রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা ও সান্তাহার জংশন শহরের দুই-তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল হতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। বহু ঐতিহাসিক ঘটনার নিরব সাক্ষী এই রক্তদহ বিল ও বিল পারে অবস্থিত কোচমনির দরগা। এখানের একটি বিশাল বটগাছকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানের হাজার হাজার মানুষের আশা যাওয়া থাকলেও সুনামধন্য এই স্থান কোচমনির দরগায় এখনো কোন উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সরকারিভাবে পৃষ্টপোষকতার অভাবে এই স্থানটি অবহেলিত। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা দর্শনার্থীদের অনেক কষ্ট করে যেতে হয় এই ঐতিহাসিক নিদর্শন স্থানে।
সতের শতাব্দির শেষের দিকে ফকির মজনু শাহ বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার আশপাশ এলাকায় ইংরেজদের দোসর জমিদারদের হাত থেকে প্রজাদের রক্ষা করতে তৎপরতা শুরু করেন। সেই সময় প্রজারা জমিদার ও ইংরেজদের নানা নির্যাতনের শিকার হতো। প্রজাদের ওপর এতবেশি কর ধার্য করা হতো যা পরিশোধ করতে গিয়ে সর্বশান্ত হতে হতো। ফলে প্রজারা বাধ্য হয়ে জমিদারদের নায়েব গোমস্তা এমনকি ইংরেজদের সাধারণ সিপাহী ও কর্মচারীদের কাছ থেকে অতিরিক্তহারে সুদে টাকা কর্য নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এক পর্যায়ে প্রজাদের ওপর যখন শোষণ বেরে চরম আকার ধারণ করে ঠিক সেই সময় ১৭৮৬ সালে এলাকায় অস্ত্রধারী সন্ন্যাসিদের সাথে নিয়ে ফকির মজনু শাহের আগমন ঘটে। সে সময় আদমদীঘির অধিকাংশ এলাকা ছিল গহীন অরণ্য। ফকির মজনু শাহ তার দলবল অরণ্য থেকে বের হয়ে ইংরেজ শাসকদের ও এ দেশিয় দোসর জমিদাদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। এলাকার প্রজাদের সমর্থনে মজনু বাহিনীর অভিযানে ইংরেজ ও জমিদারদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পরে। এমতাবস্থায় মজনু বাহিনী জমিদারদের কাছ থেকে নির্ধারিত চাঁদা আদায় করে গরিব প্রজাদের মধ্যে বিলিয়ে দেন। সে সময় বেশ কয়েক জন অত্যাচারী জমিদারকে অপহরণ করে এলাকার অরণ্যে লুকিয়ে রেখে আতংক সৃষ্টি করতেন এবং মুক্তিপন আদায় করে ছেড়ে দিত বলে ইতিহাস থেকে জানা যায়। এর কারণে এক সময় উপজেলার কড়ই জমিদার শ্রীকৃষ্ণ চৌধরী মজনু শাহের ভয়ে ভীত হয়ে রাতের আঁধারে জমিদার বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে ময়মনসিংহে গিয়ে আশ্রয় নেন। জমিদার ও ইংরেজ সরকার ফকির মজনু শাহের বাহিনীকে দমন করতে প্রেরণ করার জন্য সেনা নায়ক আইনশ্লাইনের নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। এই সংবাদ পাওয়ার পর ফকির মজনু শাহের বাহিনী সদস্যরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কড়ই জঙ্গল এলাকায় সমবেত হন। এদিকে ইংরেজ সৈন্যরা আত্রারাই নদী হয়ে নৌকা যোগে সেকালের বিল ভোমরা। এখনকার এই রক্তদহ বিল দিয়ে গোপনে কড়ই জঙ্গল ঘেড়াও করে। তখন ফকির মজনু সাহের বাহিনী এগিয়ে এসে ওই বিলে তাদের বাধা দিলে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধে। এই যুদ্ধে দু’পক্ষের বহু লোক নিহত হয়। সেই নিহতদের রক্তের জোওয়ারে এই রক্তদহ বিলের পানি লাল রংঙে রংঙিন হয়ে যায়। সেই খেকে এই বিল ভোমরা বিলের নামকরণ করা হয় রক্তদহ বিল।
কোচমনির দরগার খাদেম আব্দুস ছাত্তার জানান, মাহী সওয়ার হযরত শাহ সুলতান বলখী ইবনে আদম (রহ.) সে সময় এই বিলের ওপর দিয়ে মাহাস্থান গড়ে যাতায়ত করতো। একদিন এই পথে যাওয়ার সময় নামাজের সময় হলে উক্ত বিলে উল্লিখিত বটগাছের নিকট নামায আদায়ের সময় একজন কোচ (শিকারী) দেখে ফেলেন এবং সে আর্শ্চয্য হয়ে মাহী সওয়ার হযরত শাহ সুলতান বলখী ইবনে আদম (রহ.) কাছে মরিদ হয়ে প্রতিদিন ওইস্থানে আসতেন এবং সেখানে বসে ধ্যান করতো। বর্তমানে সেখানে দারিয়ে আছে একটি বিশাল বটগাছ। বটগাছের নিচে কোচমনির দরগা বলে সবার কাছে পরিচিতি। ফলে ওই দরগাতে মানত করে এবং প্রতিদিন মুসলিম-হিন্দুসহ সব ধর্মের শত শত মানুষ সেখানে আসে। সংস্কার অভাবে দিন দিন-এর ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এই রক্ত বিল ও কোচমনির দরগা। সরকারিভাবে সংস্কার ও রক্ষাবেক্ষণ করা হলে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন কেন্দ্র। এখান থেকে আসতে পারে বিপুল পরিমান রাজস্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।