Inqilab Logo

রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪, ১৬ আষাঢ় ১৪৩১, ২৩ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সুদিনের আভাস ছড়িয়ে পড়ছে পাথর কোয়ারিতে!

প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশংসা : টেবিল শাসনের কবলে যেন না পড়ে সুপারিশ

ফয়সাল আমীন, সিলেট থেকে | প্রকাশের সময় : ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৫ এএম

সুদিনের আভাস ছড়িয়ে পড়ছে সিলেটের পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্টদের মধ্যে। দীর্ঘ মানবিক বিপর্যয়ে ক্লান্ত ১০ লক্ষাধিক পাথর সংশ্লিষ্টদের এ যেন এক নতুন জাগানিয়া। গত ২ ফ্রেব্রুয়ারি জ্বালানী ও খনিজসম্পদ বিভাগের এক সুপারিশে পাথর কোয়ারি নিয়ে দীর্ঘ আধাঁরের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। এতে করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকার সংশ্লিষ্টদের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাবে সিলেটের পাথর কোয়ারি নিয়ে প্রকাশিত হয় তথ্যবহুল ধারাবাহিক সংবাদ। এমনকি প্রকাশ হয় একটি সম্পাদকীয়। এর মধ্যে ওঠে আসে অর্থনীতির অন্যতম উৎস পাথর সম্পদের গুরুত্বসহ সুষ্টভাবে আহরণের পরামর্শ। এছাড়া পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্বসহকারের তুলে ধরা হয়। ভারতীয় আমদানীকারদের বহুমুখী ষড়যন্ত্রে বন্দি সিলেটের পাথর কোয়ারি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের ঘটনায় পাথর সংশ্লিষ্টদের মধ্যে স্বস্তি দেখা দেয়। এর মধ্যে দিয়ে গত ২ ফ্রেবুয়ারি সিলেটের বিভিন্ন পাথর কোয়ারি সর্ম্পকে বিশেষ একটি প্রতিবেদন প্রেরণ করা হয়েছে। জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সহকারী সচিব স্বাক্ষরিত এ প্রতিবেদন অবহিত করা হয়েছে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, মহাপরিচালক খনিজ সম্পদ ব্যুরো (বিএমডি) ও সিলেট প্রশাসককে। প্রতিবেদনে ৫টি সুপারিশও জানানো হয়েছে। এ সুপারিশে পাথর কোয়ারি নিয়ে বাস্তবমুখী ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখছেন স্থানীয় পাথর সংশ্লিষ্টরা। এর পেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি শ্রদ্ধা-সম্মানসহ অফুরন্ত প্রশংসা প্রকাশ করছেন তারা। কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ পূর্ব ইসলামপুর হেমার শ্রমিক সমবায় সমিতি সভাপতি ফয়জুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা এই সুপারিশে অনেক খুশি, প্রধানমন্ত্রী ১২ লাখ রোহিঙ্গাদের খাবার দিচ্ছেন, ঘর দিচ্ছেন। কিন্তু আমরা ১০ লাখ মানুষ না খেয়ে। কোন কাজ নেই। ঘরে ভাত নেই। বোমা মেশিন বন্ধে আদালত রায় দেয়। কিন্তু ডিসি সাব সকলের পাথর তোলা বন্ধ করে দিয়েছেন। আমাদের কথা চিন্তা করেননি। তিনি আরো বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা না নিলে আমাদের কোন উপায় নেই। আমরা মনে করছি তাঁর কারণে পাথর উত্তোলনে আর কোন বাধা থাকবে না। আমরা চোখের পানিতে তার জন্য দোয়া করছি’।

ভোলাগঞ্জ পানি নিষ্কাশন, বালু পাথর উত্তোলন ও বহনকারী শ্রমিক ইউনিয়ন সদস্য মোবারক হোসেন বলেন, কত কষ্ট করবো আমরা। আর পারছি না। ছেলে-মেয়ের পড়া বন্ধ, পাঞ্চায়েত মসজিদের মাসিক চাঁদা দিতে পারি না, অসুস্থ হলে ডাক্তার দেখাতে পারি না। অনাহার-অর্ধাহারে চলছে সংসার। এখন প্রধানমন্ত্রী পাথর কোয়ারির দিকে খেয়াল না করলে আমাদের বাঁচার আর কোন পথ নেই। আমরা বিশ্বাস করি পাথর কোয়ারি এখন খুলবে। চক্রান্তকারীদের যড়যন্ত্র বন্ধ হবে। প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমরা দোয়া করছি। তার হস্তক্ষেপে এ কোয়ারিগুলো যেন খুলে যায়। যারা বন্ধ করিয়া ফায়দা লুটে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেই তিনি। তিনি বলেন, স্থানীয় প্রশাসন আমাদের কথাভাবে না। আমাদের ধ্বংস করে, পাথর সম্পদ শেষ করতে তারা কাজ করছেন। না হলে আদালতের একটি বন্ধ নির্দেশ রাখতে তারা যেভাবে শক্ত, কিন্তু খুলে দেয়ার কোন আদেশ মানতে তারা কোন ভূমিকা রাখেন না। এ আজব কাজ করছেন সিলেট প্রশাসনের কর্মকর্তারা। তিনি বলেন, তাহলে ভূক্তভোগী আইনমান্যকারী অসহায় মানুষ যাবে কোথায়। আমরা শেষ ভরসাস্থল আদালতে যাই, কোয়ারি খুলে দেয়ার আদালতের নির্দেশ নিয়ে প্রশাসনের কাছে আসলে তা বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেন না তারা।
তিনি বলেন, ‘জনগনের নেত্রী, দেশের প্রধানমন্ত্রী আমাদের দিকে তাকিয়েছেন বলেই কোয়ারি খুলার পথ সুগম হচ্ছে বলে আমরা মনে করছি। তিনি আরো বলেন, দৈনিক ইনকিলাব আমাদের কষ্টের কথা, পাথর সম্পদের কথা যেভাবে লিখছে, আর কেউ এভাবে লিখেনি। সবাই যেন একজোট হয়ে গেছে, আমাদের শেষ করতে। অথচ এ সম্পদ সঠিকভাবে আহরণ ও ব্যবস্থাপনা করলে স্থানীয় ও দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে। এছাড়া লাখ লাখ পাথর সংশ্লিষ্ট মানুষের জীবন মান সুরক্ষিত হবে। তিনি, ইনকিলাব কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ দেন।’

সিলেটের অর্থনীতির অফুরন্ত খাত পাথর কোয়ারি সংশ্লিষ্টদের চলমান মানবিক বিপর্যয়ের ছাড়াও পাথর কোয়ারি কেন্দ্রিক পন্য পরিবহন খাতে প্রায় সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকার ব্যাংক দেনায় দেউলিয়া হয়েছেন পরিবহন মালিকরা। পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় কিস্তির টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন লক্ষাধিক ট্রাক মালিক। ট্রাক শ্রমিকদের জীবন যাপনও বিপন্ন। স্থবির হয়ে পড়ছে পরিবহন খাতের ব্যবসা। এমনকি ব্যাংক লোন নিয়ে স্টোন ক্রাশার মেশিন গড়ে তুলেছিলেন ব্যবসায়ীরা। কোয়ারি বন্ধ থাকায় পাথর সরবরাহ বন্ধ। তাই ক্রাশার প্রতিষ্ঠানগুলো এখন ধবংসের পথে। অনেক ব্যবসায়ীর মাথায় হাত পড়েছে।

জাফলং-বল্লাঘাটা পাথর ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাবেক সেক্রেটারি দিলওয়ার হোসেন বলেন, প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের রহস্যজনক আচরনে আদালতের নির্দেশ আসলেও পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হয় না। এতে নিরূপায় হয়ে উঠছেন এখাতের ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী দিশেহারা। এমনকি ঋণের ভারে অকাল মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তিনি বলেন, দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত সংবাদ কোয়ারির বাস্তব চিত্র ওঠে আসে। ধন্যবাদ জানাই ইনকিলাব কর্তৃপক্ষকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোয়ারি সম্পদের বাস্তবতা অনুধাবন না করলে, এ সম্পদসহ সংশ্লিষ্ট খাত ধ্বংস হয়ে দীর্ঘমেয়াদী মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, বঙ্গবন্ধু কন্যার দূরদৃষ্টি সিদ্ধান্তে পাথর কোয়ারি পুনরায় স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরবে। মানবিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবে। করোনার ছোবলে এমনিতে বিপর্যস্ত গোটা সমাজ, এর মধ্যে পাথর কোয়ারি নিয়ে যড়যন্ত্র অবিশ্বাস্য। তিনি বলেন, পাথর কোয়ারি নিয়ে প্রদত্ত সুপারিশ ইতিবাচক। কিন্তু তা বাস্তবায়ন নিয়ে প্রশাসনের আন্তরিকতা প্রশ্নবিদ্ধ। বিগত দিনে এমনিভাবে নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করেছেন তারা। মনে হয় তাদের ওপর কেউ নেই। প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দৃষ্টি না দিলে, কোয়ারি নিয়ে কেবল দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি করবে স্থানীয় প্রশাসন। নানামুখী মারপ্যাঁচে ফেলে সময়ক্ষেপন করে বঞ্চনা দীর্ঘায়িত করবেন তারা।

বৃহত্তর সিলেট পাথর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মো. নুরুল আমিন বলেন, ওপেন সিক্রেট একটি সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপে পাথর কোয়ারি নিয়ে জটিলা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ খাতের সম্ভাবনা ও খাত সংশ্লিষ্টদের চলমান মানবিক বিপর্যয়ের প্রকৃত চিত্রও নজরে দেয়া হয়নি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দক্ষ নেতৃত্বে দেশের সব খাত এখন প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। কিন্তু সিলেটের অফুরন্ত অর্থনীতিক সম্ভাবনার পাথর কোয়ারি এখন প্রাণহীন। কেবল স্থানীয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট একটি শক্তিশালী অংশ ভারতীয় আমদানীকারকদের স্বার্থে সিলেটের পাথর কোয়ারিকে অচল করে রেখেছেন। এ চক্রকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ নিতে পারবে না বলে আমাদের বিশ্বাস।

সিলেট বিভাগ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ড ভ্যান মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহবায়ক গোলাম হাদী ছয়ফুল বলেন, আদালতে নির্দেশনা থাকার পরও সনাতনি পদ্ধতিতে পাথর কোয়ারি খুলে দেয়া হয়নি। প্রতিবাদে নানা কর্মসূচি, লাগাতর ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘটও পালন হয়েছে। আদালতের নির্দেশনা এসেছে খাস কালেকশনের মাধ্যমে কোয়ারি খুলে দেয়ার, তারপরও কোন পদক্ষেপ নেই স্থানীয় প্রশাসনের। লাখ লাখ শ্রমিক মানবিক বিপর্যয়ে, পাথরের স্তূপে নদীর পরিবেশ প্রতিবেশ হুমকিতে, তারপরও প্রশাসনের টনক নড়ে না। পাথর কোয়ারি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ প্রদান করেছেন জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ সুপারিশ কল্যানকামী রাষ্ট্র ও নেতৃত্বের একটি বহি:প্রকাশ। আমরা ধন্যবাদ ও প্রশংসা করছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সরকারের জনবান্ধব মানসিকতার কারনে এ সুপারিশ প্রেরণ করা হয়েছে। এখন এর বাস্তবায়ন অধির অপেক্ষায় আছি আমরা। বিগত দিনের মতো স্থানীয় কর্পোরেট এজেন্টদের কারণে যেন ভেস্তে না যায় এ সুপারিশের বাস্তবায়ন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টিতে সম্ভব এ সুপারিশের বাস্তবায়ন।



 

Show all comments
  • সোলায়মান ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৪:৩৫ এএম says : 0
    খুব ভালো খবর
    Total Reply(0) Reply
  • A Rahman ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৪০ এএম says : 0
    ইনকিলাব পত্রিকাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এভাবে সবসময় সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে সেই আশা।
    Total Reply(0) Reply
  • জাহিদ খান ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৪১ এএম says : 0
    সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়ন করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • রমজান আলি ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৮:৪২ এএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ। খুবই ভালো খবর। বহু মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হতে যাচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ফখরুল ইসলাম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:১৪ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ পাথর কোয়ারিতে খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসছে। ধন্যবাদ ইনকেলাব পত্রিকার সম্পাদক সহ সবাইকে।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ ফখরুল ইসলাম ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:১৪ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ পাথর কোয়ারিতে খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন আসছে। ধন্যবাদ ইনকেলাব পত্রিকার সম্পাদক সহ সবাইকে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ