ইভিএম-এ ভোট কেন?
আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম-এ ১৫০ আসনে ভোট গ্রহণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। কাকতালীয় কিনা জানি না, ১৫০ সংখ্যাটা আমাদের এর আগে চিনিয়েছিলেন রকিবুল
আব্দুল মান্নান সালাফী
অনুবাদ : ড. মুহাম্মাদ কাবীরুল ইসলাম
[নেপাল থেকে প্রকাশিত ‘মাসিক আস-সিরাজ’
পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল মান্নান সালাফী কর্তৃক উর্দু ভাষায় লিখিত হজ সম্পর্কিত এই গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি বাংলা ভাষাভাষী ভাই-বোনদের উপকারার্থে বঙ্গানুবাদ করে দেওয়া হলো। এতে হজের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে দলীল ভিত্তিক আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে, যা পাঠকদের জ্ঞান বৃদ্ধি ও হজ সম্পর্কে বিভিন্ন বিধান জানতে সহায়ক হবে]-অনুবাদক
হজের পরিচয়
হজের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন স্থানের সংকল্প করা। শারঈ পরিভাষায় নির্দিষ্ট ইবাদত তথা তাওয়াফ, সাঈ প্রভৃতির জন্য হজের মাস সমূহে (শাওয়াল, যুলকা‘দাহ, যুলহিজা) আল্লাহ তা‘আলার নিকট সম্মানিত ও পবিত্র ঘর জিয়ারতের ইচ্ছা পোষণ করা।
হজের গুরুত্ব
হজ ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে অন্যতম। যা জ্ঞানবান, প্রাপ্তবয়স্ক ও সামর্থ্যবান মুসলমানের উপরে জীবনে একবার ফরজ। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনুল কারীমে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ করা তার জন্য ফরজ। আর কেউ প্রত্যাখ্যান করলে, সে জেনে রাখুক, নিশ্চয়ই আল্লাহ বিশ্বজগতের মুখাপেক্ষী নন’ (আলে ইমরান ৩/৯৭)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে হজ ও ওমরা পূর্ণ কর’ (বাক্বারাহ ২/১৯৬)।
হাদিসেও হজ ফরজ হওয়া সম্পর্কে সুস্পষ্ট বিধান বর্ণিত হয়েছে। যেমন-
(১) আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত। ১. একথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন প্রকৃত উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) তাঁর রাসূল, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. জাকাত প্রদান করা, ৪. হজ করা এবং ৫. রমজান মাসের সিয়াম পালন করা’ (বুখারী হা/৮; মুসলিম হা/১১৩; মিশকাত হা/২)।
(২) ওমর ইবনু খাত্ত্বাব (রা.) হতে বর্ণিত প্রসিদ্ধ হাদিসে জিবরীলে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন,
‘ইসলাম হচ্ছে তোমার এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ্র রাসূল, সালাত কায়েম করা, জাকাত প্রদান করা, রমজান মাসের সিয়াম পালন করা ও বায়তুল্লাহ্র হজ করা যদি সেখানে পৌঁছার সামর্থ্য থাকে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২)।
(৩) আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের সামনে খুৎবা দিলেন। তিনি বললেন, ‘হে লোক সকল! তোমাদের উপর হজ ফরজ করা হয়েছে। (সুতরাং তোমরা হজ কর)। জনৈক ছাহাবী জিজ্ঞেস করল, প্রত্যেক বছর (ফরজ)? রাসূলুল্লাহ (সা.) চুপ থাকলেন। এমনকি লোকটি তিনবার জিজ্ঞেস করল। অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন, আমি যদি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে (তোমাদের উপর প্রত্যেক বছর হজ পালন করা) ফরজ হয়ে যেত। আর ফরজ হয়ে গেলে তোমরা তা পালনে সক্ষম হতে না’ (মুসলিম হা/৩২৫৭; নাসাঈ হা/২৬৩১; মিশকাত হা/২৫০৫)।
উল্লিখিত আয়াত ও হাদিসের ভিত্তিতে ওলামায়ে কেরাম সামর্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমানের উপরে জীবনে একবার হজ ফরজ বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন। আর একের অধিক হল নফল বা অতিরিক্ত (আবুদাউদ, নাসাঈ, আহমাদ, মিশকাত হা/২৫২০)।
হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলী
হজ ফরজ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত বিদ্যমান থাকা আবশ্যক। ১. ইসলাম ২. জ্ঞান ৩. প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া ৪. স্বাধীন হওয়া ৫. শক্তি-সামর্থ্য থাকা।
১. ইসলাম : ইসলাম গ্রহণ ব্যতীত কোন কাফির ব্যক্তির উপর হজের বিধান প্রযোজ্য নয়। সুতরাং কেউ যদি কুফরী অবস্থায় হজ সম্পন্ন করে এবং ইসলাম গ্রহণের পর যদি তার উপর হজ ফরজ হয়, তাহলে কুফরী অবস্থায় কৃত হজ দ্বারা হজের ফরযিয়াত আদায় হবে না।
২. জ্ঞান : প্রত্যেক প্রকারের ইবাদতের ন্যায় হজের জন্যও জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া শর্ত। কোন মস্তিষ্ক বিকৃত বা পাগল ব্যক্তির জন্য হজ ফরজ নয় এবং তাকে হজের জন্য আদেশও দেয়া যাবে না। যেমন হাদিসে এসেছে, নবী করীম (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির উপর থেকে কলম তুলে নেওয়া হয়েছে। ঘুমন্ত ব্যক্তির থেকে যতক্ষণ না সে জাগ্রত হয়। অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর থেকে যে পর্যন্ত না সে বালেগ বা প্রাপ্তবয়স্ক হয়। আর পাগল ব্যক্তির থেকে যতক্ষণ না সে জ্ঞান ফিরে পায় বা বোধ শক্তি সম্পন্ন হয়’ (নাসাঈ হা/৩৩৭৮)।
৩. প্রাপ্তবয়স্ক : পূর্বোক্ত হাদিসে এ কথাও স্পষ্ট হয়েছে যে, শিশু বা অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির উপর থেকেও কলম উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ সে শরিয়াতের বিধান পালনের নির্দেশ প্রাপ্ত নয়। এজন্য সে হজের ব্যাপারে আদিষ্টও নয়। যদি কোন অপ্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্বীয় পিতা-মাতা বা নিকটাত্মীদের সাথে হজ করে তাহলে তার হজ নফল হবে এবং নেকী পিতা-মাতা বা যে নিকটাত্মীয় হজ করিয়েছে তাদের হবে। যেমন আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) রাসূলুল্লাহ (সা.) হতে বর্ণনা করেন,
অর্থাৎ তিনি রওহা নামক স্থানে একটি কাফেলার সাক্ষাৎ পেলেন। তখন তারা বলল, কাদের কাফেলা? তারা বললেন, মুসলমানদের কাফেলা। তখন তারা বলল, আপনি কে? তিনি বললেন, আল্লাহ্র রাসূল। তখন এক মহিলা তার বাচ্চা উঁচু করে ধরে বলল, এর উপর কি হজ আছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ এবং ছওয়াব তোমার জন্য’ (মুসলিম হা/২৩৭৭)। অনুরূপ সায়েব ইবনু ইয়াযীদ বলেন, অর্থাৎ আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে হজ করানো হ’ল, সে সময়ে আমি ছিলাম সাত বছর বয়সের বালক (বুখারী হা/১৭২৫)। এ উভয় হাদিস দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য হজ করার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর যদি তার উপর হজ ফরজ হয় এবং ফরযিয়াতের শর্তসমূহ পাওয়া যায়, তাহলে তাকে আবার হজ করতে হবে। যেমন ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, ‘(হে লোক সকল!) তোমরা আমার নিকট থেকে এ বিষয়টি জেনে নাও। আর এটা ভেব না যে, ইবনু আব্বাস বলেছেন (বরং এটা নবী করীম (সা.) বলেছেন)। যে গোলামকে তার মনীব হজ করাবে অতঃপর আযাদ করে দিবে (হজের শর্তসমূহ পাওয়া গেলে) তার উপরে হজ ফরজ হবে। আর যে বাচ্চাকে শৈশবে তার পরিবার হজ করাবে অতঃপর সে বালেগ হওয়ার পর (হজের শর্তসমূহ পাওয়া গেলে) তার উপর হজ ফরজ হবে (মুছন্নাফ ইবনু আবী শায়বা, হা/১৫১০৫; সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল হা/৯৮৬-এর অধীনে)। ইমাম বায়হাক্বীও হাদিসটি নবী করীম (সা.) থেকে মারফূ‘ সূত্রে স্বীয় গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন (বায়হাক্বী, ৪/৩২৫ পৃঃ)।
৪. স্বাধীন হওয়া : ক্রীতদাসের উপর হজ ফরজ নয়। কিন্তু তার মনিব তাকে হজ করালে নফল হিসেবে তার হজ হয়ে যাবে এবং স্বাধীন হওয়ার পর হজ ওয়াজিব হওয়ার শর্তসমূহ পাওয়া গেলে তাকে ফরজ হজ আদায় করতে হবে। যেভাবে ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণিত উপরোক্ত হাদিসে সবিস্তার উল্লেখ আছে। ইমাম তিরমিযীও বলেছেন, কৃতদাস স্বাধীন হওয়ার পূর্বে হজ করলে এবং স্বাধীন হওয়ার পর হজ ফরজ হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া গেলে তাকে পুনরায় হজ করতে হবে। সুফিয়ান ছাওরী, শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক (রহ.) এ মতই পোষণ করেছেন (দ্রঃ তিরমিযী হা/৮৪৮-এর অধীনে)।
৫. সামর্থ্য-সক্ষমতা : হজ ফরজ হওয়ার জন্য এটাই মৌলিক শর্ত। কুরআন ও হাদিস উভয়টিতে যার উল্লেখ রয়েছে। অর্থাৎ হজ ফরজ হওয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির হজ আদায়ের শক্তি-সামর্থ্য থাকা আবশ্যক। কোন ব্যক্তির যদি হজ করার (শারীরিক) শক্তি না থাকে এবং তার যদি (আর্থিক) সামর্থ্য থাকে তাহলে তার উপর হজ ফরজ নয়।
(ক) দৈহিক সামর্থ্য : সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে মধ্যে দৈহিক শক্তি ও আর্থিক সামর্থ্য উভয়টিই অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি সম্পদশালী হলে কিন্তু সে অতি বৃদ্ধ হয়ে গেলে কিংবা এমন স্থায়ী অসুস্থ যে তার সুস্থতার আশা নেই এবং সে হজের জন্য ভ্রমণ ও তার আরকান সমূহে পালনেও অক্ষম হলে তাকে অক্ষম-অসমর্থ গণ্য করা হবে। আর তার উপর হজ ও ওমরা ওয়াজিব হবে না। তবে এরূপ দৈহিকভাবে অক্ষম ধনাঢ্য ব্যক্তির উচিত শারীরিকভাবে সক্ষম কোন ব্যক্তির মাধ্যমে বদলি হজ করানো। যেমন আবু রাযীন আল-আক্বীলী (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয়। তিনি নবী করীম (সা.)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে আরজ করেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা.)! আমার পিতা অতিবৃদ্ধ। তিনি হজ বা ওমরা করতে সক্ষম নন এবং সওয়ারীতে আরোহণেরও শক্তি রাখে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করলেন, ‘তুমি তোমার পিতার পক্ষ থেকে হজ ও ওমরা কর’ (তিরমিযী হা/৮৫২; সনদ ছহীহ; ইবনু মাজাহ হা/২৯০৬; মিশকাত হা/২৫২৮)।
ফযল ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, খাছ‘আম গোত্রের এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা.)! আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় বান্দাদের উপর হজ ফরজ করেছেন। কিন্তু আমার পিতা এতই বৃদ্ধ হয়ে গেছেন যে, সওয়ারীর উপর বসার শক্তিও নেই। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এটা ছিল বিদায় হজের বছর (বুখারী হা/১৮৫২, ১৫১৩; মুসলিম হা/১১৪৯, ১৩৫৭; মিশকাত হা/১৯৫৫, ২৫১১)।
(খ) আর্থিক সামর্থ্য : অনুরূপভাবে হজ ফরজ হওয়ার জন্য আর্থিক সামর্থ্য জরুরি। কোন ব্যক্তির নিজে এবং তার অধীনস্থদের কষ্টে পতিত হওয়া ব্যতীত বায়তুল্লাহ পর্যন্ত যাওয়া-আসার এবং সফরের খরচ বহনের সামর্থ্য থাকলে তার উপর হজ ফরজ। ঋণ করে কিংবা যাচ্ঞা করে হজ করা বৈধ নয়। যাচ্ঞা করা ব্যতীত যদি কেউ হজের খরচ প্রদান করে অথবা হজের জন্য সহযোগিতা করে তাহলে কোন অসুবিধা নেই। এক্ষেত্রে হজকারী ও সহযোগিতাকারী উভয়ই ছওয়াবের অধিকারী হবে।
(গ) যে মহিলার কোন মাহরাম নেই সে অক্ষম : সক্ষমতার মধ্যে আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্যরে সাথে মহিলাদের জন্য মাহরাম ব্যক্তি বিদ্যমান থাকাও অন্তর্ভুক্ত। এজন্য হজে গমনের ক্ষেত্রে যে মহিলার সাথে কোন মাহরাম (বিবাহ নিষিদ্ধ) ব্যক্তি থাকবে না, আর্থিক ও দৈহিক সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তার উপর হজের ফরযিয়াত রহিত হয়ে যাবে। কেননা এ দৃষ্টিকোণ থেকে সে অক্ষম গণ্য হবে।
এ প্রসঙ্গে ছহীহ বুখারীর নিম্নোক্ত বর্ণনা অত্যন্ত সুস্পষ্ট। ইবনু আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘মহিলারা (স্বামী অথবা) মাহরাম আত্মীয় ব্যতীত সফর করবে না। আর মহিলাদের নিকট কোন (পরপুরুষ) লোক আসবে না। কিন্তু যদি মাহরাম আত্মীয় উপস্থিত থাকে (তাহলে আসতে পারে)। তখন এক লোক বলল, হে আল্লাহ্র রাসূল (সা.)! আমি অমুক অমুক যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে যাওয়ার নিয়ত করেছি। (আবার কোন কোন বর্ণনার শব্দ হচ্ছে, অমুক অমুক যুদ্ধে আমার নাম লিপিবদ্ধ হয়েছে।) আর আমার স্ত্রী হজের ইচ্ছা করেছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘তুমি তার (স্ত্রীর) সাথে যাও’ (বুখারী হা/১৭২২, ১৮৬২)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘যাও এবং তোমার স্ত্রীর সাথে হজ কর’ (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/২৫২৯; ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/২৭২০; সিলসিলা ছহীহাহ ৩০৬৫নং হাদিসের অধীনে)। এছাড়া বিভিন্ন ছহীহ হাদিসে মহিলাদের (স্বামী বা) মাহরাম লোক ব্যতীত সফর করতে নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য হজের নিয়তকারী মহিলাদেরকে শরিয়াতের আদেশ-নিষেধের প্রতি লক্ষ্য রাখা আবশ্যক।
মাহরাম দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে স্বামী অথবা মহিলার এমন আত্মীয় যার সাথে বংশ, দুগ্ধপান অথবা বৈবাহিক সম্পর্কের কারণে কখনোই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়। যেমন- ১. পিতা ২. ছেলে ৩. ভাই ৪. চাচা ৫. মামা ৬. দুধ পিতা ৭. দুধ ছেলে ৮. দুধ ভাই ৯. দুধ চাচা ১০. দুধ মামা ১১. শ্বশুর ১২. সৎ ছেলে অর্থাৎ স্বামীর অন্য স্ত্রীর ছেলে ১৩. জামাতা (মেয়ের স্বামী) ১৪. সৎ পিতা যে তার মায়ের সাথে সহবাস করেছে প্রমুখ। যদি কোন মহিলা মাহরাম ব্যতীত হজে গমন করে তাহলে তার হজ বৈধ হবে, কিন্তু হাদিসের পরিপন্থী কাজ করায় সে নাফরমান (অবাধ্য) গণ্য হবে (ইবনু তায়মিয়াহ, শারহুল ওমদাহ ফী বয়ানে মনাসিকিল হজ ওয়াল ওমরা, ১/১৮২)।
নিরাপদ-নির্বিঘœ রাস্তা : সক্ষমতা ও সামর্থ্যরে মাঝে এটাও রয়েছে যে, হজে গমনের রাস্তা নিরাপদ ও নির্বিঘœ হওয়া এবং হজের নিয়তকারীর জান ও মালের কোন ক্ষতি না হওয়া। রাস্তা অনিরাপদ হলে এবং হজে গমনের সময় জান-মালের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে, পরিবেশ ভালো না হওয়া পর্যন্ত হজের ফরযিয়াত স্থগিত থাকবে।
সামর্থ্য বা সক্ষমতা অর্জিত হলে হজ জলদি ফরজ হয়
যে মুসলমানের মধ্যে উল্লিখিত সকল শর্ত পাওয়া যাবে, শারঈ পরিভাষায় সে সক্ষম ও সামর্থ্যবান বলে পরিগণিত হবে এবং তার উপর হজ ফরজ হবে। সে হজ পালনে টালবাহানা করবে না; বরং সক্ষম হওয়ার পর ঐ মৌসুমে দ্রুত হজ সমাপন করার নিয়ত করবে। আর এর জন্য প্রয়োজনীয় কাজ-কাম (প্রস্তুতি) আরম্ভ করবে এবং হজের ব্যাপারে কোন অলসতা করবে না। এ মর্মে ইবনু আব্বাস (রা.)-এর প্রতি রাসূলের নির্দেশ হচ্ছে, ‘তুমি ফরজ হজ আদায়ের ব্যাপারে দ্রুত কর। কেননা তোমাদের মধ্যে কেউ জানেন না যে, আগামী দিন তার সামনে কি প্রতিবন্ধকতা এসে যাবে’ (আহমাদ ১/১৪; আবু দাঊদ ১/৩২৫; ইবনু মাজাহ ২/১৪৭)। (চলবে)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।