Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

করোনাকালে সখিপুরে বিয়ে ও বিচ্ছেদ দুটিই বেড়েছে

সখিপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৩:৪৮ পিএম

করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কিছুটা থেমে থাকলেও সখিপুরে নতুন বিয়ে এবং একই সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ থামেনি । গত বছর টাঙ্গাইলের সখিপুরে বিয়ে হয়েছে ৭৫৭টি আর বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ৪৭৬টি। স্ত্রীর পক্ষ থেকে বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে ২২৮টি আর স্বামীর দিক থেকে বিচ্ছেদ হয়েছে ১২টি। স্বামী–স্ত্রী দুজনের সমঝোতায় বিচ্ছেদ (খোলা তালাক) হয়েছে ২৩৬টি। দেখা যাচ্ছে, স্ত্রীদের পক্ষ থেকেই বিচ্ছেদ হয়েছে বেশি।

সখিপুরের উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্র জানা যায়, ২০২০ সালে ৭৫৭টি বিবাহ ও ৪৭৬টি বিচ্ছেদ হয়েছে। ২০১৯ সালে ৬৭৫টি বিয়ে ও ৫৩০টি বিচ্ছেদ এবং ২০১৮ সালে ৬৬৯টি বিয়ে ও ৫৫৬টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটে। বাল্যবিবাহ, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর উদাসীনতা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক, স্বামীর মাদকাসক্তি, দীর্ঘদিন স্বামীর প্রবাসে থাকা, শ্বশুর-শাশুড়ির নির্যাতন, যৌতুকের জন্য চাপ, স্বামীর নির্যাতন—এসব কারণেই বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।উপজেলা নিকাহ রেজিস্ট্রার সমিতির সূত্রে জানা যায়, সখিপুরের ৮টি ইউনিয়ন, পৌরসভায় ৪টিসহ মোট ১২টি কাজি অফিস রয়েছে। সখিপুর আবাসিক মহিলা কলেজের একজন ছাত্রী বলেন, ‘বছর দেড়েক আগে দুই পরিবারের সম্মতিতে আমার বিয়ে হয়। স্বামী এসএসসি পাস করতে পারেনি, পোলট্রি খাদ্যের ব্যবসা করেন। স্বামীর চেয়ে বেশি শিক্ষিত হলে তাকে মানব না, এ যুক্তিতে সে আমাকে পড়াতে চায় না। ছাত্রীনিবাসে থাকার খরচও দেয় না। কয়েক দিন আগে শুনলাম, আমার স্বামী আমাকে তালাক দিয়েছে এবং আরেকটি বিয়েও করেছে। তবে এখনো আমি তালাকনামা পাইনি। এখন বাধ্য হয়েই আমার পরিবার মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।’

আরেকজন ছাত্রী জানালেন, স্বামী বিয়ে করে ১৫ দিনের মাথায় বিদেশ চলে যান। বিয়ের সময় শর্ত ছিল, স্ত্রীকে পড়াশোনা করতে দেওয়া হবে। কিছুদিন পর স্বামী বিদেশ থেকে সাফ বলে দেন, আর পড়াশোনা করা যাবে না। মেয়েটি পড়াশোনা চালিয়ে গেলে স্বামী ভরণপোষণ বন্ধ করে দেন। দুই বছর স্বামী খোঁজ না নেওয়ায় স্ত্রীই তালাক দেন।২০২০ সালে সখিপুরের কাঁকড়াজান ইউনিয়নে বিয়ে হয়েছে ৪৮টি আর বিচ্ছেদ হয়েছে ৬২টি; কালিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ১৩০, বিচ্ছেদ ১০২; বহুরিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ৩৮, বিচ্ছেদ ১৫; হাতীবান্ধা ইউনিয়নে বিয়ে ৬২, বিচ্ছেদ ৫২, যাদবপুরে বিয়ে ১০৬, বিচ্ছেদ ২৫; গজারিয়া ইউনিয়নে বিয়ে ৪৩, বিচ্ছেদ ২৬; বহেড়াতৈল ইউনিয়নে বিয়ে ৩১, বিচ্ছেদ ৩৯ এবং দাড়িয়াপুর ইউনিয়নে বিয়ে ৭২ ও বিচ্ছেদের সংখ্যা ৩২। পৌরসভার ৪টি কার্যালয়ে ২২৭টি বিয়ে হলেও বিচ্ছেদ ঘটেছে ১২৩টি

সখিপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা কাজি সমিতির সভাপতি শফিউল ইসলাম (কাজি বাদল) বলেন, বাল্যবিবাহ, স্বামীর বিদেশে থাকা, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কসহ নানা জটিলতা নিয়ে প্রথমে দুই পরিবারে ফাটল ধরে, পরে তা বিচ্ছেদে রূপ নেয়। প্রশাসনের তৎপরতায় আগের তুলনায় এখন বাল্যবিবাহ কম হচ্ছে। ফলে আগের চেয়ে বিবাহবিচ্ছেদও অনেকটা কমে আসছে।এ ব্যাপারে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা ফিরোজা আক্তার বলেন, যুগ যুগ ধরে পুরুষের অত্যাচার সহ্য করে নীরবে নারীরা সংসার করেছে। এখন মেয়েরা সচেতন ও শিক্ষিত। অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ায় সমাজে তাঁদের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে এখন মেয়েরা আর আগের মতো নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে চান না।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ