বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুমিল্লার দেবিদ্বারে খরস্রোতা গোমতী নদী এখন মাটি খেকো সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে মৃত প্রায়। এ গোমতীর মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন ইটভাটায় বিক্রি করে বছরে কয়েক’শ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একশ্রেণীর প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছেনা ওই সিন্ডিকেট।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলায় গোমতী নদীর প্রায় অর্ধশত স্পট দিয়ে চলছে অবৈধ ভাবে মাটি ও বালু উত্তোলনের মহাযজ্ঞ। নম্বরবিহীন ট্রাক্টরে করে বিভিন্ন ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে গোমতীর উর্বর মাটি। মাটি বোঝাই ট্রাক্টরের চলাচলে প্রতিরক্ষা বাঁধের ওপর নির্মিত গোমতীর ব্রীজ ও পিলারের মাটি সরে গিয়ে পড়ছে হুমকির মুখে। কয়েক মাস না যেতেই খানাখন্দে ভরা পাকা সড়কে চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়ে। প্রায় অর্ধশত জায়গায় প্রতিরক্ষা বাঁধ কেটে ট্রাক্টর উঠানামা করায় ধুলাবালিতে একাকার নদীর দু’পাড় ও কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের পরিবেশ।
তবে নদী পাড়ের বাসিন্দারা দুষছেন প্রশাসনকে। তারা দৈনিক ইনকিলাবকে বলছেন, প্রশাসনের সুষ্ঠু নজরদারির অভাবে প্রভাবশালীরা শতাধিক চক্রের মাধ্যমে বছরের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নদীর দু’পাড়ে ড্রেজার ও ভেকু লাগিয়ে বেপরোয়া ভাবে দিন-রাত অবৈধভাবে বালু ও মাটি উত্তোলনে ভেঙে পড়ছে নদীর দু’পাশের তীর। ক্ষতির সম্মুখীন প্রতিরক্ষা বাঁধ ও ব্রীজ।
দেবিদ্বার উপজেলার চরবাকর, লক্ষীপুর, কালিকাপুর, বড় আলমপুর, শিবনগরসহ আশ-পাশের অঞ্চলে সরেজমিন ঘুরে আরও জানা যায়, একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গোমতী নদীর শতাধিক পয়েন্ট থেকে প্রায় ৫০০শ’ নম্বরবিহীন ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরিয়ে নিচ্ছে। মাটি কাটার কয়েকজন শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, গোমতীর মাটি কাটার একাধিক ঘাট রয়েছে, এ ঘাটগুলো একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলে। এদের মধ্যে রয়েছে, চরবাকরের জামির হোসেন, বিল্লাল হোসেন, হোসেন মিয়া, আবুল কালাম, শাজারুল, শরীফুল ইসলাম, জামাল হোসেন, আমির হোসেন, রমিজ মিয়া, চরবাকর ডোনের বাড়ির জামাল হোসেন, আবু ইউসুফ, আবদুল কাদের, হোসেন পুরের মোল্লা আজিম, বেগমাবাদের কবির হোসেন, আবদুল মজিদ, লক্ষীপুরের আজাদ মোল্লা, লিটন মিয়া, চানপুরের কাজী বিল্লাল, কালিকাপুরের শিষন মিয়া, জাফরগঞ্জের আবু তাহের, মীর আবু তাহের, উটখাড়ার খলিল মিয়া, খয়রাবাদের আবদুল বাতেন, ইফাদসহ সিন্ডিকেটের কমপক্ষে দুই’শ সদস্য।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, রাজনৈতিক পরিচয়ে বালু উত্তোলনসহ মাটি কেটে বিক্রি করছে প্রভাবশালীরা। তাই অনেক সময় আমাদের পক্ষে বাধা দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। বালু উত্তোলন ও মাটি কেটে ভারী যানবাহন দিয়ে সেগুলো পরিবহন করায় বাঁধ ও পাকা সড়ক নষ্ট হচ্ছে। নদী এলাকার ভুক্তভোগী শাহ আলম, আবদুল করিম, চরের কৃষক আবুল মিয়া, ময়নাল হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আতাঁত করে একটি চক্র গোমতী নদীর বিভিন্ন এলাকায় বালু উত্তোলন অবৈধভাবে মাটি কেটে বিক্রি করছে। ট্রাক্টরের বালুতে বাড়িঘর অন্ধকার হয়ে যায়। কেউ প্রতিবাদ করলে হত্যাসহ বিভিন্ন হুমকি দেয়ায় কেউ সাহস করে কথা বলে না। এ ব্যাপারে সিন্ডিকেট সদস্য চরবাকরের বিল্লাল হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, আমি ৪টি ট্রাক্টর দিয়ে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি সরবরাহ করে থাকি। প্রতি ট্রাক্টর ৬৫০ টাকা থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়। অপর সদস্য শাজারুল ইসলাম দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কয়েকটি ঘাট থেকে আমরা মাটি ক্রয় করে থাকি, তবে তা মালিকের রেকর্ডভুক্ত জায়গা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, প্রতি বছরই মাটি ও বালুদস্যুদের কারণে গোমতী নদী নাব্যতা হারিয়ে দিনে দিনে সরু খালে পরিণত হচ্ছে। এতে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল লতিফ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক সভায় নির্দেশ দিয়েছেন কোথাও নদী থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। আমরা দ্রুত তা বন্ধ করার চিন্তা করছি। এ সমস্যায় পুরো কুমিল্লাবাসীর দায় রয়েছে, আপনারা সবাই এগিয়ে এলে এ সমস্যা দ্রুত সমাধান করা সম্ভব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।