পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনাভাইরাসের গণ-টিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিন ছিল গতকাল মঙ্গলবার। এদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে টিকা কেন্দ্রে আগের দু’দিনের চেয়ে ভিড় বেশি দেখা গেছে। রাজধানীর অন্যান্য টিকাদান কেন্দ্র ঘুরে প্রত্যেকটিতে ভিড় দেখা গেছে। সারা দেশে টিকাদান কর্মসূচির তৃতীয় দিনে গতকাল এক লাখ এক হাজার ৮২ জন টিকা নিয়েছেন। এ নিয়ে দেশে মোট টিকা গ্রহণ করলেন এক লাখ ৭৯ হাজার ৩১৮ জন। মোট পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ২০৭ জনের (যেমন: জ্বর, টিকা দেয়া স্থানে লাল হাওয়া ইত্যাদি)। গতকাল মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (এমআই এস) অধ্যাপক ডা. মিজানুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় মোট টিকা নিয়েছেন এক লাখ এক হাজার ৮২ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ৭৪ হাজার ৫৮৬ জন এবং নারী ২৬ হাজার ৪৯৬ জন। ঢাকা বিভাগে ২৫ হাজার ২২০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ হাজার ৮৫৫ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ২৩ হাজার ৫৪৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৩ হাজার ১১৪ জন, রংপুর বিভাগে ১০ হাজার ২৩৭ জন, খুলনা বিভাগে ১১ হাজার ৩৭২ জন, বরিশাল বিভাগে ৪ হাজার ১৮১ জন ও সিলেট বিভাগে ৮ হাজার ৫৫৯ জন রয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুসারে, গত ২৭ জানুয়ারি দেশে টিকাদান কর্মসূচি শুরু করে। প্রথম দিনে টিকা দেয়া হয় ২৬ জনকে।
এর আগে করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমের দ্বিতীয় দিনে ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর পাঁচ হাসপাতালে মোট ৫৪১ ব্যক্তিকে টিকা দেয়া হয়েছে। আর ৭ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়। এই দিনে সারাদেশে টিকা নিয়েছেন ৩১ হাজার ১৬০ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ২৩ হাজার ৮৫৭ জন এবং নারী সাত হাজার ৩০৩ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম জানান, রাজধানী ঢাকায় ৫০টি হাসপাতাল ও সারা দেশে ৯৫৫টি হাসপাতালসহ সারা দেশে মোট এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে টিকাদান কার্যক্রম চলছে। রাজধানী ঢাকাতে ৫০টি হাসপাতালে ২০৪টি টিম কাজ করছে। এবং সারা দেশে ৯৫৫টি হাসপাতালে দুই হাজার ১৯৬টি টিম কাজ করছে। এক হাজার পাঁচটি হাসপাতালে মোট ২ হাজার ৪০০টিম কাজ করবে। এছাড়াও ভ্যাকসিন বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য টিম প্রস্তুত রয়েছে ৭ হাজার ৩৪৪টি। তবে আপাতত ২ হাজার ৪০০ জনকে দিয়ে কালকের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।
শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকার খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা নিলুফার আলম টিকা নিতে এসেছিন। ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ষাটোর্ধ্ব এই নারী। করোনা টিকা নেওয়ার পর বিশ্রামাগারে বিশ্রাম নেয়ার সময় তিনি করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার চেয়ে টিকা নেয়া ভালো। আগে কিছুটা গুজব ছিল, এ কারণে ভয় পাচ্ছিলাম কিছুটা। তবে সবাই টিকা নিচ্ছে দেখে ভয় কেটে গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার পরিচালক ও এইচএসআই অ্যান্ড ই-হেলথের লাইন ডিরেক্টর ডা. মিজানুর রহমান বলেন, সমাজের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের টিকা নিতে দেখে সাধারণ মানুষের উৎসাহ বেড়েছে। আর প্রথম দুই দিনের চেয়ে টিকা নিবন্ধনকারীদের কাছে মোবাইলে এসএমএসও বেশি গেছে। ভিড় নিয়ে তিনি বলেন, আমার ধারণা, মানুষ দেখছিল কী হয়, অপেক্ষা করছিল। এ কারণে সময় নিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা টিকা নিচ্ছেন। তা দেখে ভয় কেটে গেছে।
বিএসএমএমইউ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জুলফিকার আহমেদ আমিন জানান, রোববার ৫৬০ জন, সোমবার ৮৯৮ জনকে টিকা দিয়েছেন। মঙ্গলবার ১২শ’ জনকে টিকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে উপস্থিতি বেড়েছে।
রামপুরা এলাকা থেকে স্ত্রীসহ টিকা নিতে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা আজগর আলী। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের চিকিৎসা হিসেবেই টিকা এসেছে। টিকা বিশ্বের সব দেশের মানুষই নিচ্ছে। এটা চিকিৎসার অংশ। এ কারণে টিকা নিয়ে ভয়ের কিছু ছিল না। টিকা নেয়ার পরও কোনো সমস্যা দেখছি না।
গতকাল মহাখালীর জাতীয় অ্যাজমা সেন্টার কেন্দ্রেও গত দু’দিনের চেয়ে টিকা নিতে আসা মানুষের সংখ্যা বেশি দেখা গেছে। বক্ষব্যাধি হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ চৌধুরী জানান, রোববার ৩৫ জনের পর সোমবার ১০০ জন এবং মঙ্গলবার ২৬২ জনকে টিকা দিয়েছেন।
মহাখালীর শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালেও টিকা নিতে আসা মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশি। গত তিন দিন ৯৮, ১৫৬ ও ২৭২ জনকে টিকা দেয়া হয়।
গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সমন্বয়ক ডা. শিহাব উদ্দিন বলেন, মঙ্গলবার ৪৫০ জনকে টিকা নিতে ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ দেয়া হয়েছিল। তবে টিকা নিয়েছেন ৪৮৬ জন। যাদের আগে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল তাদের বাইরেও অনেকে এসেছেন। তাদের স্পটেই রেজিস্ট্রেশন করে টিকা দিয়েছি।
এদিকে সাধারণ মানুষের মতো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে টিকা নেয়ার আগ্রহ বাড়ছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টিকা নিতে প্রতিদিনই সচিবালয় ক্লিনিকে বাড়ছে করোনার টিকা নেয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। টিকা কার্যক্রম প্রয়োগের তৃতীয় দিনে সচিবালয়ে ৩৮০ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। এ পর্যন্ত মোট ৮০৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ক্লিনিক থেকে টিকা নিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী এ তথ্য জানান। তিনি জানান, গত রোববার থেকে এ ক্লিনিকে টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম দিন টিকা নেন ১৬৭ জন। দ্বিতীয় দিন ২৫৭ এবং তৃতীয় দিন মোট ৩৮০ জন করোনার টিকা নিয়েছেন। সব মিলিয়ে তিনদিনে সচিবালয়ে কর্মরত ৮০৮ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকা নিয়েছেন। দিন দিন এ সংখ্যা বাড়ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।