, যারা বাহ্যিকভাবে মনে হয় খুব ভালো মুমিন, হাতে তাসবীহ, প্রথম কাতারে নামায, বছরে বছরে হজও করেন, অথচ তার ভেতরটা থাকে খুবই অপরিষ্কার। এরা সমাজে শুধু পেজগি লাগায়। ঝগড়ায় ইন্ধন দেয়।

পবিত্র কুরআন এ জন্যই ঘোষণা করেছে যে, তোমাদের মধ্যে সেই অতি উত্তম যে তাকওয়াবান। তাকওয়াবান বলতে স্বশাসিত মানুষকে বোঝায়। আলোকিত হৃদয়ের অধিকারী মানুষকে বোঝায়। যে অন্যায়কে কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না। নিজে অন্যায় করে না, কেউ অন্যায় করলে সেটা প্রশ্রয় দেয় না। উপরন্তু কোথাও অন্যায় হতে দেখলে তা সামর্থ্যরে সবটুকু দিয়ে প্রতিহত করার চেষ্টা করে।

আমরা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভালো মানুষ সাজতে পছন্দ করি, কিন্তু ভালো মানুষ হতে পছন্দ করি না। অন্যের দোষ ধরতে অভ্যস্ত হলেও নিজের দোষ দেখতে পাই না। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের মুসলিম সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় সাহায্য করুন। তাঁর অসীম দয়ায় আমাদের পরস্পরে মিলে-মিশে একসাথে থাকার তৌফিক দান করুন।



 

Show all comments
  • নুরজাহান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৫৬ এএম says : 0
    মুসলিম সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর সেখানে ঝগড়া-ফাসাদ ছড়িয়ে দেয়া আরো বড় ধরনের অপরাধ।
    Total Reply(0) Reply
  • গিয়াস উদ্দীন ফোরকান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩০ এএম says : 1
    আল্লাহ আমাদের সবাইকে এসব অপকর্ম থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুক
    Total Reply(0) Reply
  • বাশীরুদ্দীন আদনান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩১ এএম says : 1
    লেখাটির জন্য সৈয়দ শামছুল হুদা সাহেবকে মোবারকবাদ জানাচ্ছি
    Total Reply(0) Reply
  • হেদায়েতুর রহমান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩১ এএম says : 1
    অত্যান্ত সময় উপযোগী একটি লেখা
    Total Reply(0) Reply
  • রোমান ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৩ এএম says : 1
    আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের মুসলিম সমাজকে সুন্দরভাবে পরিচালনায় সাহায্য করুন।
    Total Reply(0) Reply
  • azad ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৫:১৬ পিএম says : 0
    বৰ্তমানে সঙ্ঘাত, হানাহানি, দন্দ,অপতৎপরতা সমাজকে ধ্বংস করে দিয়েছে। বিভেদ ছড়ানো মাধ্যমে শুরু হয় বড় ধরনের অপরাধ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আমাদের মুসলিম সমাজ ভ্রাতৃত্ববোধ বাড়িয়ে দাও। আমরা যেন মিলে-মিশে একসাথে থাকার পারি। আমিন
    Total Reply(0) Reply
  • azad ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৫:২১ পিএম says : 0
    At present, conflict, violence, punishment and misconduct have destroyed the society. Big crimes start by spreading division. May Allah Tayala increase our sense of brotherhood in our Muslim society. May we live together in harmony. Amen
    Total Reply(0) Reply
  • azad ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৪১ পিএম says : 0
    হে দরদি পাঠক! সঙ্ঘাত, হানাহানি, ভুলে গিয়ে আবার করুণার ফুল ফুটবে, মৃত্যু-কান্না শেষ হয়ে আবার নতুন সূর্য উঠবে, এটাই আমরা আশা করি। কিন্তু নিজেদের কি বদলাতে পেরেছি? অন্যায়ের পথ কি ছাড়তে পেরেছি? হয়তো পারিনি। তবে মৃত্যু যে চারপাশে ঘুরছে সময় হলেই কারও কাছে আসবে বন্ধু হয়ে, কারও কাছে শত্রু হয়ে। চিরতরে বন্ধ হয়ে যাবে এই নিঃশ্বাস, চোখের পলকেই হয়ে যাব লাশ, কেউই নিতে চাইবে না এ লাশ, কবরের মাটি ছাড়া। একটু ভাবুন তো গোরস্থানের যে মাটিটুকু আপনি বায়না করে রেখেছেন জমিনের সে মাটিতে কি আপনার কবর হবে? তাহলে কার জন্য নিজেই নিজের ক্ষতি করছি? তাই আসুন করোনার মুসিবতের সময় নিজেকে শুধরে নিই, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখ থেকে কেড়ে নেওয়া খাবার তাদের ফিরিয়ে দিই। অন্যায়, দুর্নীতি আর পাপের পথ ছেড়ে ভালো হই, অন্তরকে আল্লাহর ভয়ে বিগলিত করি। AMIN
    Total Reply(0) Reply
  • azad ১১ এপ্রিল, ২০২১, ৫:৪১ পিএম says : 1
    Dear reader! Conflicts, quarrels, forgetfulness, flowers of compassion will bloom again, death-cry will end and a new sun will rise again, this is what we hope. But have we been able to change ourselves? Have I been able to leave the path of injustice? Maybe not. But the time that death is revolving around will come to someone as a friend, to someone as an enemy. This breath will be stopped forever, it will become a corpse in the blink of an eye, no one will want to take this corpse, except the soil of the grave. Just think, will you be buried in the soil of the graveyard that you have pledged? So for whom am I hurting myself? So let's fix ourselves in the time of Corona's trouble, give back the food snatched from the mouths of hungry people. Let us be free from injustice, corruption and sin, let us melt our hearts in fear of Allah. AMIN
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বড়-অপরাধ

১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
আরও পড়ুন