পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
করোনা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে সারা বিশ্ব টিকার আশায় দিন গুনছিল। বাংলাদেশের মানুষও একইভাবে টিকার জন্য তাকিয়ে আছে। আর কাঙ্খিত সেই দিন আগামীকাল বৃহষ্পতিবার। ভারত সরকার সেরামের ২০ লাখ ডোজ টিকা উপহার স্বরূপ বাংলাদেশকে দিচ্ছে। এটি আগামী ২১ জানুয়ারি বৃহষ্পতিবার আসছে। এছাড়া ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা করোনা টিকার প্রথম চালান ২৬ জানুয়ারির মধ্যে দেশে আসবে। আর তাই বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপি বর্তমানে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মহামারি করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রম।
এদিকে টিকা আসা এবং এটি শরীরে নেয়ার পর এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে এক ধরনের আতঙ্ক। যদিও করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দেশের মানুষের মধ্যে যে ধরণের নানামুখী সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে, টিকা কার্যক্রমে নেই সেই ধরণের প্রচারণা কার্যক্রম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এবং স্বাস্থ্যখাত থেকে করোনা মহামারির শুরু থেকেই অজানা এই ভাইরাসকে মোকাবিলায় যেভাবে প্রচারণা চালিয়ে বাংলাদেশ করোনা নিয়ন্ত্রণে সাফল্য দেখিয়েছে, টিকা কার্যক্রম নিয়ে সে রকম কোন প্রচারণা নেই বললেই চলে। আর এ কারণে টিকা নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে নানারকম আতঙ্ক ও গুজব ছড়াচ্ছে। কারণ ভারতে টিকা নেয়ার পর কয়েকজনের মধ্যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, টিকা কার্যক্রম ৬ মাস বা তারও বেশি সময় ধরে চলবে। এ জন্য সরকারি ১৪ হাজার কর্মী এবং ২৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবী কাজ করবে। এদের জন্য প্রশিক্ষণ, সেবা কার্যক্রম এবং প্রচারণার জন্য একটি বাজেট টিকা কার্যক্রমের পরিকল্পনায় বা নীতিমালায় রাখা হয়। কিন্তু একটি স্বার্থান্বেষী চক্র এটিকে অযাচিত খরচ বলে এই বাজেট নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশন করলে অর্থমন্ত্রণালয় তা বাতিল করে দেয়। সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের হস্তক্ষেপে স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য প্রশিক্ষণ ও সেবা কার্যক্রম চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় এ বাজেট দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে এখনো প্রচারণার জন্য পৃথক কোন বাজেট রাখা হয়নি এই পরিকল্পনায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানাসহ সরকারিভাবে নানা প্রচারণার জন্যই বাংলাদেশ করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফলতা দেখিয়েছে। আর টিকা সবার জন্য প্রয়োজনীয়। টিকা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতঙ্ক থাকতেই পারে। সব টিকা নিয়েই আতঙ্ক থাকে। তাই এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে অবশ্য প্রচারণার দরকার আছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বিশেষ নজর দেয়া উচিত বলে মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের ১১ কোটি মানুষের এনআইডি রয়েছে। বিটিআরসির তথ্য মতে, অ্যাকটিভ সিম কার্ড আছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ মানুষের। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ (সাত কোটি) মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করে। স্মার্টফোন না থাকার কারণে প্রান্তিক অঞ্চলের সব মানুষ নিবন্ধন করতে পারবে না। তাই নিবন্ধনের জন্য আরো দু-একটি বিকল্প ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
সরকারের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর ইনকিলাবকে বলেন, টিকা প্রয়োজনীয় সবার জন্য। এ নিয়ে আতঙ্ক থাকবে। এটা সব ধরণের টিকার ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। একই সঙ্গে এমন কোন টিকা নেই যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। কমন কিছু বিষয়- মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব এগুলো থাকবেই। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, টিকা নিয়ে আতঙ্ক দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই প্রচারণা চালাতে হবে। সরকারের প্রচারণা কার্যক্রম বাদ দেয়ার সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমনকি প্রচারণার জন্য বাজেট না থাকলে নতুনভাবে সৃষ্টি করা হবে বলে জানান তিনি।
আইইডিসিআর’র প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, টিকার মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট জীবাণুর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা তৈরি হয়। ওই জীবাণুটির বিরুদ্ধে নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি করে। একই সঙ্গে টিকা মানুষকে উজ্জীবিত করবে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে। পাশাপাশি মানুষকে দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দিবে । তাই সবার জন্যই টিকা প্রয়োজনীয়।
সূত্র মতে, প্রতিটি উপজেলায় করোনা টিকা সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। মানুষের দেহে টিকা পুশ করার জন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায়ও প্রশিক্ষিত লোক প্রস্তুত করা হয়েছে। যদিও সব টিকারই কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। মূলত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, পরীক্ষামূলক ফল নিয়ে সংশয়, অনুমোদন নিয়ে তড়িঘড়ি ইত্যাদি কারণে করোনার টিকা নিয়ে আতঙ্ক, দ্বিধাদ্ব›দ্ব, সংশয় এখনো বিশ্বজুড়ে। বাংলাদেশের জনগণও এর বাইরে নয়।
এদিকে এখন পর্যন্ত অনুমোদন পাওয়া টিকার উৎপাদনকারী কম্পানিগুলো তাদের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের কোনো ধাপেই গর্ভবতী মা, ১৮ বছরের কম বয়সী বা শিশুদের স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেনি। তাই গবেষকরা নিশ্চিত নন, এই টিকা তাদের বিরুদ্ধে এখন কার্যকর ও নিরাপদ কি না। এ কারণে গর্ভবতী মা, ১৮ বছরের কম বয়সী বা শিশুদের জন্য প্রথমধাপে টিকা দেয়া হচ্ছে না বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, টিকা নিলেও মাস্ক পরাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। কারণ করোনা সংক্রমণ থেকে রক্ষা এমনকি সংক্রমণ হলেও অসুখের তীব্রতা কমিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকেও রক্ষা করবে এই টিকা । আবার টিকা নিলেও অনেকে এ-সিম্পমেটিক ক্যারিয়ার হতে পারে। তখন তার মাধ্যমে অন্যরাও আক্রান্ত হয়ে জটিল হতে পারে। এ জন্য সবাইকে টিকা নেয়ার পরও মাস্ক পরা, হাত ধোয়াসহ সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে টিকা প্রয়োগের জন্য ২৬ জানুয়ারি থেকে নাম নিবন্ধনের কাজ শুরু হবে। এই কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন এ্যাপ তৈরি করা হয়েছে, যাতে মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর দিয়ে ব্যক্তিকে তালিকাভুক্ত হতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আরিফ মাহমুদ বলেছেন, টিকা নিয়ে কোনো দুশ্চিন্তা নয়। বরং করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে টিকা নেয়া উচিত। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার ২-৩ শতাংশের বেশি নয়। টিকা প্রয়োগের পরে মাথা ব্যথা, মাথা ঝিমঝিম করা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তবে ওষুধ সেবন করলে এই উপসর্গগুলো ভালো হয়ে যায়। তাই টিকা নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।