Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চলছে সুদের কারবার

রামগতি (ল²ীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০১ এএম

ল²ীপুরের রামগতি উপজেলার হাটবাজারগুলোতে স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে চলছে জমজমাট সুদের ব্যবসা। চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন, আলোকসজ্জা ও সাজানো রয়েছে বাহারি ডিজাইনের স্বর্ণালঙ্কার। সবাই জানে জুয়েলারির দোকান। অথচ এই জুয়েলারির আড়ালে চলছে চড়া সুদে স্বর্ণ বন্ধকীর নামে সুদের ব্যবসা।
জানা যায়, এ বন্ধকী ব্যবসায় মানা হচ্ছে না সরকারি কোনো নিয়মনীতি। স্থানীয় ইউনিয়নের সামান্য একটি ট্রেড লাইসেন্সকে ব্যবহার করে তারা যুগের পর যুগ চালিয়ে যাচ্ছে এই অবৈধ বন্ধকী সুদের ব্যবসা। চড়া সুদে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করতে গিয়ে প্রতারিত ও সর্বস্বান্ত হচ্ছেন এলাকাবাসী। রামগতি উপজেলায় শতাধিক জুয়েলারি দোকানে কয়েকশ কোটি টাকার অবৈধ বন্ধকী ব্যবসা চলছে। তবে প্রশাসনের সংশ্নিষ্টরা বলছেন, এ অবৈধ স্বর্ণ বন্ধকী ব্যবসার নামে সুদের ব্যাপারে তারা অবগত নন।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রামগতি উপজেলার জমিদারহাট, কেরামতিয়া, আশ্রম, আলেকজান্ডার, রামদয়াল, বিবিরহাট, রামগতি বাজার, চৌধুরী বাজার, হাজিগঞ্জ, বান্দেরহাট ও আযাদনগরসহ ছোট বড় বিভিন্ন বাজারে প্রায় শতাধিক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে বন্ধকী ঋণের ব্যবসা চলছে। বন্ধকী ব্যবসায় ১শ’ টাকায় মাসে পাঁচ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত সুদ নেয়া হয়। এতে প্রতি মাসে এসব স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এ অঞ্চলের নদী ভাঙা অসহায় মানুষের কাছ থেকে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। স্বর্ণ ব্যবসার আড়ালে সুদের ব্যবসা করে অনেকে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আসায় মাত্র দুই-তিন বছরে অলঙ্কার তৈরির কারিগর থেকে নিজেই স্বর্ণ ব্যবসায়ী বনে যায়। অনেক অসহায় মানুষ টাকার প্রয়োজনে স্বর্ণ বন্ধক রেখে টাকা নেয় এই সব সুদি স্বর্ণ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। টাকা নেয়ার সময় স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা গ্রাহককে নির্দিষ্ট সময় সীমা বেধে দেয়। তাদের বেধে দেয়া সময়ের মধ্যে স্বর্ণ নিতে না পারলে গ্রাহকের ঐ স্বর্ণ আর পেরত পাওয়া যায় না।
বন্ধকী ব্যবসায়ীরা জানান, স্বর্ণ বন্ধক রাখা গ্রাহকদের জন্য তাদের আলাদা খাতা বা ফাইল সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানে তাদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদিসহ স্বাক্ষর ও ফোন নম্বর রাখা হয়। স্বর্ণের মালিককে স্বর্ণ ও টাকার তথ্যসংবলিত একটি কার্ডও দেয়া হয়। শর্তানুযায়ী, কোনো ঋণ গ্রহীতা টানা তিন মাস সুদের টাকা পরিশোধ করতে না পারলে স্বর্ণ গলিয়ে বিক্রি করার অধিকার থাকে বন্ধকী ব্যবসায়ীদের।
গ্রাহকরা জানান, তাৎক্ষণিক কোনো ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে কাগজপত্রের জামিলা ছাড়া টাকা পাওয়ার আর কোনো সহজ পথ নেই। এ ছাড়া ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এক সপ্তাহের আগে টাকা দিতে পারে না। পাশাপাশি তাদের সদস্য হতে হয়। কিন্তু বন্ধকী ব্যবসায়ীর কাছে স্বর্ণ ছাড়া আর কিছুই লাগে না। তাই তারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের বিশ্বাস করে বন্ধক রাখেন। এতে তাদের কাছ থেকে চড়া সুদ আদায় করেন এই সব সুদি মহাজনরা।
রামগতির আলেকজান্ডার বাজার কমিটির সভাপতি শামছুল বাহার খন্দকার জানান, স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সাথে গ্রাহকদের সব সময় একটা সমস্যা লেগেই থাকে। কিভাবে তারা এই ব্যবসা পরিচালনা করে তা আমরা জানি না। তবে সমস্যা তৈরি হলে তখন তাদের কাছে বিচার নিয়ে আসেন।
চরআলগী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, স্বর্ণ কেনাবেচার জন্য সরকারি বিধি মেনে ইউনিয়ন থেকে ট্রেড লাইসেন্স দেয়া হয়ে থাকে। বন্ধকী ব্যবসার জন্য কোনো লাইন্সেস দেয়া হয় না।
রামগতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল মোমিন বলেন, জুয়েলারি ব্যবসার আড়ালে বন্ধকী ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া পুরোপুরি অবৈধ। এ ব্যাপারে কেউ সুনির্দিষ্টভাবে অভিযোগ দিলে অবৈধ বন্ধকী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ