Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সন্তানকে পানিতে ফেলে দিলেন মা

দরিদ্রতার নির্মম পরিহাস

শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

কুড়িগ্রামের ভ‚রুঙ্গামারী উপজেলায় অভাবের তাড়নায় ভরণ-পোষণ দিতে না পেরে পরিবারের সদস্যদের শারীরিক আর মানসিক অত্যাচারে বাধ্য হয়ে এক মা তার ১৫ মাসের কোলের শিশু সন্তানকে ব্রিজ থেকে ফেলে দেবার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকালে বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার সংলগ্ন একটি ব্রিজে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে। ব্রিজ থেকে প্রায় ২০ ফুট নিচে অথৈ পানিতে ফেলে দেয় শিশুটির মা জামিলা বেগম। পানিতে ভাসতে থাকা শিশু জাহিদকে জীবিত উদ্ধার করে পথচারী ও স্থানীয়রা। এ সময় মা জমিলা বেগম পালিয়ে যান। সুস্থ অবস্থায় শিশুটি বর্তমানে স্থানীয় বাসিন্দা কৃষক রফিকুল ইসলাম-এলিনা দম্পত্তির হেফাজতে রয়েছে।
জমিলা বেগম জানান, এক বছর আগে এক মাসের কোলের সন্তান জাহিদকে নিয়ে স্বামী হাফিজুর রহমানের বাড়ি রংপুর থেকে বিতাড়িত হন তিনি। এরপর আশ্রয় জোটে পূর্ব কেদার গ্রামের দরিদ্র বাবা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে আসেন। দিনমুজুর বাবার বাড়িতে অভাব অনটন থাকায় তার সন্তানের ভরণ-পোষণ নিয়ে প্রায় দ্ব›দ্ব হতো পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে। সন্তানের খাবার এবং খরচ চালাতে মাঝে মধ্যে তাকে নানা নির্যাতন সহ্য করতে হতো। শুক্রবার আমি দু’কেজি চাল সবার আড়ালে বিক্রি করে বাচ্চার জন্য খাবার ও তেল-সাবান কিনে আনি। এজন্য বাবা রাগারাগি করে আমাকে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। মনের দুঃখে অবুঝ শিশুকে নিয়ে হতাশাগ্রস্ত হয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যাই। শারীরিক আর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে সন্তানকে পানিতে ফেলে দেবার সিদ্ধান্ত নেই।
জমিলার বাবা দিনমজুর জয়নাল মিয়া জানান, দুই বছর আগে রংপুরের মর্ডাণ মোড়ের ভর্ত কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সাথে জমিলার বিয়ে দেই। বিয়ের এক বছর পরেই দুই মাসের কোলের শিশুকে নিয়ে সংসার ভাঙে জমিলার। এসময় জাহিদকে নিয়ে তার বাড়িতে ফিরে আসে জমিলা। অন্যদিকে বড় মেয়ে জরিনার স্বামী তার খোঁজ খবর না রাখায় তিন সন্তান আমার সংসারে ফিরে এসেছে। একজনের শ্রমে পরিবারের ৯ জন সদস্যের ভরণ-পোষণ অসম্ভব হয়ে উঠেছে। দিনমজুরি করে এই বিশাল সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় আমাকে।
জমিলার মা জোবেদা বেগম জানান, প্রায় জমিলার সন্তান নিয়ে পরিবারে অশান্তি লেগেই থাকতো। তার খরচ চালাতে চাইতো না জমিলার বাবা। এনিয়ে ‘সংসারে ঝগড়া-কাজিয়া নাগি থাকে’।
ভূরুঙ্গামারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তবে খোঁজ-খবর নিয়ে ওই পরিবারকে সব ধরণের সহযোগিতা আশ্বাস দেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ