পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ধান আর চালের সঙ্গে কৃষক, চাতাল মালিক অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। বাজার নিয়ন্ত্রণ না থাকায় প্রান্তিক কৃষকরা ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েও ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। দিনে দিনে কৃষকরা গরিব থেকে আরো গরিব হচ্ছেন। অন্যদিকে মধ্যস্বত্বভোগী চাতাল মালিকরা ফুলেফেঁপে উঠছেন; তারা টাকার পাহাড় গড়ছেন। রোদ-বৃষ্টিতে ঘাম ঝরিয়ে ফসল ফলিয়ে কৃষক গরিব থেকে আরো গরিব হচ্ছেন। অন্যদিকে চাতাল মালিকরা আরো সম্পদশালী হচ্ছেন। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালের সঙ্কট সৃষ্টি করে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। সম্প্রতি দুটি জরীপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণায় বলা হয়েছে গত তিন বছরে (২০১৭ থেকে ২০১৯) আমন মৌসুমে প্রতি কেজি চালে চাতাল মালিকরা লাভ করেছেন চার টাকা ৬০ পয়সা থেকে সাড়ে ৯ টাকা পর্যন্ত। ২০২০ সালের প্রতি কেজি চালে লাভ করেছেন চার টাকা ৭০ পয়সা থেকে আট টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত।
অন্যদিকে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ব্রি) এ গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই এক মাসের মধ্যে উদ্বৃত্ত ধানের ৫২ শতাংশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। এক থেকে দুই মাসের মধ্যে বিক্রি হচ্ছে ২৫ শতাংশ; দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে ১৮ শতাংশ এবং চার মাস বা তার বেশি সময়ের মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে ৫ শতাংশ ধান। ধার দেনা-মহাজনের কাছে ঋণ নিয়ে চাষাবাদ করায় কৃষকদের ধান কেটেই বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠানের ‘বাংলাদেশে চালের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতা: একটি আন্তঃপ্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন-২০২০’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মৌসুমের শুরুতেই এক মাসের মধ্যে উদ্বৃত্ত ধানের ৫২ শতাংশ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক। তবে ২০১৯ সালে এক মাসের মধ্যে বিক্রি হয়েছিল ৬৫ শতাংশ ধান, যেখানে এক থেকে দুই মাসের মধ্যে ছিল ২০ শতাংশ, দুই-তিন মাসের মধ্যে ১৩ এবং চার মাস বা ততোধিক ছিল ২ শতাংশ। মূলত গত বোরো মৌসুমে ধানের ভালো দাম পাওয়ার কারণে প্রথম মাসে বিক্রির প্রবণতা কিছুটা কমেছে।
এখনো প্রথম মাসের মধ্যে যে পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে, তা কৃষকের জন্য বেশ ক্ষতির কারণ হচ্ছে। ধানের মজুদাগার ও আর্থিকভাবে কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে পারলে কৃষকের ধানের মাধ্যমে আরো বেশি লাভবান করা সম্ভব বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনে তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে ধানের উৎপাদন খরচ বাড়লেও কমে গেছে শস্যটির প্রকৃত দাম। কোনো কোনো বছর বোরো ধানে কৃষক লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন। যেখানে দেশের আবাদি জমির সিংহভাগেই বোরো ধান চাষ হয়। বোরো আবাদে কৃষকের হেক্টরপ্রতি লোকসান এখন প্রায় ৬ হাজার টাকা। এ লোকসানের অন্যতম কারণ শ্রমিক ব্যয়। পারিবারিক ও ভাড়া শ্রমিকের পেছনে ব্যয় হচ্ছে মোট উপকরণ খরচের প্রায় ৪৬ শতাংশ। কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিপণ্যের আধুনিক বাজার ব্যবস্থা ও বাণিজ্যিকীকরণ দরকার বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে গবেষক দলের প্রধান ও বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএলআরআই) সাবেক মহাপরিচালক কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, কৃষক যে ভালো নেই এটি তার একটি প্রতীকী চিত্র। প্রধানত দুটো কারণে মৌসুমের শুরুতে কৃষক ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন। প্রথমত, কৃষক ধারদেনা করে ধান উৎপাদন করে বিধায় দ্রæত অর্থ পরিশোধের তাড়া থাকে। অন্যদিকে কৃষকের ঘরে এখন আর বাড়তি জায়গা নেই। ফলে আর্থিক সক্ষমহীনতা ও মজুদাগারের অভাবে বাধ্য হয়েই ধান বিক্রি করে দিচ্ছেন কৃষক। এ কারণে ধানের বাজারের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে মিলার ও ট্রেডার্সদের হাতে।
এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ড. ফা হ আনসারী বলেন, ধান কাটা থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ করতে পারলে কৃষকদের বড় ধরনের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব। কম্বাইন হারভেস্টার জমির ধান কাটা থেকে মাড়াই ও বস্তাবন্দি করে বাড়িতে নিয়ে আসা পর্যন্ত কৃষকের খরচ ও সময়ের বড় ধরনের সাশ্রয় করে। তিনি আরো বলেন, শস্যের নিবিড়তা বাড়ানোর মধ্যেমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি এবং ইন্টারক্রপিং গ্যাপ (আন্তঃফসল বিরতি) কমিয়ে এনে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব। কৃষকের উৎপাদন খরচের বহুমুখী মাধ্যম প্রয়োগ করে মুনাফা বৃদ্ধি করতে হলে যান্ত্রিকীকরণের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) গবেষণায় উদ্বেগজনক এমন তথ্য উঠে এসেছে। প্রতি কেজি চালে মিলারদের লাভ সাড়ে ৪ থেকে সাড়ে ৯ টাকা! গত ২৬ জানুয়ারি প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, চালের উপজাতসূমহ (বাই প্রডাক্ট) থেকে প্রচুর আয় হচ্ছে মিল মালিকদের। কিন্তু তারা কোনও হিসাবে তা বিবেচনায় আনছেন না। এসব বিবেচনায় নিয়ে এ মুনাফা লক্ষ্য করা গেছে। গবেষণায় জানানো হয়, প্রতি বছর ধানের প্রকৃত মূল্য কমছে। ফলে সার্বিকভাবে কৃষকদেরই লোকসান হচ্ছে। ১৯৭২ থেকে ২০২০ পর্যন্ত ধানের বাজার মূল্য ৪ থেকে ৫ শতাংশ হারে বাড়লেও এর প্রকৃত ম‚ল্য প্রতি বছর হ্রাস পেয়েছে তিন শতাংশ হারে। এদিকে, ২০০৯ থেকে ২০২০ সময়কালে কেজি প্রতি ধান চাষের ব্যয় তিন শতাংশ হারে বেড়েছে। সবমিলে কৃষকের নিট মুনাফা কমেছে আট শতাংশ হারে।
বিএআরসি বলছে, গত বছর দেশে তিন কোটি ৮৭ লাখ ২২ হাজার টন চাল উৎপাদন হয়েছে। বর্তমানে ধান উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৮ শতাংশ, যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৪ শতাংশের থেকে বেশি। ফলে প্রতি বছর ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
তারপরও এ বছর চালের অস্বভাবিক দামের কারণ মজুদ প্রবণতা। করোনায় খাদ্য ঘাটতির শঙ্কায় ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা প্রচুর চাল মজুদ করেছিলেন। এ বিষয়ে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছে।
গবেষণায় আরও বলা হয়, সরকারের নানামুখি দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা চাল মজুদ করেন। সরকার চাল সংগ্রহ ও যথাসময়ে চাল আমদানি করতে পারেনি। পাশাপাশি যথাযথ হস্তক্ষেপ করতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার। এসবের সুযোগ নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। চালে মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে মিলার, আড়তদার এবং পাইকাররা অতি মুনাফা করেন।
এছাড়াও মিল মালিক ও ব্যবসায়ীদের আধিপত্য এবং অসম প্রতিযোগিতা, আমনের উৎপাদন ঘাটতি, চাল আমদানি বন্ধ, মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কারণে বেশি পরিমাণে দাম বেড়েছে বলে জানানো হয়েছে গবেষণায়।
আন্তর্জাতিক খাদ্যনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইএফপিআরআই) একটি গবেষণায় দেখা গেছে, জমির পরিমাণ বা আকারের হিসাবে দেশের প্রায় ৮৩ শতাংশ কৃষকই প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র। শূন্য দশমিক ৫ একরের নিচে এমন আকারের জমি আবাদ করে থাকেন ৩৬ শতাংশ প্রান্তিক কৃষক। আর শূন্য দশমিক ৫ থেকে দেড় একরের কম জমি আবাদ করেন ৪৭ শতাংশ ক্ষুদ্র কৃষক। ফলে দেশের সিংহভাগ কৃষকই ক্ষুদ্র ও ছোট জমিতে আবাদ করেন। এসব জমিতে আবাদের মাধ্যমে কৃষক নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য ও অন্যান্য আর্থিক এবং সামাজিক চাহিদা পূরণ করেন। এতে চাহিদা মেটানোর জন্য কাটার শুরুতেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন কৃষক। এটির সুযোগ নিচ্ছেন মিলার ও ফড়িয়ারা। ব্রির মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর বলেন, একদিকে ক্ষুদ্র কৃষক অন্যদিকে আর্থিক সক্ষমতাহীনতা। এ দুটোর প্রভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনায় বেশ ঝুঁকিতে থাকেন কৃষক। মিলারদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো কৃষকের এ আর্থিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে বাজার থেকে সবচেয়ে কম দামে ধান কিনতে পারা। তাই কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনা বাড়াতে হবে। সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করতে হবে। ধান আবাদে কৃষককে লাভবান করতে না পারলে দেশের খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।