Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইট-মাটি পরিবহনে ক্ষতবিক্ষত সড়ক

যন্ত্রদানব ট্রাক্টরে অতিষ্ঠ কমলনগরবাসী

কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

লক্ষীপুরের কমলনগরের গ্রামীণ পাকা, আধাপাকা ও কাঁচা সড়কে ইট-মাটি-বালি, কাঠ-গাছ পরিবহনকারী অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে উপজেলার সর্বসাধারণ। উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোতে অবাধে ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর টলি। চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদগুলো দিনদিন চলাচলের অনুপযোগী করে তুলছে। প্রতিনিয়ত নতুন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার করা হলেও এ যন্ত্রদানবের ভয়াল ছোবলে সড়কগুলো যেন ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে। বিবর্ণ লক্কর-ঝক্করে রূপ নিচ্ছে সকল ধরণের সড়ক।
বিরামহীন চলাচলে শব্দ দূষণেও আশপাশের গ্রামের মানুষ, রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এদিকে ট্রাক্টরের থাবায় আশপাশের প্রায় সবক’টি সড়ক ভেঙে ছোট-বড় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়ে বেহাল দশায় পরিণত হয়েছে।
কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট, বালু মাটি ও ফার্নিচারসহ ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই প্রশাসনেরও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির উর্বর টপসয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ এবং পুকুর-দীঘিনালা ভরাট চলছে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রোড পারমিট বিহীন ট্রাক্টর ও লাইসেন্সহীন চালকের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষনিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। অনেক সময় শিশু চালককে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। বিকট শব্দে মাল বোঝাই নিয়ে সাদা পাউডারের মতো ধুলো উড়িয়ে অবাধে চলছে এরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই নিয়ে সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রামীণ সড়কগুলোর ওপর দিয়ে ব্যাপক হারে চলাচল করছে। বিশেষ করে কমলনগর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তাসহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়কগুলোতেই দিনরাত চষে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ পরিবহন। অবৈধ ট্রাক্টরগুলো সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত তাদের কর্মযজ্ঞে নেমে পড়ে।
এদিকে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া ১৪ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। বৃদ্ধি পাচ্ছে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা। কমলনগর উপজেলার চরকাদিরা, চরফলকন, পাটারিরহাট, কালকিনি চরমার্টিন, চরলরেন্স, তোরাবগঞ্জ, হাজিরহাট ও সাহেবেরহাট এবং পাশবর্তী রামগতি উপজেলার চরবাদাম, চরপোড়াগাছা, চররমিজ, চরআলগী, চর আলেকজান্ডার, বড়খেরী ও চরগাজী ইউনিয়নের সবগুলো গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় প্রায় ৫ শতাধিক অবৈধ ট্রাক্টর টলির দৌরাত্ম্য চলছে। এ যন্ত্রদানবের বেপরোয়ায় অতিষ্ঠ রোগী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ শিক্ষার্থীসহ প্রায় সকল আম জনতা।
পথচারী ডা. মফিজ জানান, এ ট্রাক্টর চলাচলের সময় আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধুলোর মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করায় সর্দি কাশি ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষজন। অনতিবিলম্বে এ যন্ত্রদানব প্রতিরোধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
কমলনগর থানার ওসি নুরুল আফসার বলেন, এসব টলি ট্রাক্টর রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি করে। কমলনগরে ইতোমধ্যে কয়েকটি ট্রাক্টর মালিককে জরিমানার আওতায় আনা হয়েছে।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কামরুজ্জামান বলেন, আমরা কয়কেটি ট্রাক্টর মালিককে জরিমানা করে সতর্ক করে দিয়েছে। তারপরেও তারা সতর্ক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ