Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার একের পর এক কৃতিত্বের বিশ্বরেকর্ড গড়ছে: রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১:৪০ পিএম

সরকার একের পর এক কৃতিত্বের বিশ্বরেকর্ড গড়ে চলেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, গুম-খুন, শেয়ারবাজার লুট, ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ, পর্দা-বালিশ থেকে শুরু করে প্রতিটি সরকারি কেনাকাটায় সাগরচুরি, নির্মানকাজে রডের বদলে বাঁশ ব্যবহার, জিপিএ-ফাইভ উলম্ফন, পরিবেশ দূষণ, মাদকের বিস্তার, কেসিনো অর্থনীতি চালু, বিদ্যুৎখাতের হরিলুটকে ইন্ডেমনিটি দেয়া, বিরোধী দল দমনে মিথ্যা মামলা ও গ্রেফতারিসহ সরকার একের পর এক অপরিসীম ‘কৃতিত্বের’ বিশ্বরেকর্ড গড়ে চলেছে। এসব রেকর্ড থেকে জনগণের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ফেরাতে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব উৎপাদন ও বিতরণে বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রীদের মতো পারঙ্গম আর কেউ আছেন কিনা তা আমাদের জানা নেই। শেখ হাসিনার সরকার অত্যন্ত ষড়যন্ত্র অভিলাষী সরকার। তারা যখন খুব বিচলিত হয়ে পড়ে তখন ষড়যন্ত্রতত্ত্বের কথা বলে অকথ্য, অশ্লীল, অসত্য ও অসভ্য প্রপাগান্ডা আওয়ামী লীগের একমাত্র হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। কারণ তারা সম্পূর্ণরুপে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরে গেছে।

বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

আদালতকে ব্যবহার করে নির্দোষ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সাজা দেয়ার ক্ষেত্রে সরকারের বিশ্বরেকর্ড রয়েছে মন্তব্য করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এর শিকার হয়েছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান এবং বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের লাখ লাখ নেতাকর্মী। সাজানো ঘটনায় মিথ্যা মামলা দিয়ে দেশব্যাপী একের পর এক বিএনপির নেতৃবৃন্দকে গ্রেফতারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়ে কারাগারে ভরে রাখা হচ্ছে। তার সর্বশেষ শিকার হলেন বিএনপির প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক সাবেক এমপি হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির ৫০ জন নেতাকর্মী। ২০০২ সালে শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার মিথ্যা অভিযোগে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা দেয়া হয়। অথচ সেদিন হাবিবুল ইসলাম হাবিব ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

তিনি বলেন, আওয়ামী সরকার বিএনপিকে ধারাবাহিকভাবে ধ্বংস করার অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন পর এই মামলাটি পুনরুজ্জীবিত করে। বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর কপালে দুঃশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। নিজেদের নির্দয় দুঃশাসন ও কুৎসিত মাফিয়া শাসনের ঘটনা দেশে-বিদেশে প্রচারকে আড়াল করতেই তড়িঘড়ি করে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরার স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দকে সাজা দেয়া হলো। দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা এড়াতেই সাজানো আদালতকে দিয়ে ইন্সট্যান্ট প্রতিহিংসা পূরণ করতে পারদর্শী শেখ হাসিনা হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ বিএনপির নেতৃবৃন্দকে সাজা দিলেন। এই মিথ্যা মামলাটিকে যে আওয়ামী লীগ প্রতিশোধ গ্রহণের খেলায় মেতেছে তার প্রমাণ ঢাকা থেকে একজন এডিশনাল এটর্নি জেনারেল ও তিনজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলকে সাতক্ষীরায় পাঠানো হয়েছিল মামলাটিকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার জন্য, যা নজীরবিহীন ঘটনা। জেলা পর্যায়ে সরকারের পক্ষে পিপি এপিপিরাই মামলা পরিচালনা করেন, সেখানে একজন এডিশনাল এটর্নি জেনারেলসহ তিনজন ডেপুটি এটর্নি জেনারেলের উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে, উক্ত মামলায় শেখ হাসিনার ইচ্ছাই পূরণ হবে। হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সাতক্ষীরা বিএনপির নেতৃবৃন্দের নামে সাজা সুপরিকল্পিত এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধ গ্রহণ। তিনি বিএনপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ সকল নেতৃবৃন্দের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে মুক্তির দাবি জানান।

রিজভী বলেন, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব লায়ন আসলাম চৌধুরী দীর্ঘ ষড়যন্ত্রমূলক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলায় দীর্ঘ পাঁচ বছর কারাগারে বন্দী আছেন। প্রায় শতাধিক মামলায় জামিন হয়ে জেলখানা থেকে বের হওয়ার সময় শাহবাগ থানা মিথ্যা মামলায় জামিন হওয়ার পরেও বুধবার কোতোয়ালি থানার মামলায় শ্যোন এরেস্ট দেখায়। তিনি আসলাম চৌধুরীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহারসহ কারামুক্তির জোর দাবি জানান।

পৌর নির্বাচনের ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বারইয়ারহাট পৌরসভা নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলম মিয়াজীর সমর্থনকারী ছিলেন আলমগীর রাসেল। গতরাত ৯টায় তার বাড়ির সামনে থেকে তাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় নৌকা মার্কার প্রার্থীর সন্ত্রাসীরা। আলমগীর রাসেল হচ্ছেন মীরশরাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মরহুম নুরুল আফসার মিয়াজির ছেলে। গতকাল সকাল ৭ টায় নুরুল আফসার মিয়াজি ইন্তেকাল করেছেন অথচ রাত ৯ টায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার ছেলেকে উঠিয়ে নিয়ে গেলো। তিনি এই ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং অবিলম্বে আলমগীর রাসেলকে তার পরিবারসহ সর্বসম্মুকে উপস্থিত করার আহবান জানান।

এছাড়া মাদারীপুর জেলাধীন শিবচর পৌরসভা নির্বাচনে ধানের শীষের প্রার্থী ছিলেন রফিকুল ইসলাম। যেদিন বিএনপির কার্যালয় থেকে তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন নিয়ে এলাকায় ফেরার পথে অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে তুলে নিয়ে যায়। গতরাত ১২টায় রাজধানীর মিরপুর এলাকায় একটি মাইক্রোবাস তাকে ফেলে রেখে যায়। গতকাল ছিল শিবচর পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। তিনি যাতে মনোনয়ন পত্র জমা দিতে না পারেন সেজন্যই আওয়ামী দুস্কৃতিকারিরা তাকে অপহরণ করে।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, উল্লিখিত ঘটনাগুলো আওয়ামী অপশাসনেরই বাইপ্রোডাক্ট। গণতন্ত্র ও নির্বাচনকে শেখ হাসিনা যে জ¦রাগ্রস্ত করেছেন এটি তারই প্রমাণ। ভোটাররা হয়ে পড়েছে অসহায় ও নিরুপায়। বন্ধ্যা ভোটব্যবস্থায় শেখ হাসিনা আত্মতৃপ্তি লাভ করেন। আওয়ামী সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গুম ও ক্রসফায়ারে হত্যার যে রেকর্ড গড়েছে তা অন্যান্য দেশের নিষ্ঠুর স্বৈরশাসককেও বিচলিত করবে। রিমান্ডের নামে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শারীরিকভাবে টর্চার করা আওয়ামী লীগের কালচারে পরিণত হয়েছে। বিএনপিসহ লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলায় সরকার দেশের মধ্যে যে বৃহত্তর কারাগার তৈরী করেছে সেই দেশটির এখন কোন মানবিক মুখমন্ডল নেই। বর্তমান মানবতার অস্তিত্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতি সরকারের অসৎ অনাচারের সারাংশ মাত্র। দেশের মানুষ ভয়-ভীতি-আতঙ্কের এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিন যাপন করছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রিজভী

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ