পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্বে এখনও টিকা নিয়ে হাহাকার চলছে। প্রায় শতাধিক দেশ এখনো করোনা টিকা দেয়ার প্রক্রিয়া শুরুই করতে পারেনি। সেখানে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশে জাতীয়ভাবে শুরু হয়েছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকাদান কর্মসূচি। যাকে অনেকেই স্বাস্থ্যখাতের সাফল্য হিসেবে দেখছেন। তবে টিকা নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে সুরক্ষা ওয়েবসাইটে। তাতে দেখা দিচ্ছে নানা জটিলতা। অনেকেই বুঝতে পারছেন না ওটিপি (ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড) কিভাবে কোথায় বসাবেন। বিশেষ করে প্রযুক্তিতে যারা পিছিয়ে তাদের অনেকেই নিবন্ধন জটিলতায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন টিকা থেকে। আবার অনেকে ওয়েবসাইটেই ঢুকতে পারছেন না। আবার কেউ ঢুকতে পারলেও রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না। তাই টিকা নিতে আগ্রহীরা নানা ধরণের হয়রাণির স্বীকার হচ্ছেন। তাই নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করার দাবি জানিয়েছেন অনেক টিকা নিতে আগ্রহী ব্যক্তি। এদিকে করোনার টিকায় বাড়ছে মানুষের আস্থা। রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে এখন সেই চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠেছে। সকাল ৮টা বাজতে না বাজতেই দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে টিকাদান কেন্দ্রে। তবে হাসপাতালগুলোর নির্ধারিত কোটা শেষ হওয়ায় যারা স্পট রেজিস্ট্রেশন করছেন তাদের নিবন্ধন হলেও যেতে হচ্ছে ভিন্ন কেন্দ্রে। এতে কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে বলে জানান টিকা নিতে আসারা। আবার অনেকেই রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না।
সূত্র মতে, টিকা নেয়ার জন্য সুরক্ষা ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল ও বয়স্কদের জন্য স্পট রেজিস্ট্রেশন বা কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করেও টিকা নেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যদিও কেন্দ্রগুলোতে এ সুযোগ নিয়ে অতিরিক্ত ভিড় হচ্ছে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক গত ১১ ফেব্রুয়ারি স্পট রেজিস্ট্রেশন আপাতত বন্ধ করার কথা জানান।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া জটিল হয়ে গেছে। এর যথাযথ প্রচারও নেই। এমনিতেই মানুষ করোনা টিকা নিতে অনীহা প্রকাশ করছে। নিবন্ধন করতে গিয়ে জটিলতায় পড়লে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের গঠিত পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য আবু জামিল ফয়সাল নিজেও অ্যাপে নিবন্ধন করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছিলেন। সাহায্য নিতে হয়েছে খোদ স্বাস্থ্য অধিদফতরের। তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন করতেই অনেক কাঠখড় পোড়াতে হলো। কিন্তু টিকা কবে নিতে পারবো, তা এখনও জানতে পারলাম না। রেজিস্ট্রেশন করার চেষ্টা করেও পারছিলাম না। পাঁচ দিনের চেষ্টায় গত শুক্রবার পেরেছি। তবে আমি নিজে শেষ পর্যন্ত করতে পারিনি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা করে দিয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, রেজিস্ট্রেশন না করে অনেকে টিকা নিতে আসছেন। এতে বিভিন্ন কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেওয়া হবে। ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে রেজিস্ট্রেশন প্রয়োজন পড়ে তখন আবারও জানানো হবে।
তবে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন, যাদের বয়স বেশি বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ, তারা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে নিয়ে টিকাদান কেন্দ্রে গেলে তাদের নিবন্ধন করে টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভাবছে সরকার। স্বাস্থ্যসচিব বলেন, গ্রামের মানুষের আগ্রহ বাড়াতে প্রয়োজনে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেও এসএমএস না পাওয়ায় টিকা নিতে আগ্রহী অনেককেই মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে টিকা নিতে আসা একজন জানান, তিনি গত ৭ ফেব্রুয়ারি মা’র রেজিস্ট্রেশন করা হয়। নিজে এবং স্ত্রী রেজিস্ট্রেশন করেন ৯ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তারা কেউ এসএমএস পাননি। এই জটিলতায় তিনি ঘুরছেন এ ডেস্ক থেকে ওই ডেস্কে।
৬৬ বছরের নিজাম উদ্দীন বিএসএমএমইউতে এসেছেন ইস্কাটন থেকে। জানালেন, গত ৯/১০ ফেব্রুয়ারি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে, ফিরতি বার্তায় ডাউনলোড কমপ্লিট বলছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মোবাইলে এসএমএস আসেনি। নিজাম উদ্দীন বলেন, কী এক ঝামেলাতে পড়লাম, এখানে আসার পর কেউ কোনও জবাব দিতে পারছে না, কেবল এখান থেকে সেখানে ঘুরছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অ্যাডভাইজরি কমিটির সদস্য হয়েও যদি জটিলতায় পড়তে হয়, তবে সাধারণ মানুষের জন্য তা কতটা কঠিন হবে, এমন প্রশ্নে আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এটা আসলেই খুব কঠিন। আমিতো জানতামই না ওটিপি কী জিনিস। যখন নাম ও জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর দেই তখন বলা হলো একটি ওটিপি নম্বর যাবে মোবাইলে। ফোন দিলাম স্বাস্থ্য অধিদফতরে। কর্মকর্তা জানালেন এটা ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড। সেটা দিলাম। পরে আরও একবার দিতে হলো। এই যে ওটিপি দুবার আসতে পারে, এটা বুঝতে পারাও কি সহজ?
পুরান ঢাকার বাসিন্দা শাহজাহান টিকা নিয়েছেন সপ্তাহখানেক আগে। তিনি জানালেন, যেদিন রেজিস্ট্রেশন করেছেন সেদিন রাতেই ফিরতি ম্যাসেজে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল দিনক্ষণ। ঢাকা দক্ষিণ সিটির এ বাসিন্দা আরও জানান, এখন ফিরতি ম্যাসেজ আসতে একটু সময় লাগছে। অন্যদিকে নগরীর আরেক বাসিন্দা মোস্তাক গত বুধবার রেজিস্ট্রেশন করলেও এখন পর্যন্ত ম্যাসেজ পাননি বলে জানিয়েছেন। এই অবস্থা শুধু মোস্তাকেরই নয়, বরং বেশিরভাগ টিকা নিতে আগ্রহী মানুষের।
৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়েছে। এজন্য প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন কম কেন জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, প্রাথমিক অবস্থায় গোছগাছ করে প্রক্রিয়াটাকে বাগে আনতে একটু সময় লাগে। একসঙ্গে অনেক কাজ হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন, টিকা পৌঁছে দেয়া, প্রশিক্ষণ, সবই চলছে। ধীরে ধীরে সবকিছুই গতি পাবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, প্রচারের জন্য বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে। কিছু প্রচার শুরু হয়েছে।
তবে এ কাজ কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একার নয় মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, এ কাজে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হয়। প্রচারও লাগবে। অর্থ ছাড়ের কাজও চলছে। এটা বড় এক কর্মযজ্ঞ। অব্যবস্থাপনা ঠেকাতে একটু সময় লাগবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডিরেক্টর প্রফেসর ডা. মো. নাজমুল ইসলাম আলম বলেন, রাজধানী ঢাকার ৬৫টি কেন্দ্রে ২০৬টি দল টিকা দেয়ার কাজ করবে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স মিলিয়ে ৯৫৯টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব কেন্দ্রে দুই হাজার ১৯৬টি দল টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা করবে। এদের মধ্যে দুজন স্বাস্থ্যকর্মী থাকবেন ভ্যাকসিনেটর হিসেবে। তারা ভ্যাকসিন দেবেন। বাকি দুজন স্বেচ্ছাসেবক।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া ঢেলে সাজানো, প্রচার বাড়ানো এবং টিকাদান কেন্দ্র ব্যবস্থাপনা- এ তিন বিষয়ে দ্রুত সমাধানে না পৌঁছালে করোনা টিকা কার্যক্রম খুব একটা সুফল বয়ে আনবে না বলে মন্তব্য করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও স্বাস্থ্য অধিফতরের সাবেক পরিচালক প্রফেসর ডা. বেনজির আহমেদ। তিনি বলেন, ফলাও করে প্রচার করা হলো অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন হবে। অথচ নিবন্ধনের জন্য বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আরও বাস্তবসম্মত উপায় বেছে নেয়া দরকার ছিল। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সহকারী, সিএসসিপি, পরিবার কল্যাণ সহকারী, এনজিওকর্মীরা রয়েছেন। তাদেরকে নিবন্ধন কাজে যুক্ত করা যেত। কিন্তু তা না করে স্বাস্থ্য অধিদফতর তড়িঘড়ি কেন অ্যাপের দিকে ঝুঁকলো সেটাই বড় প্রশ্ন।
তিনি জানান, স্বাস্থ্যকর্মীদের যুক্ত করতে হবে প্রচারের কাজে। তারা উঠোন-বৈঠক করবেন, যোগাযোগ করবেন। টিকা নিয়ে মানুষের সংশয়-সমস্যা কাটাতে কাজ করবেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দেশে এখন পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন এগারো লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। অধিদফতর জানায়, গতকাল সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত টিকা নিয়েছেন দুই লাখ ৬৬ হাজার ৬৭৮ জন।
টিকা গ্রহীতাদের ভোগান্তি সর্ম্পকে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন বলেন, এই কেন্দ্রের জন্য নিবন্ধন হয়েছে প্রায় ২৭ হাজার। তাদেরকে একদিনে টিকা দেয়া যাবে না-এটা বুঝতে হবে।
তবে রেজিস্ট্রেশন যেহেতু হয়েছে, সেখানে টিকা অবশ্যই দেয়া হবে। হয়তো আজ হচ্ছে না, কাল হবে, নয়তো পরশু, অথবা তার পরের দিন। ডেট পাননি মানেই যে কেউ ডেট পাবেন না-বিষয়টি তা নয়।
কিন্তু অনেক বৃদ্ধ মানুষ এসে ফেরত যাচ্ছেন, ভোগান্তিতে পড়ছেন জানালে তিনি বলেন, প্রবীণ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিশেষ কনসিডার করা হচ্ছে। যতটুকু করা সম্ভব-তাদেরকে তালিকার প্রথমদিকে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে।
ঢাকা মহানগরীর ৪৬টি হাসপাতালে গতকাল টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৪৮৪ জন টিকা নিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে জাতীয়ভাবে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়া শুরু হয়। অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি কোভিশিল্ড ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে বাংলাদেশ কিনে নেয়। গত ২৫ জানুায়ারি ৫০ লাখ টিকা আসে দেশে, তার আগে ২১ জানুয়ারি দেশে আসে ভারত সরকারের উপহার দেয়া ২০ লাখ টিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।