পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনার রেশ কাটিয়ে আবারো পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠছে সুন্দরবন। শত শত বৃক্ষরাজি ও সাগর-নদীর সংগমস্থলে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখার পাশাপাশি সুন্দরবনের জীববৈচিত্র ও প্রতিদিন কমপক্ষে ছয়বার সুন্দরবনের রূপ পরিবর্তনের মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিনই আসছেন ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরা। দৈনন্দিন নাগরিক ব্যস্ততাকে দূরে রেখে পরিবারের সবাইকে নিয়ে উপভোগ করছেন বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অপার নৈস্বর্গিক সৌন্দর্য্য। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সুবিধা দিতে বনবিভাগ ও বেসরকারি পর্যায়ে স্থানীয় প্রায় ১৮টি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
সুন্দরবন ট্যুর অপারেটরদের সংগঠন ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন এর কর্মকর্তা কচি জমাদ্দার বলেন, করোনার কারণে সুন্দরবনে পর্যটকের সংখ্যা খুবই কমে গিয়েছিল। তবে এখন অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে। প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০টি পর্যটকবাহী জাহাজ সুন্দরবনে প্রবেশ করছে। বেসরকারি ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন লাইট এর সত্ত্বাধিকারী আহসান হাবিব জানান, সুন্দরবনে দর্শনীয় স্থানের মধ্যে রয়েছে- শরণখোলার টাইগার পয়েন্ট হিসেবে পরিচিত কটকা, কচিখালীর অভয়ারণ্যকেন্দ্র, করমজল বন্যপ্রাণি ও কুমির প্রজননকেন্দ্র, কলাগাছিয়ায় ইকোট্যুরিজম সেন্টার, হিরণপয়েন্ট খ্যাত নীলকমল অভয়ারণ্য, দুবলারচর, মানিকখালী, আন্দারমানিক ও দোবেকী এলাকা। পর্যটকদের জন্য সুন্দরবন ভ্রমণের বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে। খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার প্রায় ১৮টি পয়েন্ট দিয়ে সরকার নির্ধারিত রাজস্ব প্রদান করে সুন্দরবনে বৈধভাবে প্রবেশ করা যায়। সারাবছর সুন্দরবনে পর্যটকদের আনাগোনা থাকলেও নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণের আদর্শ সময়। কারণ এসময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা থাকে না।
বেঙ্গল ট্যুর অপারেটরস প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক গোলাম রহমান মুশফিক জানান, ট্যুর অপারেটররা পর্যকদের জন্য প্যাকেজ আকারে সুন্দরবন ভ্রমণের ব্যবস্থা করে থাকেন। সাধারণত প্যাকেজগুলো দুই রাত তিন দিনের হয়ে থাকে। বিলাসবহুল জাহাজে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা এবং অপেক্ষাকৃত কম সুযোগ সুবিধা সম্বলিত ছোট জাহাজে জন প্রতি ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা নেয়া হয়ে থাকে। প্যাকেজ ট্যুরের বিষয়ে মুশফিক আরো জানান, দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটকরা খুলনা এসে পৌঁছানোর পর ভোরে খুলনার ৫নং লঞ্চঘাট অথবা রূপসা ঘাট থেকে তাদের ট্রলারযোগে মাঝ নদীতে অবস্থান করা জাহাজে নিয়ে যাওয়া হয়। মোংলা বন্দরের আশপাশের দু’একটি স্থান থেকেও কয়েকটি জাহাজ সুন্দরবনে পর্যটকদের নিয়ে যায়। প্রতি প্যাকেজের আওতায় একেকটি ছোট জাহাজে ৩০ থেকে ৫০ জন এবং অপেক্ষাকৃত বড় জাহাজে ৮০ থেকে ১০০ জন বহন করা হয়।
তিনি আরো জানান, সুন্দরবন ভ্রমণে বনবিভাগ সশস্ত্র নিরাপত্তা রক্ষী দিয়ে থাকে। সুন্দরবন ভ্রমণে ট্যুর অপারেটররা পর্যটকদের সাথে তাদের নিজস্ব গাইড দিয়ে থাকে। পর্যটকরা সুন্দরবনে দুবলার চরে শুঁটকি পল্লী, করমজলে কুমির প্রজনন কেন্দ্র ও মিনি চিড়িয়াখানা, হিরণ পয়েন্টে বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত ও অভয়ারণ্য, কটকা ও কচিখালিতে সন্ধ্যায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে থাকেন।
ট্যুর অপারেটর প্রতিষ্ঠান ‘সুন্দরবন লাইট’ এর ব্যবস্থাপক শেখ সুজন জানান, পর্যটকরা দুই রাত মাঝনদীতে জাহাজে রাত্রি যাপন করে থাকেন। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যটকরা সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করেন। জাহাজগুলোর ক্যাবিনের মান উন্নত হোটেল কক্ষের মতোই। পর্যটকদের সারাদিনে ৫ বার নাস্তার পাশাপাশি দুপুরে ও রাতে বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, সবজি, গোশতসহ মুখরোচক খাবার পরিবেশন করা হয়। বাড়তি বিনোদনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কিছু কিছু ট্যুর অপারেটর।
রংপুর থেকে আসা পর্যটক সুলতান মাহমুদ কমল জানান, এখানে না আসলে জানতে পারতাম না সুন্দরবন এতোটাই সুন্দর। সুন্দরী, গোলপাতা ও আর গড়ানের ঘন বন দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। রাতে পাখি ও বনমোরগের ডাক মুগ্ধ করেছে। টেলিটক ছাড়া অন্য কোনো মোবাইল নেটওয়ার্ক বনের ভেতরে পাওয়া যায় না উল্লেখ করে তিনি এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানান।
সুন্দরবন বনবিভাগ খুলনার বন সংরক্ষক মো. মঈনুদ্দিন খান জানান, ২০২০ এর ১৯ মার্চ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত করোনার কারণে ২২৩ দিন সুন্দরবন লকডাউন করা হয়েছিল। প্রতি বছর সুন্দরবনে দুই থেকে আড়াই লাখ পর্যটক এসে থাকেন। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সুন্দরবনে পর্যটকদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। পর্যটকরা চাইলে অনুমতি সাপেক্ষে সুন্দরবনে বনবিভাগ ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পাইলট রেস্টহাউজে রাত্রিযাপন করতে পারেন।
পর্যটক আকৃষ্ট করতে সরকার ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪টি ইকোপার্ক স্থাপনসহ বন উন্নয়ন প্রকল্প অচিরেই বাস্তবায়ন করা হবে। তিনি আরো জানান, সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণ, বন্যশূকর, বানর, কুমির, ডলফিন, কচ্ছপ, উদবিড়াল, মেছোবিড়াল ও বন বিড়ালসহ রয়েছে প্রায় ৪২৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণি, ৩০০ প্রজাতির উদ্ভিদ। সেইসাথে সুন্দরবনজুড়ে জালের মতো জড়িয়ে থাকা ৪৫০টি ছোট বড় নদী-খাল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।