Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘কৃষ্ণকলি’র প্রেমে আমেরিকান শেতাঙ্গ নাগরিক এখন কেশবপুরে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৩২ এএম

নানা সময় ঘটে যাওয়া বিচিত্র ঘটনাগুলো কোনো এক সময় সংবাদের শিরোনামে পরিণত হয়। তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশের মেয়ে রহিমা খাতুনের জীবনে। যে রহিমা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ঘুরে অন্য যোগাতেন তিনি এখন এক আমেরিকান নাগরিকের স্ত্রী।

জানা যায়, শেতাঙ্গ আমেরিকান ক্রিস হোগল ভালোবেসে বিয়ে করেছেন রবি ঠাকুরের 'কৃষ্ণকলি'র কালো মেয়েকে। এই 'কালো মেয়ে' রহিমা খাতুন যশোরের কেশবপুর উপজেলার মেহেরপুর গ্রামের আবুল খাঁ'র মেয়ে। আর ক্রিস হোগল'র বাড়ি আমেরিকার মিশিগানে।


শুধু সাদা-কালোই নয়; ব্যবধান ছিল বিত্তেরও। ক্রিস হোগল পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার; আর রহিমা জীবিকার সন্ধানে মুম্বাইয়ের বস্তির বাসিন্দা। সব ব্যবধান ঘুঁচে তারা বাঁধা পড়েছেন অমর প্রেমের বন্ধনে। এক যুগ আগে ভারতের মুম্বাইয়েই তাদের পরিচয়। এরপর প্রেম আর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। চার বছর আগে ঘর পেতেছেন যশোরের কেশবপুরের মেহেরপুর গ্রামে।

কৃষ্ণকলি কবিতায় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, 'কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি/কালো তারে বলে গাঁয়ের লোক/মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে/ কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ ...।' ১২ বছর আগে যেন সেই কালো হরিণ চোখেই বাঁধা পড়েছেন ক্রিস হোগল। সেই স্মৃতি তুলে ধরেন ক্রিস হোগল ও রহিমা খাতুন।

ক্রিস হোগল জানান, তিনি তখন ভারতের মুম্বাইয়ে অনিল আম্বানির রিলায়েন্স ন্যাচারাল রিসোর্সেস লিমিটেড কোম্পানিতে পেট্রোলিয়াম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ঘটনাচক্রে একদিন মুম্বাইয়ের রাজপথে রহিমার সঙ্গে তার দেখা হয়।

আর রহিমা খাতুন জানান, শৈশবেই তার বাবা আবুল খাঁ ও মা নেছারুন নেছা অভাবের তাড়নায় ভারতে পাড়ি জমান। তাদের সঙ্গী হন রহিমা। পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতে তার মা অন্যের বাড়ি কাজ করতেন। বাবা শ্রম বিক্রি করতেন। ১৩-১৪ বছর বয়সেই কিশোরী রহিমাকে তার বাবা বিয়ে দিয়ে দেন। সেখানে তার তিনটি সন্তান জন্ম নেয়। অভাবের তাড়নায় তার সেই স্বামীও ঘর ছাড়ে। বাধ্য হয়ে জীবিকার তাগিদে রহিমা চলে যান মুম্বাই। কাজের সন্ধানে সেখানেই আশ্রয় নেন পূর্ব পরিচিত এক ব্যক্তির বস্তির খুপড়িতে।

রহিমা জানান, 'হঠাৎই একদিন সন্ধ্যায় মুম্বাইয়ের রাস্তায় পরিচয় হয় ক্রিস হোগল'র সঙ্গে। হোগল একদৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে ছিলেন। হোগলও সামান্য হিন্দ বলতে পারতেন; রহিমাও পারতেন। দুই-একটি বাক্য বিনিময়েই পরিচয়। এরপর দেখা হতো। ছয় মাস পর তারা রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করেন। প্রায় তিন বছর সেখানে সংসার করেন তারা। এরপর কর্মসূত্রে চীনে চলে যান ক্রিস হোগল। তার সঙ্গী হন রহিমা। সেখানে পাঁচ বছর থাকার পর স্বামীকে নিয়ে বাপের ভিটায় ফিরে আসেন রহিমা। ক্রিস হোগলও নাম ধারণ করেন মো. আয়ূব। সেও চার বছর হতে চলল।

মেহেরপুর গ্রামে ফিরে আসার পর রহিমা খাতুনের বাবা আবুল খাঁ মারা যান। বাড়ির উঠানের পাশে তাকে কবর দেওয়া হয়। মোজাইক পাথর দিয়ে প্রায় ১২ লাখ টাকা খরচ করে বাবার কবর বাঁধাই করেছেন তারা। রহিমার মা নেছারুন নেছা এখনো জীবিত। রহিমার প্রথম স্বামীর তিনটি সন্তানও তাদের সঙ্গে থাকে।

ক্রিস হোগল জানান, তার শখ বইপড়া ও মোটরসাইকেল রেস। আমেরিকার মিশিগানে তিনি মোটরসাইকেল রেসিং করতেন। আমেরিকায় তার মা ও ছেলেমেয়ে রয়েছে। সেখানে স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়েছে অনেক আগে।

ক্রিস হোগল এখন মেহেরপুর গ্রামে জমি কিনেছেন। প্রায় ১০-১২ বিঘা জমির মালিক তিনি। নিজেই চাষবাস করছেন। পুরো দস্তুর কৃষক বনে গেছেন তিনি।

ক্রিস হোগল জানান, বর্তমানে একটি সুন্দর পরিবার পেয়ে তারা সুখী। এখানে তিনি বাড়ি তৈরি করছেন। বাড়ির কাজ শেষ হলে আমেরিকা থেকে মা ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে আসবেন।

তিনি আরও উলেস্নখ করেন, তিনি বহু দেশ ঘুরেছেন। বাংলার প্রকৃতিকে ভালোবেসে বাকি জীবনও এখানে কাটাতে চান তিনি। পাশাপাশি এই এলাকার মানুষের কর্মসংস্থান ও আধুনিক চিকিৎসাসেবার জন্য কিছু করতে চান তিনি।



 

Show all comments
  • হুমায়ূন কবির ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৯ পিএম says : 0
    একেই বলে ভালোবাসা !
    Total Reply(0) Reply
  • Monjur Rashed ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪০ পিএম says : 0
    Awesome reporting----- mind-blowing.
    Total Reply(0) Reply
  • মোহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:০১ পিএম says : 0
    প্রকৃতভালবাসার খুবই অভাব
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ