Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নদীভাঙনে দিশেহারা কয়রাবাসী

টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি

মোস্তফা শফিক, কয়রা (খুলনা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

খুলনার সুন্দরবন উপক‚লের কয়রায় প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনে পাউবোর বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে এলাকার মানুষ চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। একবার বাঁধ ভেঙে গেলে তা মেরামত করা এলাকার মানুষের পক্ষে দুঃসাধ্য ব্যাপার। ষাটের দশকে নির্মিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের ওয়াপদা বাঁধে সুদীর্ঘ সময় নিয়মিত মাটির কাজ না হওয়ায় বাঁধের বেশিরভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বর্তমানে নাজুক আকার ধারণ করেছে। জরুরি ভিত্তিতে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি এলাকাবাসীর।
কয়রা উপজেলা জলবায়ু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ অদ্রিশ আদিত্য মন্ডল বলেন, উপজেলার গোলখালি, আংটিহারা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙা, মেদেরচর, চরামুখা, হরিহরপুর, গাববুনি, কাটকাটা, গাজীপাড়া, কাশিরহাট, হাজতখালি, ৬নং কয়রা, ৪নং কয়রা, ঘাটাখালি, ২নং কয়রা, গোবরা, ঘাটাখালী, মদিনাবাদ লঞ্চঘাট, লোকা, দশালিয়া, মঠবাড়ি, নয়ানি, শিকারিবাড়ির ওয়াপদা বাঁধের ৪০ কিলোমিটারের বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বেড়িবাঁধ নিচু ও চিকন হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমের আগে এ সকল বাঁধে কাজ করা না হলে যে কোন মুহূর্তে এ সব এলাকার বাঁধ ভেঙ্গে প্লাাবিত হওয়ার শংখা রয়েছে।
এলাকাবাসী জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতে পাউবোর ১৩-১৪/১ পোল্ডারের শাকবাড়িয়া নদীর খাসিটানা বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে দু’বছর দক্ষিণ বেদকাশির হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি লানা পানিতে তলিয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের ২৫ মে আরেকটি ঘূর্ণিঝড় আইলার জলোচ্ছাসে পাউবোর ১৩-১৪/১ পোল্ডারের হারেজখালি, পদ্মপুকুর ও ১৩-১৪/২ পোল্ডারের পাথরখালি, মঠবাড়ি, শিকারিবাড়ি বেড়িবাঁধ ভেঙে একটানা তিন বছর উপজলা সদরসহ ৪টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি লোনা পানিতে তলিয়ে বিপর্যস্ত হয় কয়রার জনপদ। দীর্ঘ সময় ধরে জোয়ার-ভাটা ওঠামানায় কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর ভাঙন প্রকট হতে থাকে। একইভাবে ২০২০ সালের ২০ মে অনুরূপ ঘুর্ণিঝড় আম্পানের কয়রা সদরের ঘাটাখালি, ২নং কয়রা, উত্তর বেদকাশির কাশিরহাট, হাজতখালি, রত্মারঘেরি ও গাজীপাড়ার কপোতাক্ষ নদের পাউবোর বেড়িবাঁধ ভেঙে সবকিছু লন্ডভন্ড হয়ে যায়। কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়ার নদীর তীব্র ভাঙনে ৩০ কিলোমিটারের বেশি বাঁধ চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে চরামুখা, মেদেরচর, মাটিয়াভাঙা, গাববুনির বেড়িবাঁধ ডিপিএমের মাধ্যমে সংস্কার করা হলেও সিডিউল অনুযায়ী করা হচ্ছে না বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে। এ সকল জায়গায় ড্যাম্পিংয়ে ফেলোনো জিওব্যাগে বালুর পরিমানও কম দেয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী অনিয়মের বিষয়টি পাউবো কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও কার্যক্ররি কোন ব্যবস্থা না করায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান জিএম কবি শামছুর রহমান বলেন, গত ১০ বছর ধরে শুনছি বিশ্বব্যাংক ও জাইকা নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করবে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সভা সেমিনারে বেড়িবাঁধ নিয়ে বহুবার কথা বলেছি, কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে অনেক মানুষ সর্বশান্ত হয়ে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। স্থায়ী বসবাসের জন্য তিনি সরকারের কাছে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জোর দাবি জানান।
উত্তর বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান সরদার নুরুল ইসলাম কোম্পানি বলেন, আম্পনে বাঁধ ভেঙে গিয়ে কাশিরহাট, গাজীপাড়া, রত্মারঘেরি ও হাজতখালি এলাকার ২০ একরের বেশি ফসলের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখানকার অর্ধশত পরিবার হারিয়েছে তাদের বসতভিটা। আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কাশিরহাটের বাঁধ গত সপ্তাহে সেনাবাহিনীর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঈগল রিজড মেরামত সম্পন্ন করেছে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ ছাড়া এখানকার মানুষের টিকে থাকা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
পাউবোর সাতক্ষীরা জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশ সরকার বলেন, আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রার বাঁধ সেনাবাহিনীর সহায়তার ইতোমধ্যে মেরামত সম্পন্ন হয়েছে। বরাদ্দ সাপেক্ষ ঝুঁকিপূর্ণ পাউবো টেকসই বাঁধ নির্মানে কাজ শুরু করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ