Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রামগতিতে মাটি পরিবহনে বিবর্ণ সড়ক

যন্ত্রদানব ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ জনজীবন

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:২৫ এএম

লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে গ্রামীণ সড়কে চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অবৈধ ট্রাক্টরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। উপজেলার আঞ্চলিক সড়ক ও গ্রামীণ সড়কে অবাধে ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে নিষিদ্ধ যন্ত্রদানব ট্রাক্টর টলি।চাষাবাদের জন্য আমদানিকৃত ট্রাক্টর এখন অবৈধ ট্রাক বা পরিবহন হয়ে গ্রামীণ জনপদে সর্বনাশ ঘটাতে শুরু করেছে। বিরামহীন চলাচলে শব্দ দুষণেও আশপাশের গ্রামের মানুষ, রাস্তায় চলাচলকারী জনসাধারণ ও শিক্ষার্থীরা অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। কৃষি উন্নয়নের জন্য এসব ট্রাক্টর আমদানি করা হলেও মালিকরা এগুলো ব্যবহার করছে ইট,বালু ও মাটি-ফার্নিচার ইত্যাদি মালামাল পরিবহনের কাজে। রাস্তায় এরা উচ্চ শব্দে হর্ণ বাজিয়ে বেহাল অবস্থায় চলাচল করছে। এসব অবৈধ যন্ত্রদানবের প্রতি নজর নেই প্রশাসনেরও।
সরেজমিনে দেখা যায়, ট্রাক্টরের বেপরোয়া চলাচল গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। কৃষি জমির টপসয়েল কেটে ইটভাটায় সরবরাহ এবং পুকুর-দীঘিনালা ভরাট চলছে। ট্রাক্টরের অত্যাচারের মুখে গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রোড পারমিশন বিহীন ট্রাক্টর ও সনদ বিহীন ড্রাইভারদের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলাচলকারী মানুষ সার্বক্ষনিক উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে চলাচল করছে। বিকট শব্দে মাটি বোঝাই নিয়ে সাদা পাউডারের মত ধুলো উড়িয়ে ধাবিয়ে চলছে এরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই নিয়ে সড়ক, আঞ্চলিক মহাসড়ক ও গ্রাামীণ সড়ক গুলোর উপর দিয়ে ব্যাপক হারে চলাচল করছে। বিশেষ করে উপজেলার ৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার পাড়া মহল্লার সড়ক ও গ্রামীণ রাস্তা সহ উপজেলার প্রত্যেক সংযুক্ত সড়কগুলোতেই দিনরাত ধাবিয়ে বেড়াচ্ছে এসব অবৈধ পরিবহন।অবৈধ ট্রাক্টরগুলো সকাল থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত কৃষি জমি থেকে মাটি বোঝাই করে বিভিন্ন ইট ভাটায় এবং পুকুর-দীঘি-নালা ভরাটের কাজ করছে। তাছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন না হওয়ায় ১৫ থেকে ২০ বছরের শিশু-কিশোররাও এসব ট্রাক্টর অবাধে চালাবার সুযোগ পাচ্ছে। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা।বৃদ্ধি পাচ্ছে আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা। আশ্রম এলাকার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইমুনা, রুক্সানা ও ফয়েজ বলেন অনেক আতংক নিয়ে রাস্তায় বের হচ্ছি। ট্রাক্টর টলির লোকজন রাস্তায় মেয়েদের দেখলে নানা কটুকথাও বলেন বলে জানান তারা।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন মালিক জানায়,এইসব অবৈধ ট্রাক্টর টলি রাস্তায় চলাচল করতে থানা পুলিশকে মাসিক মাসোয়ারা দিয়েই তারা এ ব্যবসা করে যাচ্ছে।তবে এমন অভিযোগ সঠিক নয় দাবী করেন পুলিশ।
অভিভাবক রফিক,নুরজাহান বলেন, উন্নত শিক্ষার জন্য আমরা গ্রামীণ অঞ্চলের অভিভাবকরা সন্তানদের পড়া লেখা করাচ্ছি। কিন্তু রামগতি উপজেলায় ট্রাক্টর টলির দৌরাত্ম্যের কাছে মানুষ অসহায়।যারা এগুলো বন্ধ করবে, তারাই এখন এগুলোর লাইসেন্স দিচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন সড়কে দীর্ঘদিন ধরে প্রায় দুই শতাধিক ট্রাক্টর মাটি নিয়ে ভীতি সঞ্চার করে চলাচল করছে। উচ্চ শব্দে হর্ণ বাঝিয়ে বুলেট গতিতে চলছে এসব পরিবহন। এসব দানব পরিবহনের ভয়ে সন্তানদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে প্রতিনিয়ত উৎকণ্ঠায় পড়ে থাকে অভিবাবকরা। প্রশাসন যদি এতে নজর না দেয় তা হলে যেকোন সময় যে কারো পরিবারে নামতে পারে আহাজারী।পথচারী ডা.মফিজ জানান, সূর্যের আলো থাকার পরও রাস্তার আশপাশ এলাকায় কুয়াশার মতো ট্রাক্টরের সৃষ্ঠ ধুলোয় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর ধুলোর মধ্যে দিয়ে চলাচল করায় সর্দি কাশি শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এলাকার শিশুসহ সব বয়সের মানুষেরা। অতি দ্রুত মানুষের জীবন অতিষ্ঠকারী এসব যন্ত্রদানব প্রতিরোধ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।তবে এলাকাবাসীরা সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের কাছে ট্রাক্টর বন্ধের দাবি করে বলেন, আমরা বুঝতে পারি না, ট্রাক্টর চলাচল বন্ধের কাজটি কেন এতো কঠিন?পুলিশ প্রশাসনের সামনেইতো চলছে।তারা কেন অবৈধ এসব ট্রাক্টর টলি বন্ধ করছেনা?রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ সোলাইমান বলেন বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অবৈধ এই সব ট্রাক্টর বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আব্দুল মোমিন বলেন,এগুলো সম্পুর্ন অবৈধ।দ্রুত এসব ট্রাক্টর টলি বন্ধে অভিযান পরিচালনা করার কথা জানান তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ