Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গলার কাঁটা ভারতের পেঁয়াজ

টিসিবির গচ্চা হাজার হাজার কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

‘ভাত দেয়ার মুরোদ নেই, কিল মারার গোসাই’ প্রবাদের মতোই সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি)। ভরা মৌসুমে দেশের পেঁয়াজে বাজার ছয়লাভ হওয়ায় ভারতীয় পেঁয়াজ ক্রেতারা কিনছেন না। অথচ টিসিবি সে পেঁয়াজ গ্রাহকদের নিতে বাধ্য করছে। এক কেজি ডাল, দুই কেজি চিনি, দুই কেজি তেল কিনলেই সঙ্গে বাধ্যতামূলকভাবে ১০ কেজি পেঁয়াজ নিতে গ্রাহকদের বাধ্য করা হচ্ছে। এর প্রতিবাদে রংপুরে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন ভুক্তভোগী ক্রেতারা। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে একই অবস্থা। টিসিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ এখন গলার কাঁটা হয়ে গেছে।

২০২০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পূজার উপহার হিসেবে বাংলাদেশ ইলিশের চালান ভারতের কলকাতা পাঠিয়েছিল। সে দিনই ভারত হঠাৎ করে সীমান্তে পেঁয়াজের ট্রাক বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশে পেঁয়াজের রফতানি বন্ধ করায় সাময়িকভাবে বাংলাদেশের ভোক্তারা বিপাকে পড়ে যান। সরকার পড়ে বিব্রতকর অবস্থায়। এ অবস্থায় পেঁয়াজের কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত উঠে। অতঃপর বাংলাদেশ তুরস্ক, পাকিস্তান, মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি করে দেশে ক্রেতাদের চাহিদা মেটান। এমনকি তুরস্ক থেকে বিমানে করে পেঁয়াজ আমদানি করতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের ভাড়া পড়েছে দেড়শ’ টাকা। কয়েক মাস পর দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজারে আসতে থাকে। মশলা জাতীয় পণ্যটির দাম কমতে শুরু করে। এ সময় ভারতের কৃষকদের চাপে নরেন্দ্র মোদি সরকার পুনরায় বাংলাদেশে পেঁয়াজ রফতানি শুরু করে। দেশের এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি করতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। শত শত পেঁয়াজের ট্রাক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এ সময় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীরা ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেন। অতঃপর সারা দেশের ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা কমতে থাকে। এ অবস্থায় টিসিবির মাধ্যমে ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করার কৌশল নেয়া হয়। কিন্তু ক্রেতারা সে পেঁয়াজ ক্রয়ে অনিহা প্রকাশ করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টিসিবি’র পেঁয়াজ কেউ কিনছে না। কারণ দেশি পেঁয়াজের মান ভালো এবং দামও স্থিতিশীল। অন্যদিকে ভারত থেকে টিসিবির আমদানি করা পেঁয়াজে পচন ধরেছে, মানও খারাপ। এরপরও আগামী মার্চ পর্যন্ত ভারত থেকে আরো প্রায় ৪৭ হাজার টন পেঁয়াজ আনার চুক্তি রয়েছে টিসিবির। যেগুলো আগাম আমদানি চুক্তি করা রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে বাড়তি পেঁয়াজ নিয়ে টিসিবি গচ্চা দিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। কারণ এসব পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে বিদেশ থেকে কেনা। যা দেশে এনে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৫ টাকা কেজি দরে। তাও আবার গড়ে এক-চতুর্থাংশ পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে বিক্রি না হওয়ায়।

জানতে চাইলে টিসিবি’র মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, টিসিবির প্রধান কাজ বাজারদর নিয়ন্ত্রণ। বেশি পেঁয়াজ ক্রয়ের কারণেই এখন বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বছর পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। এ বছর সে পেঁয়াজ ১৫ টাকায় নামিয়েছে টিসিবি। এতে প্রতি কেজিতে জনগণের ১৮৫ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আমাদের একটি হিসাবে রয়েছে যে এমন পরিস্থিতিতে জনগণের ১৫ হাজার ৩০০ কোটি টাকা বেঁচেছে, যা গুটিকয়েক সিন্ডিকেটকারী আগের বছর হাতিয়ে নিয়েছিলেন।

টিসিবি সূত্রে জানা গেছে, এখনও প্রায় ১৩ হাজার টন পেঁয়াজ বন্দরে জমা আছে। বিভিন্ন হিমাগারে আছে কয়েক হাজার টন পেঁয়াজ। পাশাপাশি টিসিবির গুদামে মজুদ থেকে যে দুই-তিন হাজার টন পেঁয়াজ ডিলারদের দেয়া হয়, তাও মন্থরগতিতে সরবরাহ হচ্ছে। কারণ চাহিদা না থাকায় ডিলাররা পেঁয়াজ উঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন না।
এদিকে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল থাকার সময় বাজার সামাল দিতে এবার সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপসহ পাঁচটি বড় প্রতিষ্ঠানকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানির অনুরোধ জানিয়েছিল। এসব কোম্পানি দ্রুততম সময়ে পেঁয়াজ আমদানি করে টিসিবিকে দিয়েছে। তারাও বেশ চড়া দামে ওইসব পেঁয়াজ এনে দিয়েছে বিদেশ থেকে। তবে এখনও তাদের দাম পরিশোধ করতে পারেনি টিসিবি। বাজারে দাম পড়ে যাওয়ায় তারাও আশঙ্কায় রয়েছে।
জানতে চাইলে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আমাদের পেঁয়াজ এনে দেয়ার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল, আমরা দিয়েছি।

এমন পরিস্থিতিতে প্রায় এক মাস ধরে টিসিবি কিছু কৌশলে পেঁয়াজ বিক্রির চেষ্টা করলেও তা খুব একটা কাজে আসেনি। সংস্থাটির অন্য পণ্য চিনি, তেল, ডালের সঙ্গে ডিলারদের তিন টন পেঁয়াজ উঠানো বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে সংস্থাটি। তাতে আবার পেঁয়াজ বিক্রি না করতে পেরে ডিলাররা তিন-চারদিন ধরে কোনো পণ্যই উঠাচ্ছেন না। কারণ একদিনের বরাদ্দের এক-দেড় টন করে অন্যান্য পণ্য বিক্রি হলেও পেঁয়াজ রয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিনে রাজধানীর বেশ কয়েকটি ট্রাকসেল ঘুরে ও ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, ওইদিন বাজারে বিক্রি হওয়া টিসিবির ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি বস্তায় গড়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশই পচা। সেগুলো বাছাই করে বিক্রি করছে কোনো কোনো ডিলার। কেউ কেউ আবার অন্য পণ্যের সঙ্গে পাঁচ কেজি পেঁয়াজ কেনা বাধ্যতামূলক করেছেন টিসিবির নির্দেশ মতো। তার মধ্যে চালিয়ে দিচ্ছেন ওইসব পচা পেঁয়াজ।

ভারত থেকে আমদানি করা পচা পেঁয়াজ উঠাতে ডিলারদের অনাগ্রহের কারণে কয়েকদিন ধরে বরাদ্দের তিন টন পেঁয়াজের সঙ্গে মানভেদে ২০০ থেকে ৫০০ কেজি পর্যন্ত পেঁয়াজ ফ্রি দিচ্ছে টিসিবি। ডিলারদের দাবির মুখে গত ৭ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে এ বরাদ্দ কমিয়ে দুই টন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
টিসিবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের এ সময় পেঁয়াজের দাম বেশি থাকায় এ বছর মোট দেড় লাখ টন পেঁয়াজ কিনেছে টিসিবি। এখনও তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ রয়ে গেছে; যা মার্চের শেষ পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে দেশে আসবে। এসব চুক্তি গত বছর করা হয়েছে, যা বাতিলও সম্ভব নয়। এর মধ্যে দেশি পেঁয়াজের ভরা মৌসুম শুরু হওয়ায় ভারতের পেঁয়াজ টিসিবির ‘গলার কাঁটা’ হয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, ৪০ থেকে দফায় দফায় ১৫ টাকা কেজি নির্ধারণ করেও বিক্রি করা যাচ্ছে না। এর মধ্যে টিসিবি অনলাইনে পেঁয়াজ বিক্রি ও নতুন ডিলার বাড়ানোর মতো বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে তাতে কোনো সুফল আসেনি। পেঁয়াজ নিয়ে অস্বস্তি কমেনি।



 

Show all comments
  • মাজহারুল ইসলাম ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৬ এএম says : 0
    ভারত থেকে প্রয়োজন ছাড়া পেয়াজ আমদানি করা বন্ধ করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ডালিম ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
    দেশের বাজার নিয়ন্ত্রনের জন্য একটি সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা দরকার।
    Total Reply(0) Reply
  • টুটুল ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৩৮ এএম says : 0
    আমাদেরকে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamunur Rashid ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৭:৫২ এএম says : 0
    ভারতীয়...দের সকল পণ্য বর্জন করুন মালাউনরা স্বার্থপর
    Total Reply(0) Reply
  • Md Abdul Latif ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
    ৪-৫ জনের ফ্যামিলিতে ৭০-৭৫ কেজি পিয়াজ হলে ১বছর চলে যাবে।পিয়াজ কিনবেন মে মাসের ১৫-২০ তারিখের মধ্যে। বাছায় করে করে কাবেন।খাটের নিচে রেখে দিবেন দেশী পিয়াজ কিছু হবেনা সুন্দর থাকবে। এতে বাঁচবে আমাদের কৃষক বাঁচবে অর্থনীতি।মুক্তি পাবে মুনাফাক্ষরের হাত থেকে।
    Total Reply(1) Reply
    • Harunur Rashid ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৩২ এএম says : 0
      Thanks.
  • Mohammad Zakaria ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
    পেঁয়াজ ২০০ টাকা কেজিতে উঠেছিল। এ বছর সে পেঁয়াজ ১৫ টাকায় নামিয়েছে টিসিবি।
    Total Reply(0) Reply
  • Shikdar Faruk ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
    জনগণের টাকা এভাবে নষ্টের জবাব একদিন দিতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabbo Kabbo ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:০৪ এএম says : 0
    ভারতীয় পেঁয়াজকে না বলুন দেশি পেঁয়াজ কিনুন, কৃষক বাঁচলে বাঁচবে দেশ। পারলে প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশি পণ্যকে প্রাধান্য দিন। যদি দেশি পণ্য না থাকে তখন অন্য কথা।
    Total Reply(1) Reply
    • Harunur Rashid ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৩৪ এএম says : 0
      Thanks.
  • Md. Shamim Howlader ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০৩ পিএম says : 0
    আলহামদুলিল্লাহ তোদের পিয়াজ সব পঁচে যাক
    Total Reply(0) Reply
  • Jashim Mojumder ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৪৬ পিএম says : 0
    দাম যদি কেজিতে ৫-১০টাকা বেশীও হয় তবুও দেশি পেঁয়াজ ক্রয় করুন। একটি সময় দেখবেন আমরা পিঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আরিফ ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৫:৩৪ পিএম says : 0
    উচিত জবাব দেওয়া হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Azad mullah ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৯:৫০ পিএম says : 0
    ঐ পিসিবি... ভারতের দালালি না ভরা মৌসুমে ভারতের পেঁয়াজ বেশি দামে কিনবে কেন ভরা মৌসুমে দেশের পেঁয়াজ কিনলে তো দেশের টাকা বাঁচানো যেত আর আমাদের দেশের কৃষক রা ও লাভবান হতো কিন্তু মিরজাফরেরা সবসময় দেশের বিরুদ্ধে উল্টা পাল্টা কাজ করে বিদেশি দের সারতে হয়তো সামান্য ঘুষ খেয়ে বেশির ভাগ সরকারি কাজে দেখা যায় ভারতের ই দালালি করে আর আমাদের দেশের খতি করে
    Total Reply(0) Reply
  • Jack+Ali ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১১:৩৬ এএম says : 0
    Government is the biggest enemy of our country as such they do not love our scared motherland, they only know how to stay power by Hooks and Crooks and looting our hard earned tax payers money and sending to foreign countries.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পেঁয়াজ

১৩ এপ্রিল, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ