পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রিয় নবীজী (সা.) তাঁর এক প্রিয় সাহাবী হযরত আবু যর (রা.)-কে বলেছিলেন : কোনো ভালো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না, এমনকি তা যদি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করার বিষয়ও হয়। (সহীহ মুসলিম : ২৬২৬)।
কতভাবেই তো আমরা একে অন্যের মুখোমুখি হই। নিজের প্রয়োজন নিয়ে অন্যের কাছে যাই। আবার অন্যের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যও তার পাশে গিয়ে দাঁড়াই। কখনো সাক্ষাতের পেছনে থাকে লেনদেন বা এজাতীয় কোনো বিষয়। নিরেট সৌজন্য সাক্ষাতের জন্যও আমরা একে অন্যের কাছে যাই। সমাজের স্বাভাবিক বাস্তবতায় এগুলোর কোনোটিকেই অস্বীকার কিংবা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।
পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলা, মুখ ভার করে গোমড়ামুখে না থাকাÑ এগুলো ভদ্রতা, সামাজিকতা ও মানবিকতার দাবি। তবে আমাদের জন্য তা এখানেই শেষ নয়। কাজটি সওয়াবের এবং পরকালে তা আমাদের মুক্তির অবলম্বনও হতে পারে। সাধারণ দৃষ্টিতে বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। কিন্তু কারো আচরণে যখন কেউ আঘাত পায়, কাক্সিক্ষত স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক আচরণ না পেয়ে হতাশ হয়, তখন অনুভূত হয় এর অপরিহার্যতা।
পরকালীন হিসাব-নিকাশে যার বিশ্বাস আছে, হাশরের ময়দানের আদালতে উপস্থিত হওয়ার ভয় যার মনে আছে, সে যেমন বাহ্যত ছোট কোনো মন্দ কাজে সাগ্রহে জড়াতে পারে না, তেমনি ক্ষুদ্র কোনো ভালো কাজও অবহেলায় ছেড়ে দিতে পারে না। যে আমলনামা সামনে রেখে ঐদিন বিচার হবে, তা তো এমন : ছোট-বড় কোনো কিছুই তা ছেড়ে দেয় না, সবই হিসাব করে রেখেছে। (সূরা কাহাফ : ৪৯)।
নবীজী (সা.)ও আমাদের এ উপদেশই দিচ্ছেনÑ কোনো ভালো কাজকেই ছোট মনে করবে না, তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বাভাবিক সৌজন্য রক্ষা করার মতো বিষয়কেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করো।
ইসলামের এ এক অনন্যসাধারণ সৌন্দর্য যে, আমাদের যাপিত জীবনের স্বাভাবিক যত দিক রয়েছে, সেসব নিয়েও কুরআন-হাদিসের পাতায় পাতায় ছড়িয়ে আছে আমাদের জন্য অজস্র উপদেশ। ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সা.) সেসব উপদেশ ও শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়িত করেও দেখিয়েছেন।
হাসিমুখে পারস্পরিক সাক্ষাৎ এমনই একটি বিষয়। রাসূলুল্লাহ (সা.) যেমন এ বিষয়ে আমাদের উৎসাহিত করেছেন, তেমনি নিজেও ছিলেন এর এক সার্থক দৃষ্টান্ত। তাঁর এক প্রিয় সাহাবীর নাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস রা.। তিনি বলেছেন, মুচকি হাসিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে অগ্রগামী কাউকে আমি দেখিনি। (শামায়েলে তিরমিযী : ২২৭)।
হাসিমুখে সাক্ষাতের গুরুত্ব বেশ পরিষ্কার হয়ে ফুটে ওঠে তাবেয়ী হযরত মায়মুন ইবনে মিহরানের এক বক্তব্যে। তিনি বলেছেন : যখন তোমার বাড়িতে কোনো অতিথি আসে তখন তার আতিথেয়তায় তোমার সাধ্যের বাইরে কিছু করতে যেও না। তোমার পরিবারের সদস্যদের যা খাওয়াবে, তাকে সেখান থেকেই খেতে দাও। আর তার সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করো। তুমি যদি তোমার সাধ্যের বাইরে তার জন্য কিছু করতে যাও তাহলে হতে পারে তুমি (তোমার অজান্তেই) তার সঙ্গে এমন আচরণ করবে, যা তার কাছে অপ্রীতিকর মনে হবে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকী : ৯১৬৫)।
আরেক হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন-
প্রতিটি ভালো কাজই সদকা। আর তুমি তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করবে, তোমার পানির পাত্র থেকে তার পাত্রেও একটু পানি ঢেলে দেবে-এগুলোও ভালো কাজ। Ñজামে তিরমিযী, হাদিস ১৯৭০
একবার গ্রামাঞ্চল থেকে এক কাফেলা এসে বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা গ্রামের মানুষ। আমাদের কাজে লাগবে এমন কিছু আপনি আমাদের শিখিয়ে দিন। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরও একই উপদেশ দিলেন : ভালো কোনো কাজকেই তুচ্ছ মনে করবে না। এমনকি কেউ যদি একটু পানি চায় তাহলে তোমার (পানিভর্তি) বালতি থেকে তার পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেয়া, তোমার ভাইয়ের সঙ্গে প্রসন্ন মুখে কথা বলাÑ এগুলোকেও নয় (সংক্ষেপিত)। (মুসনাদে আহমাদ : ২০৬৩৩)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।