Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উচ্চশিক্ষা নিয়ে শঙ্কা

বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সঙ্কট

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে ২০২০ সালের নিবন্ধনকারী ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জনের সকলেই এইচএসসি, আলিম ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার অবসান হয়েছে শিক্ষার্থীদের। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আনন্দের বন্যা বইছে। তবে এর সাথে যুক্ত হচ্ছে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তুমুল প্রতিযোগিতার ভবিষ্যতও। কারণ বিগত বছরগুলোতে পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকেই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে, বিশেষ করে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ভালো মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হতো। যার বেশিরভাগই জায়গা পেতো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা তুলনামূলক নতুন ও নিম্ন মানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেরা সাফল্য জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেননি অনেক শিক্ষার্থীই। শুধু দেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, ভালো মানের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হিমশিম খেতে হয়েছে তাদের। তবে এবারের পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। কারণ অটোপাসে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে রেকর্ড সংখ্যক ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে পরিমাণ আসন রয়েছে তার চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী পাস হওয়ায় সঙ্কট দেখা দেবে ভর্তির ক্ষেত্রে।

সংশ্লিষ্টরা প্রশ্ন তুলেছেন, পাস করা এতসংখ্যক শিক্ষার্থী কি উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে পারবে? ভর্তি হলেও কিভাবে সেই প্রক্রিয়া শেষ হবে? বাংলাদেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তির জন্য পর্যাপ্ত আসন রয়েছে কি? এর জবাবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বলছে, উচ্চশিক্ষায় আসন সংকটের কোনো কারণ নেই। পর্যাপ্ত আসন রয়েছে। তাছাড়া উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ও না। জীবিকার তাগিদে অনেকেই বিভিন্ন পেশায় যুক্ত হয়ে যায়, কেউ কেউ পাড়ি জমায় প্রবাসেও।

অনেকের ধারণা, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হতে না পেরে বহু শিক্ষার্থী এবার নিম্নমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবে। কারণ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আসন খুবই সীমিত আর ভালোমানের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রতিযোগিতা। ফলে এবার বিনা পরীক্ষায় এইচএসসিতে উত্তীর্ণ হওয়া দুর্বল শিক্ষার্থীরা সহজ লক্ষ্য হিসেবে নিম্নমানের কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নেবে। আর এতেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পোয়াবারো।

ইউজিসির সচিব ফেরদৌস জামান বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তিযোগ্য আসন আছে পৌনে ১৩ লাখের কিছু বেশি। কাজেই ভর্তির জন্য আসন সংকট হচ্ছে না।

এইচএসসি, আলিম ও সমমানের ফলাফল থেকে জানা যায়, ২০২০ সালের পাস করা শিক্ষার্থী ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের হিসেব অনুযায়ি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজ ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে ৮ লাখ ৬০ হাজারের মতো। এছাড়া পাস কোর্সের কলেজগুলোতেও রয়েছে বেশ কিছু সংখ্যক আসন।

এসব আসনে ভর্তির জন্য নতুন পাস করা শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ২০১৯ সালের উত্তীর্ণ অনেকই ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হবেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন সূত্রে জানা যায়, ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে ৩৯টি। এই ৩৯টি পাবলিক এবং ১০১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা রয়েছে ৪ লাখে কাছাকাছি। উচ্চশিক্ষায় মোট আসনের মধ্যে শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৪৭ হাজার ৪০৭টি। মেডিকেল, মেরিন ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ মিলিয়ে আসন আছে ১৩ হাজার ৩৬৮টি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে ৩ লাখ ২৫ হাজার। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোতে স্নাতকে (সম্মান) ও (পাস কোর্স) আসন আছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০০টি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন আছে প্রায় ৩৪ হাজার। ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ৫৩ হাজার ১৪৮টি আসন। এ ছাড়া অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও আরও কিছু আসন আছে।

ফল বিশ্লেষণে করে দেখা গেছে, এবার পাস করেছে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। জিপিএ-৫ থেকে ৪ পেয়েছেন ৪ লাখ ৯৯ হাজার ৭৪০ জন, জিপিএ-৪ থেকে ৩ দশমিক ৫ পেয়েছে ৩ লাখ ৪ হাজার ১৪৪ জন, জিপিএ-৩ দশমিক ৫ থেকে ৩ পেয়েছে ২ লাখ ১৭ হাজার ৯৬৩জন।

জিপিএ-৩ এর কম পাওয়া শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির আবেদন করতে পারবে না। অর্থাৎ জিপিএ-৩ এর কম ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭২৩ জন। এসব শিক্ষার্থীর বেশিরভাগই ডিগ্রি কিংবা পাস কোর্সে ভর্তির চেষ্টা করবে।

অন্যদিকে উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল ফল করা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরই স্বপ্ন মেডিকেল, বুয়েট বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া। ভাল ফল এমনকি জিপিএ-৫ পেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীদের কলেজে পড়তে হবে। যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় তার মধ্যে সবার পছন্দ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন রয়েছে প্রায় ৭ হাজার। বুয়েটে আসন রয়েছে ২ হাজার ১০২টি, সরকারি মেডিকেল কলেজে ৩ হাজার ৩১৮টি, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৭০০টি, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৬৭৪টি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২ হাজার ৪২০টি।

ইউজিসির একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিবছরই আসন বৃদ্ধি করা হয়। ফলে আসন সমস্যার জন্য কেউ ভর্তির বাইরে থাকবেন না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় যত পাস করেন, শেষ পর্যন্ত ততজন ভর্তি হন না। অনেকে বিদেশে পড়তে চলে যান। অনেকে চাকরি শুরু করেন। আবার ছাত্রীদের অনেকের বিয়ে হয়ে যায়। বরং স্নাতক (পাস) কোর্সে কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিবছর ভর্তি শেষে নিম্নমানের কলেজগুলোতে আসন ফাঁকা থাকলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নামী-দামি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের তীব্র প্রতিযোগিতার মুখে পড়তে হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-ইউজিসি বলছে, প্রথম সারির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন সংকট থাকলেও, কোনো শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেহেতু এতো আসন নেই কাজেই অনিবার্যভাবেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। তবে এর বেশিরভাগেরই আবার গুণগত মান নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে জিজ্ঞেস করা হলেও তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। #



 

Show all comments
  • hiron ১৬ জুলাই, ২০২১, ৭:১৩ পিএম says : 0
    তথ্যের বিশাল গরমিল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ