বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
‘গরীবের পুষ্টির যোগানদাতা’ মিষ্টি আলুর আবাদ ও উৎপাদনে এবারো দক্ষিণাঞ্চল শীর্ষস্থান লাভ করেছে। মানবদেহে অধিক ক্যালরির উৎস মিষ্টি আলু দেশের অনগ্রসর মানুষের স্বল্প ব্যয়ে পুষ্টির ভাল যোগানদাতা বলে বিবেচিত হয়ে আসছে। এ পুষ্টিকর খাবার সাধারণ মানুষের সারাদিনের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে থাকে। কৃষি বিজ্ঞানী ও পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, হলুদ ও রঙ্গিন শাঁসযুক্ত মাত্র ১৩ গ্রাম মিষ্টি আলু একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের প্রতিদিনের ভিটামিন-এ’র চাহিদা পুরণে সক্ষম। এমনকি মিষ্টি আলু শিশুদের রাতকানা রোগ সহ যেকোন বয়সী মানুষের দৃষ্টি শক্তি স্বল্পতার আশংকা থেকেও নিরাপদ রাখার সহায়ক খাদ্য।
‘ বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনষ্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে অন্তত ১০টি উন্নত জাতের, উচ্চ ফনশীল ও পুষ্টি সমৃদ্ধ মিষ্টি আলুর জাত উদ্ভাবন করেছেন। যার উৎপাদনও আমাদের সনাতন জাতগুলোর প্রায় তিন থেকে ৪ গুন। মিষ্টি আলুর দেশী জাতগুলো থেকে হেক্টর প্রতি ১০ টনের মত আলু উৎপাদন হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি), বারি মিষ্টি আলু-২ (কমলা), বারি মিষ্টি আলু-৩ (দৌলতপুরী), বারি মিষ্টি আলু-৪, বারি মিষ্টি আলু-৫, বারি মিষ্টি আলু-৬, বারি মিষ্টি আলু-৭, বারি মিষ্টি আলু-৮ ও বারি-মিষ্টি আলু-৯’ জাতগুলোর হেক্টর প্রতি উৎপাদন ৩০-৪০ টন পর্যন্ত। এমনকি এসব মিষ্টি আলু সাধারন সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাবারের বাইরেও জ্যাম, জেলী, চিপস, মিষ্টি ও হালুয়া সহ বিভিন্ন ধরনের পুষ্টিকর খাবার তৈরী সম্ভব। যা থেকে গ্রামের গৃহবধু থেকে বেকার যুব সমাজও একটি ভাল আয়ের উৎস্য খুজে পেতে পারে। তবে সুদূর অতীতকালের এ খাদ্য ফসলের বহুমুখী ব্যবহার এখনো সম্প্রসারন লাভ করেনি।
চলতি বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে ৭ লক্ষাধীক টন মিষ্টি আলু উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারন করা হলেও এর আবাদ অনায়াসেই ৫০ হাজার টনে উন্নীত করা সম্ভব। ফলে উৎপাদনও ১০ লাখ টন অতিক্রম করতে পারে। চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ১২ হাজার ৫৮২হেক্টরে মিষ্টি আলুর আবাদ লক্ষ্য নির্ধারিত ছিল। উৎপাদন লক্ষ্য রয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজার টনের কিছু বেশী। তবে নদ-নদী বেষ্টিত দক্ষিণাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ দ্বিগুন করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।
উৎপাদনের দিক থেকে দেশে খাদ্য ফসলের মধ্যে মিষ্টি আলুর অবস্থান চতুর্থ। তবে উৎপাদন এলাকার বাইরে এ ফসলের এখনো তেমন প্রচলন নেই। এখনো দেশে মোট উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় ৪০ ভাগ দক্ষিণাঞ্চলে আবাদ হচ্ছে। পটুয়াখালী ও ভোলা সহ দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলার চরাঞ্চলে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়ে আসছে সুদূর অতীতকাল থেকে। এমনকি ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেয়াও সম্ভব হয়নি। বারি উদ্ভাবিত এসব উন্নতজাতের মিষ্টি আলুর জাতের লতা বা বীজগাছ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে পৌঁছে দিতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই ও তার মাঠ কর্মীদের খুব একটা আগ্রহী ভূমিকা নেই বলেও অভিযোগ রয়েছে। অথচ চলতি মৌসুমেও দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে যে পরিমান জমিতে মিষ্টি আলুর আবাদ হয়েছে, সেখানে উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলুর আবাদ নিশ্চিত করতে পারলে দক্ষিণাঞ্চলেই উৎপাদন দ্বিগুণ করা সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীগন।
অথচ ‘বারি’ ফিলিপাইন থেকে ১৯৮১ সালে ‘টিনিরিনিং’ নামের একটি লাইন সংগ্রহ করে অন্যান্য জার্ম-প্লাজামের সাথে উপযোগিতা যাচাইয়ের মাধ্যমে গবেষনা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘বারি মিষ্টি আলু-১ (তৃপ্তি)’ নামে অনুমোদন প্রদান করে মাঠ পর্যায়ে আবাদের জন্য ছাড় করে। এ জাতে মিষ্টি আলুর কান্ড ২শ’ থেকে আড়াইশ গ্রাম। তবে কোন কোন সময়ে একটি মূল দেড় কেজি পর্যন্ত হতে পারে। এ আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে প্রায় সাড়ে ৪শ’ আই ইউ ‘ভিটামিন এ’ থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এর উৎপাদন হেক্টর প্রতি ৪০-৪৫ টন পর্যন্ত হয়ে থাকে।
তাইওয়ানের এশীয় সবজি গবেষনা ও উন্নয়ন কেন্দ্র থেকে ১৯৮০ সালে একটি লাইন সংগ্রহ করে জার্ম প্লাজামের সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ১৯৮৫ সালে ‘কমলা সুন্দরী বা বারি মিষ্টি আলু-২’ নামের জাতটি অনুমোদনের মাধ্যমে আবাদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এ মিষ্টি আলুর ১শ’ গ্রাম শাঁসে সাড়ে ৭ হাজার আই ইউ ভিটামিন-এ রয়েছে। এসব উচ্চ ফলনশীল মিষ্টি আলু আবাদের ১৩৫ থেকে ১৪৫ দিনের মধ্যেই ফসল ঘরে তোলা সম্ভব।
মধ্য অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যভাগ পর্যন্ত দোআঁশ ও বেলে মাটিতে মিষ্টি আলু আবাদের উপযুক্ত সময়। পরিমিত পরিমাণ গোবর, টিএসপি, ইউরিয়া ও এমপি সার প্রয়োগের মাধ্যমে মিষ্টি আলুর অত্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া যায়। জমির আর্দ্রতার ওপর নির্ভর করে প্রয়োজনে ২-৩টি সেচ প্রদান করতে হয়। দক্ষিণাঞ্চলের চর অঞ্চলের বেলে দো আঁশ মাটি মিষ্টি আলু আবাদের জন্য যথেষ্ট উৎকৃষ্ট। চরাঞ্চলে নভেম্বরের শেষভাগ পর্যন্ত মিষ্টি আলুর আবাদ সম্ভব ।
বারি উদ্ভাবিত কমলা সুন্দরী, বারি মিষ্টি আলু-৪ ও ৫’এ প্রচুর পরিমানে ক্যারোটিন রয়েছে। যা ভিটিমিন-এ’র একটি ভাল উৎস। চলতি মৌসুমে সারা দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ৭ লাক্ষাধীক টনের মত মিষ্টি আলু উৎপাদনের আশা করছে কৃষি মন্ত্রনালয় সহ ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র। গত বছর দেশে প্রায় ৩৭ হাজার হেক্টরে প্রায় ৭ লাখ টন মিষ্টি আলু উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে বরিশাল অঞ্চলেই উৎপাদন ছিল আড়ই লাখ টন। আগামী মাসেই বাজারে নতুন মিষ্টি আলু উঠতে শুরু করবে। প্রতি কেজি আলু ৩০-৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঠ পর্যায়ে কৃষকরা কখনোই গড়ে ১৫ টাকার বেশী দাম পায়না। তবে তা গোল আলুর চেয়ে কিছুটা ভাল দাম বলে মনে করলেও আবাদ ও উৎপাদন ব্যায়ের তুলনায় খুব ভাল নয় বলে জানিয়েছেন কৃষকগন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।