Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত : হাইকোর্ট

‘মৃত’ স্কুলছাত্রীর জীবিত ফেরা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৪ জানুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম

নারায়ণগঞ্জে ‘হত্যার শিকার’ স্কুলছাত্রী জীবিত ফেরার ঘটনাটিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পুরো পুলিশ বাহিনীকে এর সঙ্গে জড়ানোর প্রয়োজন নেই। তদন্তে যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তা থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়- পুলিশ বাহিনীর সেটি ভেবে দেখা উচিৎ। আদালত আরও বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে যদি পুলিশ হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোনো ব্যক্তিতে কোনো কট‚কথা পর্যন্ত বলা হয়, তাহলে সেটা অপরাধ হিসেবেই দেখা হয়।

গতকাল বুধবার ওই ঘটনায় বিচারিক তদন্ত কমিটির দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানিকালে বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের ডিভিশন বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। প্রতিবেদেনর ওপর পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করা হয়েছে ২০ জানুয়ারি।
এ সময় আবেদনকারী পাঁচ আইনজীবীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শিশির মনির। সরকারের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিনউদ্দিন। ‘দিশি হত্যা মামলা’র তদন্ত কর্মকর্তার (সাময়িক বরখাস্ত) পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী।

নারায়ণগঞ্জে মৃত স্কুলছাত্রী দিশামনির জীবিত ফিরে আসার ঘটনায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন সংক্রান্ত শুনানিকালে মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, বিচারিক তদন্ত কমিটির রিপোর্টে পুলিশ বাহিনীর ওপর একটা দোষ চাপানো হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অতিরঞ্জিত কিছু করেননি। তিনি তার আওতার মধ্যে থেকেই আসামি গ্রেফতার ও রিমান্ডে নিয়েছেন। আসামিদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি। কারণ আসামিরা জুডিশিয়াল কমিটির বাইরে আর কারও কাছে নির্যাতনের কথা তুলে ধরেননি। এ সময় হাইকোর্ট বলেন, জবানবন্দিতে আসামিরা যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটা সত্য নয়। ভিকটিমকে মেরে নদীতে ফেলার যে জবানবন্দি তাতে আসামিদের স্বার্থ কী? এদেশের মানুষ ক্ষদিরামের ফাঁসি দেখতে চেয়েছিল। এজন্য কি সকলেই ফাঁসিতে যেতে চায়? এ বিষয়ে আমাদের একটি সিন্ধান্তে আসতে হবে।

আদালত বলেন, আমরা বিচারপতি, আমরা এই মাটির সন্তান। আমরা সব কথা কোর্টে বলতে পারি না। এখানে শুনানির সময় সাংবাদিকরাও থাকেন। ফাঁসি হবে জেনেও আসামিরা স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিয়েছেন? জবানবন্দিতে আসামিরা মেয়েটিকে হত্যা করার কথা তাহলে কি শখ করে বলেছেন? এটা দুর্ভাগ্যজনক। অভাগা তো হলো এদেশের জনগণ। এ পর্যায়ে মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ভিকটিম বিচারিক কমিটির কাছে বলেছেন আসামি আবদুল্লাহ তাকে ধর্ষণ করেছেন।
আদালত বলেন, ২২ ধারায় জবানবন্দিতে মেয়েটি আদালতে কী বলেছেন? দুটো জবানবন্দির মধ্যে কোনটিকে আমরা ঠিক মনে করব?

আদালত আরও বলেন, নারায়গঞ্জের এই একটি ঘটনাকে পুরো পুলিশ বাহিনীর গায়ে মাখানোর দরকার নেই। বিছিন্ন ঘটনাকে বিছিন্নভাবেই দেখা উচিত। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে তাহলে তা থেকে কিভাবে উত্তরণ ঘটানো যায়, সেটা পুলিশ বাহিনীর ভেবে দেখা উচিত। মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা ভিকটিমকে উদ্ধার করেছেন। সেজন্য জুডিশিয়াল রিপোর্টে তার প্রশংসাও করা হয়েছে। এই মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হোক।
এ পর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিনকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, ভারতে কোনো আসামিকে রিমান্ডে নেয়া হলে সেখানে আইনজীবী রাখার সুযোগ আছে। সেজন্য তারা সিআরপিসি সংশোধন করেছে। আমাদের তো কোর্ট থেকে আইন সংশোধনের কথা বললে নানা প্রতিক্রিয়া হয়।

মনসুরু হক চৌধুরী ‘ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র’ মামলার দৃষ্টান্ত দিয়ে বলেন, এই মামলা বলে দেয় রিমান্ডে আইনজীবী রাখার সুযোগ রয়েছে। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এ মামলাটি এখন রিভিউ বিচারাধীন রয়েছে। সংবিধানের ১০৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আপিল বিভাগকে এ বিষয়ে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। তখন আদালত বলেন, ‘হাইকোর্টের কাজ কি তাহলে রুল মঞ্জুর, রুল খারিজ করা আর জামিন দেয়া?
এ পর্যায়ে রিভিশন মামলার আইনজীবী মো. শিশির মনির বলেন, ‘ব্লাস্ট বনাম রাষ্ট্র মামলায় রাষ্ট্রপক্ষ থেকে যে রিভিউ চাওয়া হয়েছে সেখানে রিমান্ডে আইনজীবী রাখার বিষয়ে কোনো বিরোধিতা করা হয়নি।
প্রসঙ্গত: গত ৪ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ এবং হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামিদের স্বীকারোক্তি আদায় সংক্রান্ত সদর থানার কার্যক্রমের বিষয়ে বিচারিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা পড়ে। গতকাল ওই প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়।

এর আগে নারায়ণগঞ্জে ‘ধর্ষণ ও হত্যার’ শিকার পঞ্চম শ্রেণীর স্কুলছাত্রীর জীবিত ফিরে আসার ঘটনার সার্বিক বিষয়ে বিচারিক অনুসন্ধান করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে ওই ঘটনার এফআইআর, জবানবন্দি, ভুক্তভোগী, আসামি সবার বক্তব্য দিয়ে প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হাইকোর্ট


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ