পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জনের করোনার টিকা গ্রহণ : বিশৃঙ্খলা এড়াতে অন স্পট নিবন্ধনের সিদ্ধান্ত স্থগিত
আমেরিকা, ইউরোপ, কানাডা, চীন, ইতালি, ভারতের মতো বাংলাদেশেও করোনাভাইরাসের গণটিকা কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। রাজধানী ঢাকার ৫০টিসহ সারা দেশের ৯৫৫টি হাসপাতাল, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৯১০টি বুথে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। গণটিকা কার্যক্রমের প্রথম দিন ৭ ফেব্রুয়ারি গ্রহণকারীর সংখ্যা কম দেখা গেলেও ক্রমান্বয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে ভিআইপি তথা মন্ত্রী, এমপি, বিচারপতি, সচিব, জনপ্রতিনিধি ও বিশিষ্টজনেরা টিকা গ্রহণ করার পর সাধারণ মানুষ স্বর্তঃস্ফূর্তভাবে টিকা নিতে কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত থেকে টিকা আমদানির প্রচারণা থাকায় প্রথমে মানুষের মধ্যে টিকার মান নিয়ে সন্দেহ ও স্বংশয় ছিল। তাছাড়া প্রথম দিকে টিকা নিয়ে প্রত্যাশিত প্রচারণা হয়নি। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধনের পর সারা দেশে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ‘টিকা প্রচারণা’ জোরদার করে। গণমাধ্যমে ব্যপক প্রচারণায় সাধারণ মানুষের মধ্যে টিকা গ্রহণে সচেতনতা আসে। তবে মন্ত্রী-এমপি তথা পরিচিত ভিআইপিরা টিকা গ্রহণ করায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রবল আগ্রহের সৃষ্টি হয়। ফলে টিকা গ্রহণের ভিড় এড়াতে সারা দেশে গণটিকাদান শুরুর ৫ম দিনের মাথায় করোনার টিকা নেয়ার অন স্পট সুবিধা বন্ধ করে দেয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, সারা দেশে এ পর্যন্ত ৫ লাখ ৪২ হাজার ৩০৯ জন টিকা নিয়েছেন। ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে টিকা নিতে অনলাইনে নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত টিকা নেয়ার জন্য অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন ১২ লাখ ৩৭ হাজারের বেশি মানুষ। গত ২৪ ঘণ্টায় নিবন্ধন করেছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস’র পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর ব্যতীত ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোতে টিকা নিয়েছেন ২৬ হাজার ৭০৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৫২ হাজার ৮৬৯ জন, রাজশাহী বিভাগে ২৩ হাজার ১৮০ জন, রংপুর বিভাগে ১৯ হাজার ৩৮০ জন, খুলনা বিভাগে ২৩ হাজার ৪৭৯ জন, বরিশাল বিভাগে ৯ হাজার ৩৯৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৯ হাজার ৩৩৭ জন এবং সিলেট বিভাগে টিকা নিয়েছেন ১৫ হাজার ৭৩৯ জন। ৫ দিনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার উপসর্গ বা অ্যাডভার্স ইভেন্ট ফলোইং ইমিউনাইজেশন (এইএফআই) রিপোর্ট করেছেন মাত্র ৩৬৩ জন।
প্রথমে ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের করোনা টিকা দেয়া হয়। অতপর করোনার গণটিকা দেয়া শুরুর কয়েকদিন আগেই নাগরিকদের মধ্যে কারা টিকা নিতে পারবেন সে বয়স নির্ধারণ করে দেয়া হয়। একই সঙ্গে অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়। বলা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে থাকা মোবাইল ফোনে পরবর্তীতে নির্দেশনা যাবে, তিনি কবে টিকা নেবেন। তাৎক্ষণিকভাবে রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। বিশেষজ্ঞদের ধারণা ছিল অনলাইন নিবন্ধন জটিলতা এবং ভীতির কারণে সাধারণ মানুষ টিকা গ্রহণ করতে আগ্রহী হবেন না। এমন চিন্তা থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের এই ঘোষণার পর অতি সাধারণ মানুষ যাদের স্মার্ট ফোন নেই তাদের জন্য নিবন্ধন ছাড়া কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। বলা হয় যাদের কাছে স্মার্ট ফোন নেই তারা কেন্দ্রে গেলে স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের অন স্পট রেজিস্ট্রেশন করিয়ে দেবেন। কিন্তু গত দু’দিন রাজধানীর টিকা কেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় অন স্পটে নিবন্ধন করার কারণে যারা আগে অনলাইনে নিবন্ধন করে টিকা কেন্দ্রে আসছেন তাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। কেন্দ্রে ভিড়ের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মানা কঠিন হয়ে পড়ে। গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় কিছু কিছু কেন্দ্রে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন অনলাইনে নিবন্ধন করা টিকা প্রত্যাশীরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় টিকা কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্যবিধিও মানা হচ্ছে কম। যারা টিকা দিচ্ছেন তাদের হাতে নেই গøাভস। অতিরিক্ত ভিড় এবং অন স্পট নিবন্ধনকারীদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে সমস্যা হচ্ছে। ফলে যারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন, তারাই টিকা কেন্দ্রে ঢুকতে পারছেন না। সে জন্য অন স্পট নিবন্ধন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ঘোষণা দেন, এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রে আর নিবন্ধন হবে না।
‘অন স্পট নিবন্ধন কেন বন্ধ করা হলো’ জানতে চাইলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান বলেন, অন স্পট-এ ম্যানেজমেন্টে একটু সমস্যা হচ্ছে। বেশি মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন না করে চলে আসছেন। এতে টিকার হিসাব রাখার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। তাই অন স্পট বন্ধ করা হয়েছে। তবে ৮০ বছরের উপরে বয়স্কদের বিষয়ে অন্যভাবে সহযোগিতার চিন্তা করা হচ্ছে।
ভিড় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) বেনজীর আহমেদ বলেন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা টিকা নেয়ায় মানুষ উৎসাহিত হচ্ছেন। এছাড়াও সব শ্রেণির নাগরিকের জন্য টিকা উন্মুক্ত থাকার বয়সসীমা ৫৫ থেকে নামিয়ে ৪০ করার সরকারি সিদ্ধান্ত টিকা গ্রহিতার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রেখেছে। দৈনিক টিকার হার ৩ লাখ ছাড়িয়ে নিতে হবে।
শুক্রবার গণটিকা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। তবে গণটিকা প্রদানের পঞ্চম দিন গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার কয়েকটি টিকা কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে স্বার্তঃস্ফ‚র্তভাবে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ টিকা গ্রহণ করছেন। দেখা গেছে টিকাকেন্দ্রে প্রচন্ড ভিড়। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঢাকায় প্রতিদিনই টিকা গ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। ঢাকার বাইরে বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরেও একই চিত্র। গণটিকার ৫ম দিনে সারা দেশে টিকা নিয়েছেন ২ লাখ ৪ হাজার ৫৪০ জন। আগের দিন চতুর্থ দিনে নেন এক লাখ ৫৮ হাজার ৪৫১ জন। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় কিছু কিচু টিকাদান কেন্দ্রে মানুষ দীর্ঘ লাইনেও অপেক্ষা করছেন। কিছু কেন্দ্রে দিনের টিকার নির্ধারিত চাহিদাও অতিক্রম করেছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েন টিকা প্রত্যাশী কেন্দ্রে আসা মানুষ।
ঢাকার কেন্দ্রগুলোতে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকেই টিকা প্রত্যাশীদের ভিড় শুরু হয়। এদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন সেন্টারে ৮টি বুথে কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে ১ হাজার ৪৫৭ জন টিকা নিয়েছেন। এই দিন করোনার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধা চিকিৎসক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ দেশের বিশিষ্টজনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ টিকা গ্রহণ করেন। তবে অনেকে জানান টিকা নিতে এসে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিএসএমএমইউ’র দায়িত্বশীলরা জানান, প্রতিদিন এক হাজার থেকে ১২শ’ জনকে টিকা দেয়ার জন্য নির্ধারিত রয়েছে। কিন্তু অতিরিক্ত লোক মেসেজ ছাড়াই চলে আসছেন। এতে সমস্যা হচ্ছে তাদের। ফলে টিকা নিতে এসে অনেককেই ফেরত যেতে হয়।
কেন্দ্রে নিবন্ধন আপাতত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে জানিয়ে গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি হোটেলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতর আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এখন থেকে যারা নিবন্ধন করে আসবেন, শুধু তাদেরই টিকা দেয়া হবে। কেন্দ্রে আর নিবন্ধন হবে না। কারণ নিবন্ধন না করে বেশিরভাগ মানুষ টিকা নিতে আসছেন। এতে কেন্দ্রে অতিরিক্ত ভিড় তৈরি হচ্ছে। ভবিষ্যতে যদি টিকাদান কেন্দ্রে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়ে তখন আবারো জানানো হবে। তিনি জানান, এর আগে দেশজুড়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা দেয়ার জন্য গ্রামাঞ্চলের এবং যাদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের সুবিধা নেই, তাদের জন্য কাছের টিকাদান কেন্দ্রে গিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে অন স্পট নিবন্ধন করে টিকা নেয়ার সুযোগ ছিল।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ জানুয়ারি করোনা টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অতপর গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে ৬৪ জেলার টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
উল্লেখ্য, ভারত সরকারের উপহার হিসেবে ২০ লাখ ও ক্রয় চুক্তি অনুযায়ী ৫০ লাখ ডোজ করোনা টিকা আগেই দেশে পৌঁছেছে। প্রতি মাসে ভারত থেকে ৫০ লাখ টিকা আমদানির বাইরেও বাংলাদেশের সামনে সুযোগ তৈরি হয়েছে কোভ্যাক্সের মাধ্যমে টিকা পাওয়ার। স্বাস্থ্য অধিদপতরের তথ্য মতে সরকার দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ তথা ১৩ কোটি ৮২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০৮ জন মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করেছে। প্রতিজনকে দেওা হবে দুই ডোজ টিকা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।