বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছিলো আরও আগেই এবার কেবল অভিযোগ নয়, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদকের হুমকি সম্বলিত ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। ভিডিওতে দেখা যায়, মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম ভোটারদের প্রকাশ্য একাধিক নির্বাচনী সভায় বলছেন, যাদের মনে ধানের শীষের সঙ্গে আছেন তারা ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন। তাদের ভোটকেন্দ্রে আসার কোনো প্রায়োজন নাই। তাহলে ভোটকেন্দ্রে যাবে শুধু কে? নৌকা, নৌকা আর নৌকা।
প্রশাসনের নির্লিপ্ততা ও প্রশ্রয়ে এ ধরনের হুমকি ধামকির অভিযোগ বিএনপির পক্ষ থেকে আগেই সাংবাদিক সম্মেলন করে করা হয়েছিলো, তবে তা ছিলো সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অরুনাংশু দত্ত টিটোসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। এবার তা ভিডিওসহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে, যা নির্বাচনের পরিবেশ বিঘিœত করছে। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন কেবল বিরোধী দলেরই নয়, আওয়ামী লীগের একাংশের মধ্যেও এ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে। নির্বাচনী মাঠ ঘুরে দেখা যাচ্ছে, ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচনে তারা প্রকাশ্য সভায় হুমকি দিচ্ছেন নৌকায় ভোট না দিলে এলাকা ছাড়তে বলছেন প্রকাশ্যে নৌকায় ভোট দেওয়ার কথা বলছেন।
সর্বশেষ ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচনী প্রচারণায় প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচিত হয়েছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। গত বৃহস্পতিবার শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডে এক নির্বাচনী সভায় মাহমুদা বেগম বলেন, আজ ঠাকুরগাঁও পৌরসভায় ভোট। ঠাকুরগাঁওয়ে নৌকার প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য। এ কারণে তার পক্ষে প্রচারণা চালাতে মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাফিয়া খাতুন ও সম্পাদক মাহমুদা কয়েক দিন ধরে ঠাকুরগাঁওয়ে রয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার আরেক পথসভায় মাহমুদা বলেন, সুস্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান আপনাদের চেহারা এলাকায় দেখতে চাই না। কোথায় যাবেন আমি জানি না। তবে ঠাকুরগাঁওয়ে থাকতে পারবেন না। যারা নৌকায় ভোট না দেবেন তারা ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেবেন।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী বলেন, একদম পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, খাইদাই আমি জব্বারের, গান সালামেরটা গাইব না। কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না। ধান বলে কোনো কথা নাই। ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই। আমরা শুধু দেখতে চাই নৌকা আর নৌকা। যদি ধান থাকে, তবে ধরে নেব এখানে আওয়ামী লীগ নাই।’
বক্তব্যের বিষয়ে মাহমুদা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার হুমকিসম্বলিত এসব সভায় যেসব নেতৃবৃন্দকে দেখা গেছে তাদের অন্যতম জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দ্বীপক কুমার রায়, তিনি এ প্রসঙ্গে টেলিফোনে বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে কোনো কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসলে বা সভা করলে দলীয় প্রটোকল অনুযায়ী জেলা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমাকে থাকতে হয়েছে। কিন্তু আমি তো ও ধরনের বক্তব্য দেইনি, কেউ বলতে পারবে না। তার ৬ নং ওয়ার্ড এ নির্বাচনী পরিবেশ ঠিক আছে দাবি করে তিনি জানান, এখানে তো স্থানীয় বিএনপি নেতাদের সাথে আমাদের কোনো সংঘাত ঘটেনি, সবার পোস্টার আছে, সবার অফিস চলছে, গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভোট হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, পৌরসভায় ধানের শীষের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাহমুদা আপার বক্তব্য এডিট করে বিএনপির লোকজন ছড়িয়ে দিতে পারে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন না।
আর ধানের শীষের প্রার্থী শরিফুল ইসলামের অভিযোগ, মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আওয়ামী লীগের নেতাদের এমন প্রকাশ্য বক্তব্যের পর ধানের শীষের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। সাধারণ ভোটাররাও এতে শঙ্কিত। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার ভিডিওর সিডিসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানানো হচ্ছে।
বিএনপির জেলা সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর মেয়র মির্জা ফয়সাল আমীনের অভিযোগ, অন্যায় করছে শাসক দল আর যুবদল সভাপতি মহিবুল্ল্যা আবু নূরসহ বিএনপির নির্বাচনী কর্মী নেতা সমর্থক পোলিং এজেন্টদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার ঐতিহ্যবাহী গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক মূল্যবোধ আজ হুমকির মুখে।
তবে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন বলেন, এ ধরনের কোনো সিডি আমরা পাইনি তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব বক্তব্য আমি শুনেছি যা ঠিক হলে অনেক গর্হিত কাজ, তদন্ত করে এসব ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সেই মাহমুদা বেগম কোথায় অবস্থান করছেন, সে ব্যাপারে সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আমি খোঁজ নিতে বলেছি এই মুহূর্ত পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। তিনি বলেন, বিএনপি প্রার্থীর পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তদন্ত করে কিছু ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া গেলে, তাকে মৌখিকভাবে সতর্ক করা হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।