Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের টিকা আসছে আজ

করোনার ন্যায় টিকা নিয়েও গণমাধ্যমে প্রচারণা থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

করোনা মহামারী মোকাবেলায় ভারত সরকারের সহয়তার দুই মিলিয়ন বা ২০ লাখ ডোজ টিকা আজ বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশে পৌঁছাবে। স্থানীয় সময় বেলা দেড়টায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে এই টিকা আসবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিমানবন্দরে উপস্থিত থেকে টিকা গ্রহণ করবেন। আমাগী ২৫ বা ২৬ জানুয়ারি আসবে ক্রয়চুক্তির ৩ কোটি ডোজের প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ। রাজধানীর চারটি হাসপাতালে ৪’শ থেকে ৫’শ স্বাস্থ্য কর্মীকে ‘ড্রাই রান’ হিসাবে টিকা দেয়া হবে।

গতকাল প্রধনমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য সচিব মো. আবদুল মান্নান এসব তথ্য জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ-এর সভাপতিত্বে সভায় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম উপস্থিত ছিলেন। তারা টিকা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরনে। মো. আবদুল মান্নান বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টায় এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ভারত সরকারের সহায়াতার ২০ লাখ ডোজ করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকা বাংলাদেশে আসবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সেখানে উপস্থিত থেকে টিকা গ্রহণ করবেন। সেখান থেকে টিকা রাখা হবে তেজগাঁওয়ে ইপিআই এর টিকা রাখার স্থানে (স্টোরেজ)।

আবদুল মান্নান বলেন, তৃপক্ষীয় চুক্তির অংশ হিসাবে যে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনা হচ্ছে তার প্রথম চালানও ২৫ তারিখে এসে পৌছবে বলে বেক্সিমকো আমাদের নিশ্চিত করছে। সহায়তার টিকা ও কেনা টিকা মিলিয়ে এ মাসেই আসবে ৭০ লাখ ডোজ টিকা। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রথম মাসে যারা টিকা পাবেন তারা দ্বিতীয় ডোজ পাবেন তৃতীয় মাসে। অন্যদিকে দ্বিতীয় মাসে ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। তারা দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাবেন চতুর্থ মাসে। টিকা হাতে আসার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি অথবা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে দিন সম্মতি দেবেন সেদিন নাগরিক সমাজের ২০ থেকে ২৫ জনকে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে। এরমধ্যে শিক্ষক, চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ, সংবাদিক, পুলিশ, সামরিক সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল ভাবে সম্পৃক্ত থেকে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। এরপর রাজধানীর চারটি হাসপাতালে শুরু হবে টিকার ড্রাই রান বা পরীক্ষামুলক প্রয়োগ। ঢাকার চারটি হাসপাতাল- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে এই টিকা প্রয়োগ করা হবে। বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে দেশে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হওয়ায় গণটিকাদান শুরু করার আগে এই সংক্ষিপ্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। তারপর এদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। যদি কোন সমস্যা লক্ষ্য করা না যায় তাহলে পরীক্ষামূলক প্রয়োগের পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকোটল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। এরপর আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে একযোগে টিকাদান কার্যক্রম শুরু করা হবে।

স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান জানান, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন যারা গ্রহণ করেছে তাঁদের শারীরিকভাবে বড় কোন সমস্যা এখনো দেখা দেয়নি। তবে ভ্যাকসিন পরবর্তী কারো শরীরে কোন ধরনের পাশর্^ প্রতিক্রিয়া দেখা দিলে তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ভ্যাকসিন গ্রহণকারী সবাইকেই টেলি মেডিসিন সেবা দেয়ার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করে এসব সেবা গ্রহণ করতে পারেবন। তিনি বলেন, পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেয়া হবে। সব মিলিয়ে দেশের মোট ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা সরকারের আছে। তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারও সাথে সরকারের চুক্তি হয়নি। অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ বলেন, ভ্যাকসিন দেশে এলে সেটিকে যথাযথ নিরাপত্তার মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হবে। এয়ারপোর্ট থেকে ভ্যকাসিন ইপিআই স্টোর, জেলা হাসপাতাল এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো সময় পুলিশ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এমনকি যেসব হাসপাতালে টিকা দেয়া হবে সেখানেও কঠোরভাবে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা হবে। এই টিকা প্রদানে যেন কোন প্রকার অনিয়ম না হয় সে ব্যাপারে সরকার কঠোর নজরদারি ব্যবস্থা রাখবে বলেও জানান জুয়েনা আজিজ।

সংবাদ সম্মেলনে আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম পিএএ ভ্যাকসিন সংক্রান্ত ‘সুরক্ষা অ্যাপ’ এর খুটিনাটি বিষয়া তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সিদ্ধান্তে আইসিটি বিভাগ ও এটুআই টিকার জন্য নিবন্ধন হতে একটি এ্যাপস তৈরি করেছে। এই এ্যাপস তৈরিতে কোন টাকা ব্যয় করতে হয়নি। তবে এটি রান করাতে কিছু টাকার প্রয়াজন হবে। পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনায় তিনি বলেন, যে এ্যাপের মাধ্যমে টিকার জন্য নিবন্ধিত হতে হবে সেটির নাম ‘সুরক্ষা’। এটি গুগল প্লেস্টোরস এবং আইফোন থেকে ডাউনলোড করা যাবে। ন্যাশনাল আইডি কার্ড দিয়ে এতে নিবন্ধিত হতে হবে। তারপর সব তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে। তিনি বলেন, এ্যাপসের কাজ ২৩ তারিখের মধ্যে শেষ হবে। এরপর ডেমো পরীক্ষা করা হবে। আগামী ২৫ জানুয়ারি এটির উদ্বোধন করা হবে। এই এ্যাপসে নিবন্ধনের জন্য একটি মোবাইল নম্বর দিতে হবে। যেটাতে ব্যবহারকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে। ব্যবহারকারীর প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী তাকে মোবাইল এসএমএস এর মাধ্যমে জনিয়ে দেয়া হবে টিকা নিতে তাকে কবে, কোথায় যেতে হবে। তার পরবর্তী টিকা নেয়ার দিন কবে। নিবন্ধিত হলে নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে একটি টিকার ফরম দেয়া হবে। সেটি নিয়ে নির্দিষ্ট হাসপাতালে গেলেই তিনি টিকা পাবেন। দুইটি ডোজ সম্পন্ন হলে তাকে একটি সনদ দেয়া হবে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, করোনা টিকা দেয়া একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। কারণ আমারা এতোদিন টিকা দিয়েছি শিশুদের। এবার দিতে হবে বড়দের। যে কোন টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এই টিকার ক্ষেত্রেও সেটি হওয়া স্বাভাবিক। তবে সাধারণ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যেমন টিকার স্থান ফুলে ওঠা, সেখানে ব্যথা হওয়া, শরীর গুলিয়ে ওঠা, মাথা ব্যথা হওয়া ইত্যাদি হতে পারে। তিনি বলেন, এজন্য এবার টিকা দেয়া হবে শুধুমাত্র হাসপাতালে। অন্যকোন স্থানে টিকা দেয়া হবে না। যাদের টিকা দেয়া হবে তাদের টিকা দেয়ার পর কমপক্ষে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। যে কোন ধরনের পার্শ্বপতিক্রিয়া দেখা দিলে তৎক্ষনাত হাসপাতালে চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে গিয়ে ভিড় করা যাবে না। যিনি টিকা দেবেন শুধু তিনিই টিকাদান কেন্দ্রে যাবেন। টিকাদানে জনগণকে আকৃষ্ট করতে ইতিমধ্যে একটি নাটিকা তৈরি করা হয়েছে। টিকা হাতে পেলেই সেগুলো প্রচার করা হবে। মহাপরিচালক বলেন, কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে যেভাবে স্বাস্থ্য বুলেটিন প্রচার করা হয়েছে একইভাবে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানের সকল তথ্য মানুষের কাছে দ্রুততার সাথে পৌঁছে দিতে নিয়মিত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এছাড়া গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং তথ্য মন্ত্রণালয় প্রচারণার দায়িত্বে থাকবে।

দেশে কোন নকল ভ্যাকসিন প্রয়োগের সুযোগ আছে কি-না এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান জানান, দেশের ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর এর কঠোর নিয়মের মাধ্যমে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ছাড়া এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের কোন সুযোগ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: করোনাভাইরাস

৪ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ