Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

টিকার দ্বিতীয় ডোজ আট সপ্তাহ পর

ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১১ লাখ, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৪৫৫ জনের টিকার দ্বিতীয় চালান আসছে সোমবার

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাসের টিকা নিয়ে ভাল আছেন, সুস্থ্য ও স্বাভাবিক আছেন ১১ লাখের বেশি টিকা গ্রহীতা। টিকা নেয়ার পর তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখাগেছে এমন লোকের সংখ্যাও খুবই কম। বেশিরভাগ গ্রহীতা জানিয়েছেন তাদের ভেতর মৃদু লক্ষণ প্রকাশ পেয়েছে। সাধারণত সব ধরনের টিকা নেয়ার পর যেসব লক্ষণ দেখা দেয়। এই টিকা নেয়ার ক্ষেত্রে গ্রামের তুলনায় শহরের মানুষ এগিয়ে; আবার নারীর তুলনায় পুরুষের টিকা নেয়ার হার দ্বিগুনের বেশি। এদিকে কোভিড-১৯ টিকা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে বলা হয়েছিল টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার ৪ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সেটি পরিবর্তন করে ৮ সপ্তাহ করা হয়েছে। এছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় চালান আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি আসবে বলেও জানা গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, যে কোনো টিকার সামান্য পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার পরও ৪৫৫ জনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিন। এরপর ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় প্রায় ৫ শতাধিক মানুষের ওপর পরীক্ষামূলক টিকা প্রয়োগ (ড্রাইরান) করা হয়। ড্রাইরানের ফলাফল সন্তোষজনক হওয়া গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশজুড়ে গণটিকাদান শুরু হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী সোমবার পর্যন্ত সারাদেশে ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন টিকা নিয়েছেন।

গত ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম টিকা নিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স রুনু ভেনোরিকা কস্তা। টিকা নেয়ার পর থেকে তিনি স্বাভাবিক ও সুস্থ্য রয়েছেন। নিয়মিতভাবে তার দায়িত্ব পালন করছেন। ওইদিন টিকা নেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি জানান, টিকা নেয়ার পরে তিনি স্বাভাবিক ভাবেই তার দাফতরিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কোন সমস্যা হচ্ছে না। পরবর্তীতে ৭ ফেব্রয়ারি গণটিকা দানের কর্মসূচির উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম, বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ সভাপতি প্রফেসর ডা. ইকবাল আর্সলান, মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম এ আজিজসহ আরও অনেকে। তারা প্রত্যেকই সুস্থ ও স্বাভাবিক আছেন বলে জানিয়েছেন। তারা জানান, টিকা নেয়ার স্থানে সামান্য ব্যথা ছাড়া আর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। টিকা নেয়ার পর স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া, প্রাক্তন প্রফেসর ডা. নজরুল ইসলাম। তারা বলেন, এই টিকা পরিমানে দিতে খুবই সামান্য, মাত্র শুন্য দশমিক ৫ মিলি.। ফলে টিকা দেয়ার স্থানে যাদের ব্যথা অনুভুত হয়েছে সেটিও সামান্যই।

টিকা নিয়ে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. শেখ দাউদ আদনান, শ্যামলী টিবি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান। তারা সবাই নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে টিকা নিয়েছেন। টিকাস্থানে ব্যথা ছাড়া আরও তেমন কোন প্রতিক্রিয়া তারা অনুভব করেননি বলে নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া তারা স্বাভাবিক ভাবেই দায়িত্ব পালন করছেন।

টিকা নেয়ার সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়ালো: এদিকে গতকাল সোমবার সন্ধা পর্যন্ত সারাদেশে টিকা নিয়েছেন ১১ লাখ ৩২ হাজার ৭১১ জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪ জন এবং নারী ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৮৭ জন। টিকা নেয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৫৫ জনের মধ্যে মৃদু লক্ষণ দেখা গিয়েছে। এই দিনে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ২৬ হাজার ৬৭৮ জন এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ৪৭ হাজার ১৫৫ জন এবং নারী ৪৭ হাজার ২৬ জন। এই দিনে ঢাকায় টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ৭১৪ জন এবং নারী ৯ হাজার ৩৪১ জন। এ পর্যন্ত ঢাকায় টিকা নিয়েছেন এক লাখ ৪৭ হাজার ৫০২ জন। যারমধ্যে পরুষ এক লাখ ৪৭৬ জন এবং নারী ৪৭ হাজার ২৬ জন।

টিকা নেয়া এগিয়ে রয়েছেন দেশের পুরুষরা। সারাদেশে যেখানে ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৬২৪ জন টিকা নিয়েছেন; সেখানে নারীদের মধ্যে নিয়েছেন মাত্র ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৭ জন। প্রান্তি এলাকার তুলনায় শহর এলাকায় টিকা নেয়ার হার বেশি। আবার ছোট শহরের তুলনায় বড় শহরগুলোতে এই হার বেশি দেখা যাচ্ছে। যেখানে ঢাকায় গত ৮দিনে টিকা নিয়েছেন ২৯ হাজার ৫৫ জন, সেখানে শরীয়তপুরে নিয়েছেন মাত্র এক জারা ৮৭ জন। এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম টিকা দেয়া হয়েছে বান্দরবানে। শুরু থেকে এ পর্যন্ত সেখানে টিকা নিয়েছেন মাত্র ৩৫৬ জন।

দ্বিতীয় ডোজ ৮ সপ্তাহ পর: এদিকে কোভিড-১৯ টিকা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর আগে বলা হয়েছিল টিকার প্রথম ডোজ নেয়ার ৪ সপ্তাহ পরে দ্বিতীয় ডোজ নিতে হবে। কিন্তু বর্তমানে সেটি পরিবর্তন করে ৮ সপ্তাহ করা হয়েছে। যারা ইতিমধ্যে টিকা নিয়েছেন এবং এক মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার তারিখ দেয়া হয়েছে, সেই তারিখও বদলে দেওয়া হবে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এবিএম খুরশীদ আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির পরামর্শ অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেয়ার সময়ে এই পরিবর্তন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে যারা টিকা নিয়েছেন, তাদের দ্বিতীয় ডোজের জন্য এক মাস পরের তারিখ দেওয়া হয়েছে। সেই তারিখও বদলে দেয়া হবে বলে মহাপরিচালক জানিয়েছেন। আমাদের পরামর্শক কমিটি, ওয়ার্ল্ড ভ্যাকসিনেশন কমিটি, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন- সবাই মিলে পরামর্শ দিয়েছে যে, এটা আট সপ্তাহ পরে হলে ভালো হয়। এ কারণে আমরা দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার সময় পরিবর্তন করেছি।

বাংলাদেশে দেয়া হচ্ছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা। প্রত্যেককে এই টিকার দুটি ডোজ নেয়ার বিধি রয়েছে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা শুরুতে জানিয়েছিল, এ টিকার দুই ডোজের মধ্যে ব্যবধান হবে চার সপ্তাহ। কিন্তু পরে বলা হয়, এই ব্যবধান বাড়লে টিকার কার্যকারিতাও বাড়ে। সে অনুযায়ী বাংলাদেশের টিকাদান পরিকল্পনা সাজানো হয়। বলা হয়, প্রথম চালানে পাওয়া সব টিকা দিয়ে দেয়া হবে, প্রথম মাসে টিকা পাবে ৬০ লাখ মানুষ। পরের চালানের টিকা পেলে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। তকে ফেব্রæয়ারিতে সেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়, হাতে থাকা ৭০ লাখ ডোজের সব প্রথম মাসে না দিয়ে অর্ধেক সংরক্ষণ করা হবে। অর্থাৎ প্রথম মাসে ৩৫ লাখ লোক টিকা পাবে। পরের মাসে সংরক্ষণ করা টিকা থেকে তাদের দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। এতে দ্বিতীয় চালান পেতে দেরি হলেও প্রথম ডোজ পাওয়া ব্যক্তিদের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া নিয়ে কোনো অনিশ্চিয়তা থাকবে না। কিন্তু জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি এখন টিকার কার্যকারিতার সঙ্গে দুই ডোজের সময়ের পার্থক্যের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ায় পরিকল্পনায় আবার পরিবর্তন আনা হল।

এ বিষয়ে মহাপরিচালক প্রফেসর খুরশীদ আলম বলেন, এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, এটা নতুন টিকা, এ বিষয়ে কারও কোনো অভিজ্ঞতা নেই। নানা ধরনের পরিবর্তন এতে হবে। সুস্পষ্টভাবে কোনোকিছু বলা যাবে না। তিনি বলেন, যাদের এক মাস পরে টিকা নেয়ার তারিখ দেয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে আমরা পরবর্তী সময় এসএমএসের মাধ্যমে জানিয়ে দেয়া হবে। ইতিমধ্যে এমআইএসকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
টিকার দ্বিতীয় চালান আসছে ২২ ফেব্রæয়ারি: ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে কোভিড-১৯ টিকার দ্বিতীয় চালান আগামী ২২ ফেব্রæয়ারি আসবে। এমনটি জানিয়েছেন বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান। গতকাল ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে করোনাভাইরাসের টিকা নেয়ার পর গণমাধ্যমে একথা জানান তিনি।

বাংলাদেশ ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে ৩ কোটি ডোজ টিকা কিনছে। এই টিকা আনছে বাংলাদেশে সেরামের ‘এক্সক্লুসিভ ডিস্ট্রিবিউটর’ বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস। গত ২৫ জানুয়ারি প্রথম চালানে ৫০ লাখ টিকা আসে বাংলাদেশে। তিনি বলেন, দ্বিতীয় চালানে আনা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ লাখ ডোজ টিকা। দ্বিতীয় চালান এই মাসেই আসবে। ২১ থেকে ২৫ তারিখের কথা বলেছিলাম। ২২ তারিখেই চলে আসবে আশা করছি। প্রত্যেক মাসে তাই হবে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতি মাসে ৫০ লাখ ডোজ টিকা সেরামের পাঠানোর কথা। এবার কম আসায় সঙ্কট সৃষ্টি হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন একটু কম আসবে। সঠিক পরিমাণটা বলতে পারছি না। তবে ২০-৩০ লাখের মতো আসবে। আমাদের চাহিদার উপর নির্ভর করবে। আমাদের কাছে ইতিমধ্যে ৬৫ লাখ আছে। টিকা নিয়ে ক্রাইসিস হওয়ার কোনো সুযোগ নাই।

নাজমুল বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশে যেখানে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে সেখানে বাংলাদেশ টিকা দিতে পারছে। আমি যে টিকা দিতে পারছি, এতে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি প্রধানমন্ত্রীকে। তার দূরদর্শিতা ছাড়া এটা সম্ভব ছিল না। সরকারের জন্য আনার পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও সেরাম থেকে টিকা আনার কথা রয়েছে বেক্সিমকোর। সে বিষয়ে জানতে চাইলে নাজমুল হাসান বলেন, সরকারিভাবেই যেহেতু পর্যাপ্ত টিকা আসছে, তাই এখনই বেসরকারিভাবে টিকা আনার কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ