বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতিতে ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবাহিত গঙ্গার ওপর নির্মিত ভারতের ফারাক্কা বাঁধের প্রতিক্রিয়া যেমন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল হোসেন
বাংলাদেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এই দল প্রতিষ্ঠা করেন। ৩০ এপ্রিল ১৯৭৭ সালে জিয়াউর রহমান তার শাসনকে বেসামরিক করার উদ্দেশ্যে ১৯ দফা কর্মসূচি শুরু করেন। জেনারেল জিয়া যখন সিদ্ধান্ত নিলেন যে তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য নির্বাচন করবেন তখন তার নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন বিচারপতি আবদুস সাত্তার।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে এলে জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠন করেন। জাগদলকে বিএনপির সাথে একীভূত করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়া এই দলের সমন্বয়ক ছিলেন এবং এই দলের প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী এর প্রথম মহাসচিব ছিলেন। জিয়ার এই দলে বাম, ডান, মধ্যপন্থি সকল প্রকার লোক ছিলেন। বিএনপির সবচেয়ে প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল এর নেতৃত্ব বাছাই পদ্ধতি। প্রায় ৪৫ শতাংশ সদস্য শুধুমাত্র রাজনীতিতে যে নতুন ছিলেন তা-ই নয়, তারা ছিলেন তরুণ।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টায় রমনা রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাপত্র পাঠের মাধ্যমে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের যাত্রা শুরু করেন। জনাকীর্ণ সংবাদ সম্মেলনে তিনি ঘোষণাপত্র পাঠ ছাড়াও প্রায় দুই ঘণ্টা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ওই ১৮ জনসহ ৭৬ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন। এখানে উল্লেখ্য, বিএনপি গঠন করার আগে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল) নামে আরেকটি দল তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তারকে সভাপতি করে গঠিত হয়েছিল। ২৮ আগস্ট ১৯৭৮ সালে নতুন দল গঠন করার লক্ষ্যে জাগদলের বর্ধিত সভায় ওই দলটি বিলুপ্ত ঘোষণার মাধ্যমে দলের এবং এর অঙ্গ সংগঠনের সকল সদস্য জিয়াউর রহমান ঘোষিত নতুন দলে যোগদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের সাথে বিএনপির নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বিএনপির ইতিহাস বাংলাদেশে গণতন্ত্রের ইতিহাস। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিটি সংগ্রামে বিএনপি সবসময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবং অগণতান্ত্রিক শক্তির কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের যাত্রা শুরুর মাত্র তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারি শেখ মুজিবের নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশের সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে একদলীয় শাসন তথা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে। সংসদীয় গণতন্ত্র বিলুপ্ত করে একদলীয় এবং এক ব্যক্তির শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়। সরকারি মালিকানায় মাত্র চারটি পত্রিকা রেখে দেশের সকল পত্র-পত্রিকা এবং জনমত প্রকাশের মাধ্যম বন্ধ করে দেয়া হয়। জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে একদলীয় সংসদ নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে সংসদের মেয়াদ এবং প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় নেতাকে নির্বাচন ছাড়াই নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে পাঁচ বছর পর্যন্ত ক্ষমতার মেয়াদ বৃদ্ধি করে নেয়। গোটা জাতি একদলীয় স্বেচ্ছাচারী শাসনে এক অবরুদ্ধ অবস্থায় নিপতিত হয়।
এ অবস্থায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টেও কলঙ্কজন ঘটনায় প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর শাসক দল বাকশালেরই একটি অংশ ক্ষমতা দখল করে। একই বছরে ৩ নভেম্বর শাসক দলেরই আরেকটি অংশের আশীর্বাদে আরেকটি পাল্টা ক্যু সংঘটিত হয়। এসব ক্যু পাল্টা ক্যুর প্রেক্ষাপটে ৭ নভেম্বর সকালে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী সকল চক্রান্তের জাল ছিন্ন করে জনগণকে সাথে নিয়ে সিপাহী জনতার বিপ্লব ঘটায় এবং ৩ নভেম্বর ক্যুর হোতাদের দ্বারা বন্দি সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করে আনে। নতুনভাবে দায়িত্ব লাভ করে সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনেন। এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময় সেনাবাহিনীর সমান্তরাল হিসেবে গড়ে তোলা শাসক দলের নিজস্ব বাহিনী রক্ষীবাহিনীকে আত্তীকরণের মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী জাতীয় বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলেন। ১৯৭৭ সালে প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম নিজে অবসর নিয়ে সেনাপ্রধান জিয়াকে প্রেসিডেন্টের এবং দেশ গড়ার দায়িত্ব প্রদান করেন। এরূপ এক রাজনৈতিক শূন্যতার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় প্রয়োজনীয়তার অনিবার্যতায় রাজনৈতিক শূন্যতা পূরণ ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠিত হয়। এর পূর্বেই প্রেসিডেন্ট জিয়া পরবর্তী একদলীয় সরকারের সময়ে নিষিদ্ধ ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া রাজনৈতিক দলসমূহকে তাদের অস্তিত্ব পুনর্বহাল ও রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনার অনুমতি প্রদান করেন। এ সময়ে বাকশাল গঠনের ফলে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া আওয়ামী লীগও স্বনামে আত্মপ্রকাশ এবং রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা শুরু করে। ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি সকল দলের অংশগ্রহণে দেশের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে সরকার গঠন করে। এভাবে প্রেসিডেন্ট জিয়ার নেতৃতে বিএনপি সরকারের মাধ্যমে দেশে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠা ও বিকাশ লাভ করে। জাতীয় সংসদ ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানসমূহ কার্যকর করে দেশে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠানিকতা দান করা হয়। দেশের সকল সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া হয় এবং বন্ধ হয়ে যাওয়া সংবাপত্রসমূহ পুনঃ প্রকাশের ব্যবস্থা করা হয়।
কিন্তু সংসদের মেয়াদ দুই বছর পার হতে না হতেই ১৯৮১ সালে ৩০ মে সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাভিলাষী সদস্যের হাতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাতবরণ করেন। এ দুর্যোগেও বিএনপি গণতন্ত্র এবং সংসদকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে বিচারপতি আবদুস সাত্তার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ তৎকালীন সেনাপ্রধান এরশাদ নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে সরিয়ে গণতন্ত্রের কণ্ঠরোধ করে সামরিক শাসন চালু করেন।
এরপর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির হাল ধরেন এবং তার নেতৃত্বে বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম শুরু করে। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে দীর্ঘ নয় বছরের সংগ্রামে বিএনপিকে অনেক ত্যাগ স্বীকার এবং চড়াই-উৎরাই অতিক্রম করতে হয়েছে। আন্দোলনের মাঠ থেকে কোনো কোনো দল বিশেষ করে আওয়ামী লীগ সরে গিয়ে সামরিক শাসকের সাথে হাত মিলিয়ে তাদেরকে ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেয়। কিন্তু বিএনপির নিরলস সংগ্রাম এবং দলনেত্রী বেগম জিয়ার আপসহীন ভূমিকার ফলে শেষ পর্যন্ত ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে সামরিক শাসনের অবসান ঘটে এবং সকল দলের ঐকমত্যে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি পুনরায় সরকার গঠন করে। এ সংসদ থেকেই সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সকল দলের ঐকমত্যে সংবিধানে সংসদীয় গণতন্ত্রের বিধান পুনঃ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিএনপি সরকারের নেতৃত্বে দেশে পুনরায় সংসদীয় গণতন্ত্র চালু হয়।
১৯৯৪ সালের দিকে এসে আওয়ামী লীগ তাদের মিত্র জামায়াত ও জাতীয় পার্টিকে নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে দেশে অচলাবস্থার সৃষ্টি করে। তারা বিএনপি সরকারের সমঝোতার প্রস্তাব এবং এমনকি আন্তর্জাতিক সংস্থার মধ্যস্থতা ও সমঝোতার উদ্যোগে সাড়া না দিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করে গণতন্ত্রের পথ রুদ্ধ করার চেষ্টা করে। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে বিএনপি পুনর্নির্বাচিত হয়ে জাতির বৃহত্তর স্বার্থে দেশে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ৭ম এবং ৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে ওঠে। কিন্তু ৮ম সংসদের মেয়াদ শেষে তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগ তুচ্ছ অভিযোগে সারা দেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে এবং অনুষ্ঠিতব্য নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে দেশে জরুরি অবস্থা জারিকে স্বাগত জানায়। সে জরুরি অবস্থার সরকারের সহযোগিতায় ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ আদালতের একটি খ-িত রায়ের অজুহাত দেখিয়ে দেশবাসীর মতামত এবং প্রতিবাদকে উপেক্ষা করে ২০১১ সালে সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে বাতিল করে দেশে গণতন্ত্রের পথকে রুদ্ধ করে পুনরায় একদলীয় শাসনের পথ সৃষ্টি করে।
আওয়ামী লীগ সরকারের এ পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের জনগণ বিক্ষুব্ধ ও প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। বিএনপি দেশের মানুষকে একদলীয় শাসনের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত রাখতে দেশের মানুষের সাথে একাত্ম হয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে পুনরায় অবতীর্ণ হয়েছে। নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পুনর্বহালের দাবিতে বিএনপি জনগণের সাথে মিলে রাজনীতির লেবাস পরিহিত কার্যত এক দলীয় সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছে।
সত্তর দশকের শেষাংশে বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান একদলীয় বাকশালী বিধান ভেঙে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আশির দশক জুড়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেন। ১৯৯৬ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি সরকার সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিধান অন্তর্ভুক্ত করে গণতন্ত্রকে মজবুত ভিত্তি প্রদান করে।
গণতন্ত্রের আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ২০১১ সাল থেকে পুনরায় বিএনপি একদলীয় শাসকের হাত থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছে। বিএনপি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জনগণের ভোটাধিকবার জনগণের কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য এখনো সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে।
বাংলাদেশের ষোল কোটি মানুষের প্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তিনি গণতন্ত্র রক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিটি আন্দোলনে সফল হয়েছেন এবারো হবেন। আপসহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রাণ। তিনি সর্বোচ্চ জনপ্রিয়তা নিয়ে তিনবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম ও মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় মহিলা প্রধানমন্ত্রী।
১৯৮১ সালের ৩০ মে সামরিক বাহিনীর কতিপয় দুর্বৃত্তের হাতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শাহাদাৎবরণ করার পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-কর্মীদের আহ্বানে বেগম খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালের মার্চ মাসে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন। ১৯৮৩ সালের ১ এপ্রিল দলের বর্ধিত সভায় তিনি প্রথম বক্তৃতা করেন। বিচারপতি সাত্তার অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৪ সালের ১০ মে পার্টির চেয়ারপারসন নির্বাচনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তার নেতৃত্বেই মূলত বিএনপির পূর্ণ বিকাশ হয়।
১৯৮৩ সালে বেগম জিয়ার নেতৃত্বে সাত দলীয় ঐক্যজোট গঠিত হয়। একই সময় এরশাদের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। বেগম জিয়া প্রথমে বিএনপিকে নিয়ে ১৯৮৩ এর সেপ্টেম্বর থেকে ৭ দলীয় ঐক্যজোটের মাধ্যমে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। একই সময় তার নেতৃত্বে সাত দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন পনের দলের সাথে যৌথভাবে আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে। ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত পাঁচ দফা আন্দোলন চলতে থাকে। কিন্তু ১৯৮৬ সালের ২১ মার্চ রাতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এরশাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে বাধার সৃষ্টি হয়। ১৫ দল ভেঙে ৮ দল ও ৫ দল হয়। ৮ দল নির্বাচনে যায়। এরপর বেগম জিয়ার নেতৃত্বে ৭ দল, পাঁচ দলীয় ঐক্যজোট আন্দোলন চালায় এবং নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে। ১৯৮৭ সাল থেকে খালেদা জিয়া এরশাদ হটাও এক দফার আন্দোলন শুরু করেন। এর ফলে এরশাদ সংসদ ভেঙে দেন। পুনরায় শুরু হয় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন। অবশেষে দীর্ঘ আট বছর একটানা নিরলস ও আপসহীন সংগ্রামের পর ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। সেই নির্বাচনে খালেদা জিয়া মোট পাঁচটি আসনে অংশ নিয়ে পাঁচটিতেই জয়লাভ করেন।
১৯৯১ সালের ১৯ মার্চ বেগম খালেদা জিয়া পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন। তার সরকার দেশে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার কায়েম করে। ২ এপ্রিল তিনি সংসদে সরকারের পক্ষে এই বিল উত্থাপন করেন। একই দিন তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদকে স্বপদে ফিরে যাবার ব্যবস্থা করে একাদশ সংশোধনী বিল আনেন। ৬ আগস্ট ১৯৯১ সালের সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে দুটি বিল পাস হয়। ১৯৯৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত হয়ে বেগম খালেদা জিয়া দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হন। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। খালেদা জিয়া তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।
১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হিসেবে দলে যোগ দেবার পর থেকে মোট চারবার তিনি গ্রেফতার হন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের ৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেফতার হন। সর্বশেষ তিনি ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরের ৩ তারিখে দুই পুত্রসহ গ্রেফতার হন। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি হাইকোর্টের নির্দেশে মুক্তিলাভ করেন। তার বিরুদ্ধে চলতে থাকা কোনো মামলার তদন্তে কোনো অভিযোগই প্রমাণিত হয়নি, হবেও না।
২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর বেগম জিয়াকে এক কাপড়ে তার ২৮ বছরের আবাসস্থল ছাড়তে বাধ্য করে আওয়ামী লীগ সরকার। বলতে গেলে বলপ্রয়োগ করেই তাকে বাসা থেকে বের করে দেয়। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সাল থেকে অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল হিসেবে জিয়াউর রহমানের সাথে শহীদ মইনুল সড়কের ৬ নম্বর বাড়িতে ওঠেন খালেদা জিয়া।
বর্তমান সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঘরবাড়ি ছাড়া করেছে। তারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে যে অমানবিক আচরণ করেছে তা কথায় নজির বিহীন। একটি কথা না বললেই নয়, ক্ষমতা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, ইদানীং আওয়ামী লীগ নেতাদের কথা শুনলে এমনটাই মনে হয় যে। আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতারা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলে কিন্তু তারা হয়তো জানে না খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সফল ব্যক্তিত্ব। তার নেতৃত্বেই সামরিক শাসক এরশাদ সরকারের পতন হয়েছিল। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ আঁতাত করেছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বেইমানি করেননি, তিনি জনগণের পাশে থেকেছেন। তিনি কোনো অপশক্তির কাছে মাথানত করেননি। নিজের কথার ওপর অটল থেকেছেন। দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে রাজপথে নেমে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। খালেদা জিয়া একটুও বদলাননি দেশের প্রয়োজনে তিনি আবারো তার আপসহীন ভূমিকা পালন করবেন। জনগণের কাছে মাথার মুকুট হয়ে থাকবেন।
পরিশেষে বলতে হয়, দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা পুনরুদ্ধারে বিএনপির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বিএনপিই দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, আছে এক দলীয় শাসন। কিন্তু বিএনপি যতক্ষণ থাকবে, ততদিন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই লড়াই করবে।
য় লেখক : সদস্য নির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), সিনিয়র সহ-সভাপতি জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল ও সভাপতি বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকল্যাণ পরিষদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।