পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এজন্য টেকসই রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে বড় পরিসরে বিদেশ যেতে আগ্রহীদের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে উন্নত প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশিষ্টজনেরা।
আগামীতে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে প্রণোদনাও বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তারা। এছাড়া মহামারির মধ্যে রেকর্ড রেমিট্যান্স নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। মহামারির মধ্যে এত রেমিট্যান্স কিভাবে আসছে, ভবিষ্যতে এ প্রবাহ বহাল থাকবে কিনা, এ প্রশ্নগুলোই সবার মুখে। একই সঙ্গে গত বছর করোনা মহামারির কারণে দেশে ফিরেছেন প্রায় ২ লাখ প্রবাসী। এরপরও বাংলাদেশ প্রবাসী আয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। এরমধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহকে গতিশীল করতে ২ শতাংশ প্রণোদনা ঘোষণা করে সরকার। যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এ খাতে। রোববার এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আয়োজিত ‘সাম্প্রতিক প্রবাসী আয়-রেমিটেন্স প্রবাহ: এত টাকা আসছে কোথা থেকে?’ শীর্ষক এক ভার্চুয়াল সংলাপে বক্তারা এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।
আলোচনায় অংশ নিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, সরকার প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে স¤প্রতি তার কারণে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানো ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত ছয় মাসেই প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। প্রণোদনা আরেকটু বাড়ানো গেলে এই প্রবৃদ্ধি আরও টেকসই হবে। চট্টগ্রামের এই সংসদ সদস্য মনে করেন, চলমান ব্যবস্থায় প্রণোদনা দিয়ে পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রবৃদ্ধি টেকসই হতে পারে। কিন্তু এরপর অবশ্যই এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাই প্রবাসীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই বলে জানান তিনি।
প্রণোদনার মাধ্যমে চ‚ড়ান্ত টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না। এজন্য অবশ্যই প্রবাসীদের জন্য সরকারকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দক্ষতা অর্জন করার প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। যে লোক যে দেশে যেতে চায় সেই দেশের সংস্কৃতি, ভাষা এবং সংশ্লিষ্ট কাজের বিষয়ে তাকে দক্ষ করার পর পাঠাতে পারলে তার বেতন তুলনামূলক বেশি হওয়ার পাশাপাশি তার প্রয়োজনীয়তাও তুলে ধরতে পারবেন।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রবাসীদের কল্যাণে ব্যাপকভাবে গবেষণার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এ সভাপতি প্রবাসীদের জন্য করোনাভাইরাসের টিকা নিশ্চিত করার ওপরও জোর দেন।
এর আগে মূল প্রবন্ধে প্রফেসর মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী শুরু হওয়ার পরপরই বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফের এক গবেষণায় বাংলাদেশের রেমিট্যান্স ১৯ দশমিক ৭ শতাংশ কমে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে উল্টো পরিস্থিতি দেখা গেছে। ২০১৯ সালের স্বাভাবিক সময়ে প্রবাসীরা যে রেমিট্যান্স প্রেরণ করেছিল মহামারীর সময়ে সেই প্রবাহ উল্টো ৩৮ শতাংশ বেড়ে গেছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স ৩০ শতাংশ এসেছে সউদী আরব থেকে। গত বছরের উল্লেখযোগ্য ঘটনা হচ্ছে রেমিট্যান্স প্রেরণের দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ২৮ শতাংশ নিয়ে এবার দ্বিতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। দুই শতাংশ প্রণোদনা, উৎস না দেখিয়ে দেড় হাজার ডলার বা দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিট্যান্স পাঠানোর যে সুযোগ, গত জুলাই মাস থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা করার সিদ্ধান্ত এতে উল্লেখযোগ্য ভ‚মিকা পালন করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এসময় তিনি মহামারী কারনে বিদেশ যাওয়ার প্রবণতা কমে যাওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, গত বছরে যেখানে প্রায় ১৫ লাখ লোক বিদেশ গেছে সেখানে গত ছয় মাসে মাত্র সাত হাজার লোক বিদেশে পাড়ি দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে এখনও রেমিট্যান্স প্রবাহ ঠিক থাকলেও আগামী কয়েক মাসের মধ্যে কমে যাওয়ার আশঙ্কা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে সিপিডি চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, সরকার দুই শতাংশ প্রণোদন ঘোষণার পর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, এটা ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছে। এখন এই রেমিট্যান্স দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টেও বিরাট ভূমিকা রাখছে। এমন পরিস্থিতি এই ইতিবাচক প্রবাহ আরও কিভাবে বাড়ানো যায়, বিদেশ থেকে আরও কিভাবে সম্পদ দেশে আনা যায় তা নিয়ে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে পর্যালোচনা করে এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সেন্টার ফর নন রেসিডেন্ট বাংলাদেশিস (এনআরবি) এর চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে সাত লাখের বেশি লোক বিদেশ গেলেও ২০২০ সাল গেছেন মাত্র দুই লাখ ২৯ হাজার। কিন্তু রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে বিরাট উল্লম্ফণ ঘটেছে। এর পেছনে তিনি উৎস না দেখে পাঁচ হাজার ডলার পাঠানোর সুযোগের পাশাপাশি দুই শতাংশ প্রণোদনা ও বিশেষ করে এবার হজ করতে যেতে না পারা একটি কারণ বলে মনে করেন। তিনি আগামী তিন-চার মাস পরে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটিং মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) চেয়ারপারসন প্রফেসর তাসনিম সিদ্দিকী বলেন, আমাদের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে দেশে এখন প্রবাসীদের পরিবারের মধ্যে ৬১ শতাংশ রেমিট্যান্স পাচ্ছে না। রেমিট্যান্স আসছে মাত্র ৩১ শতাংশ পরিবারের কাছে। তাই এই পরিসংখ্যানের মধ্যে আবার রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে এটা অসঙ্গতিপূর্ণ। এটা কিভাবে হচ্ছে তা বের করা যাচ্ছে না।
পুরুষদের তুলনায় নারী প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে দাবি করে বলেন, নারী কর্মীরা বৈধ এবং আনুষ্ঠানিক কাজের স্বীকৃতি রয়েছে বলেই বেশি রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছে। অন্যদিকে পুরুষদের অনেকেই বিদেশে অনানুষ্ঠানিক কাজে জড়িত এবং তাদের বেশিরভাগই চাকরি হারিয়েছেন। তাই এখন থেকে আনুষ্ঠানিক কাজের জন্য বিদেশ পাঠানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
সংলাপে অংশ নেওয়া সউদী ফেরত কুমিল্লার শহীদুল ইসলাম বলেন, আমি মনে করে দেশে রেমিট্যান্স বৃদ্ধির প্রধান কারণ দুই শতাংশ প্রণোদনা। মহামারীর কারণে হুন্ডিওয়ালারা কিছুটা দুর্বল হলেও সম্প্রতি তারা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। তারা বলছে সরকার যেমন দুই শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে, আমরা তা দেব। আমাদের মাধ্যমে টাকা পাঠান। ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রবাসীরা এখনও সেভাবে সেবা পাচ্ছে না। অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অথচ হুন্ডিওয়ালাদের হাতে শুধুমাত্র টাকা দিলেই হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি সরকারি সেবা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। সউদী প্রবাসী তাজাম্মুল চৌধুরীও একই কথা বলেন। তবে যুক্ত হয়ে মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরা জসীম উদ্দিন মহামারীর কারণে দেশে ফিরে এসে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ আনেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।