Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে কোনো সিন্ডিকেট মেনে নেয়া হবে না

সংবাদ সম্মেলনে-বায়রা সিন্ডিকেট নির্মূল ঐক্যজোট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কোনো সিন্ডিকেট মেনে নেয়া হবে না। নেপালসহ অন্যান্য সোর্সকান্ট্রির ন্যায় সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিকে কর্মী প্রেরণের সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। আগামীকালের দু’দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের ভার্চয়াল বৈঠকের এজেন্ডা থেকে সিন্ডিকেটসহ বিতর্কিত এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতি বাতিল করতে হবে। গতকাল রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি সাগর-রুনি হলে বায়রা সিন্ডিকেট ঐক্যজোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের আহবায়ক ও বায়রার সাবেক মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী এসব কথা বলেন। তিনি সিন্ডিকেট বিহীন শমবাজার চালুর দাবিতে আজ সোমবার সকাল ১১টায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি ও মন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করার ঘোষণা দেন।

সংবাদ সম্মেরনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বায়রার সাবেক সভাপতি আলহাজ আবুল বাসার, সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি সমন্বয়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহাদাত হোসেন, সাবেক সহসভাপতি আবুল বারাকাত ভূঁইয়া, সাবেক অর্থ সচিব ফখরুল ইসলাম, রিক্রুটিং এজেন্সিজ ঐক্য পরিষদের সভাপতি এম টিপু সুলতান, মহাসচিব আরিফুর রহমান, মোশাররফ হোসেন,মুজিবুর রহমান, লিমা আক্তার, মো.আওলাদ হোসেন ও রেহানা পাভীন।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকারের দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রণালয়ের নেগোসিয়েশনের ব্যর্থতার কথাও উল্লেখ করেন সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে বিকর্তিত বিষয়গুলো নিয়ে নেগোসিয়েশন করতে পারেনি। এটা সরকারের ব্যর্থতা। কারণ মালয়েশিয়াতে এখন বাংলাশী শ্রমিকের প্রচুর চাহিদা। তারা টাকা দিয়ে কর্মী নিতে চায়। সেখানে আমরা কেন উচ্চ খরচে কর্মী পাঠাবো? মালয়েশিয়া সরকারকে একটি কুচক্রিমহল ভুল বুঝিয়ে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশ সরকার মালয়েশিয়ার সাথে নেগোসিয়েশন করতে পারছে না। কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট ও এফডব্লিউসিএমএস পদ্ধতি গ্রহণ করলে সেটা বাংলাদেশের জন্য আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত হবে বলেও মনে করছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, আগামীকাল মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের শ্রমবাজার নিয়ে দুই সরকারের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের এজেন্ডা সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্ট ইতোমধ্যে সোসাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সরকারের প্রতিশ্রুতি স্বল্প খরচে বৈধভাবে, সকল বৈধ রিক্রটিং এজেন্সির অংশগ্রহণ ও একটি স্বচ্ছ ও সর্বজন গৃহিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বাংলাদেশিদের জন্য উন্মুক্ত হোক এটাই আমাদের কাম্য কিন্তু এই এজেন্ডায় উল্লেখিত ১ ও ২ নম্বর বিষয়সহ আলোচ্যসূচীতে কিছু জরুরি বিষয়ের অনুপস্থিতি আমাদের হতবাক করেছে।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১২০০ নবায়ন করা বৈধ এজেন্সিদের বঞ্চিত করে শুধুমাত্র ২৫টি লাইসেন্স নিয়ে নতুন করে সিন্ডিকেট গঠনের নীল নকশার অশুভ প্রক্রিয়া চলছে। যার ইঙ্গিত এজেন্ডার এক নম্বর বিষয়টিতে পাওয়া যায়। যেটি বাস্তবায়িত হলে দেশের ৯৯ভাগ রিক্রটিং এজেন্সি বঞ্চিত হবে এবং দেশটির শ্রমবাজার আবার পূর্বের ন্যায় অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। আমরা মালয়েশিয়া শ্রমবাজার নিয়ে কোন সিন্ডিকেট চাইনা। স্বচ্ছ ও সুনির্দিষ্ট নিয়মে স্বল্প খরচে সকল এজেন্সির কাজের সুযোগ নিশ্চিত করে শ্রমিক প্রেরন করতে হবে।
এই আত্মঘাতি সিন্ধান্ত হবে এই সেক্টেরের বিপক্ষে, বায়রার ১২০০ সদস্যের বিপক্ষে, শ্রমিকের স্বার্থের বিপক্ষে। যেখানে নেপাল ১৬০০ রিক্রটিং এজেন্সিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে স্বল্প খরচে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণের মডেল স্থাপন করেছে সেখানে আমরা কেন ১২০০ এজেন্সিকে বঞ্চিত করে একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দিতে তৎপর। আমরা জোরদাবি জানাচ্ছি মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সকল বৈধ এজেন্সির জন্য উন্মুক্ত করা হোক। প্রয়োজনে নেপালকে অনুসরন করা হোক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিতর্কিত ফরেন ওয়ার্কার্স সেন্ট্রালাইজড মেনেজমেন্ট (এফডব্লিউসিএমএস) সিস্টেম আবার কেন জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ মিটিংএর এজেন্ডায়। এফডব্লিউসিএমএস একটি মেয়াদোত্তীর্ন, বাতিল, বিতর্কিত, দেশি ও আন্তর্জাতিক ভাবে সমালোচিত ও দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একটি সিস্টেম যার হোতা গতবারের সিন্ডিকেটের মাস্টারমাইন্ড এবং মাহাথির সরকার কর্তৃক কালোতালিকাভুক্ত এসপিপিএ ও বেষ্টিনেটের মালিক দাতো শ্রী আমিন। এই এফডব্লিউসিএমএসকে ব্যবহার করে দাতো শ্রী আমিন বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে যা দেশি ও বিদেশী বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার হয়েছে।
শূন্য খরচে অভিবাসন এর মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে দাতো শ্রী আমিনের বেষ্টিনেট কোম্পানির এফডব্লিউসিএমএস আর এসপিপিএ এর ফাঁদে পড়ে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা খুইয়ে বিদেশ পাড়ি দিতে হয়েছিল অসহায় শ্রমিকদের। সুতরাং ঐ একই ব্যক্তির একই সিস্টেমকে কোনভাবেই আর বিশ্বাস করা যায় না।
এফডব্লিউসিএমএস একটি ব্যর্থ সিস্টেম যার কারণে গতবার দেশে বিদেশে সরকারের ভাব-মর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে। এফডব্লিউসিএমএস সিস্টেমের কৌশলে এবং দাতো শ্রী আমিনের কারসাজিতে উচ্চ অভিবাসন গুনতে হয়েছে অভিবাসন প্রত্যাশী শ্রমিকদের। এমনকি মালয়েশিয়ার অনেক নিয়োগকর্তা বিনা খরচে শ্রমিক নিতে চেয়েও এফডব্লিউসিএমএস সিস্টেমের কারসাজির কারণে তা সম্ভব হয়নি। যেমন, প্যানাসোনিক, সনি, এলজি ইত্যাদি
উল্লেখিত, এই কালোতালিকাভুক্ত বেষ্টিনেট, দাতো শ্রী আমিন এবং এফডব্লিউসিএমএস এর দুর্নীতির বিষয় এর মামলা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। মালয়েশিয়া অভিবাসন সেক্টরে কোন প্রকার সিন্ডিকেট করা যাবেনা এই মর্মে হাইকোর্ট রায়ও প্রদান করেছে। যে সিস্টেমটি নিয়ে মালয়েশিয়ার মাহাথির সরকারের ও সর্বমহলের নিন্দা ও পরিবর্তনের দাবি রয়েছে সেখানে পর্যাপ্ত সময় পেয়েও মন্ত্রণালয় কেন সময় উপযোগি ব্যবস্থা নিলনা সেই প্রশ্ন থেকে যায়। সরকার সিন্ডিকেটকে সমর্থন করছে কী না এমন প্রশ্নের জবাবে আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, ডেফিনেটলি। সরকারই সিন্ডিকেটকে উৎসাহিত করছে।
তিনি আরও বলেন, এফডব্লিউসিএমএস তাদের ওয়েবসাইটে ২৬টি মেডিকেল সেন্টারের তালিকা প্রকাশ পাচ্ছে। কিসের ভিত্তিতে এফডব্লিউসিএমএস এই তালিকা করলো? কে অনুমোদন দিল? এই মেডিকেল সেন্টারগুলো কাদের মদদপুষ্ট? এই সমস্ত বিষয় নিয়ে শ্রমবাজারের অসন্তোষ ও অস্তিরতা দেখা দিয়েছে। জানা গেছে এই মেডিকেল সেন্টারকে কেন্দ্র করে বিপুল অংকের টাকা বিভিন্ন মহলে লেনদেন হয়েছে এবং হচ্ছে । এক প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, দেশ এবং শ্রমিকদের স্বার্থেই এই সিন্ডিকেট চক্রের বিড়ম্বনা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মালয়েশিয়া

৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ