পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশে ২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের প্রথম চালান আসবে। বেক্সিমকো ২৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ভ্যাকসিন হস্তান্তর করবে। সরকার ২৬ জানুয়ারি থেকে করোনা ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যারা ভ্যাকসিনের আওতায় থাকবেন তাদেরকে অ্যাপসের মাধ্যমে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। এরপর, মোবাইলের মেসেজের মাধ্যমে ভ্যাকসিন গ্রহণের স্থান ও সময় জানিয়ে দেয়া হবে। আর ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশব্যাপী ভ্যাকসিন দেয়া শুরু হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও কারা কীভাবে ভ্যাকসিন পাবেন তার তালিকা এখনো পুরোপুরি চূড়ান্ত হয়নি। কারণ হিসেবে অনেকে জানিয়েছেন, সরকার থেকে চূড়ান্ত নির্দেশনা পেলেই তালিকা হবে। মাঠ পর্যায়ে সব প্রস্তুতি রয়েছে। এদিকে মহামারি নিয়ন্ত্রণে ফাইজার-বায়োএনটেক উদ্ভাবিত করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করতে কোভ্যাক্সকে চিঠি পাঠাবে বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ইনকিলাবকে বলেন, নির্ধারিত সময়েই আমরা ভ্যাকসিন পাচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য উৎস থেকেও ভ্যাকসিন পাওয়ার সব চেষ্টা চলছে।
সূত্র জানায়, দেশে মহামারি প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আসলেও তা ১৮ বছরের কম বয়সী এবং গর্ভবতী মা ও যাদের শারীরিক সক্ষমতা নেই তাদের কখনই ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হবে না। রেজিস্ট্রেশন করতে এনআইডির প্রয়োজন হবে। কিন্তু, যাদের এনআইডি নেই তাদের কিভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সে বিষয়ে আলোচনা চলছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
সূত্র মতে, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন এর দেখভাল করছে। বিভিন্ন জেলার সিভিল সার্জন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা বলছেন, আগের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা কমিটি করেছেন।
পিরোজপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. হাসনাত ইউসুফ জাকী ইনকিলাবকে বলেন, যাদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ফ্রন্টলাইনারদের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাংবাদিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, ইমাম-মুয়াজ্জেম এবং চাকরিজীবীদের অগ্রাধিকার ধরে আগানো হচ্ছে। তিনি বলেন, ভ্যাকসিন রাখার প্রস্তুতিসহ সব ধরণের পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন বিষয়টি দেখভাল করছে। আশাকরছি নিয়ম অনুযায়ীই অগ্রাধিকার ভিত্তিক ভ্যাকসিন দিতে পারবো। গত ১৩ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় কমিটির বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ভ্যাকসিন বণ্টনের বিষয়ে কমিটি গঠনের কথা বলা হয়। এসব কমিটিতে ১৬ জন করে সদস্যের কথা উল্লেখ আছে। জেলা কমিটির পাঁচটি ও উপজেলা কমিটির চারটি সুনির্দিষ্ট কাজের কথা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
জেলা পর্যায়ে সর্বশেষ এই কমিটি কী কাজ করছে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য সচিব এবং মেহেরপুর জেলার সিভিল সার্জন ডা. মো. নাসির উদ্দিন জানান, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী কমিটি কাজ করছে। তিনি বলেন, কারা কীভাবে ভ্যাকসিন পাবেন তার তালিকা এখনো তৈরি হয়নি। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চ‚ড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা পেলেই তালিকা হবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, জানুয়ারির ২১ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে দেশে ভ্যাকসিনের প্রথম ৫০ লাখ ডোজ আসবে। যা ২৫ লাখ মানুষকে দেয়া যাবে। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আসার পর সেগুলো স্টোরেজে রাখা হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির জন্য। ভ্যাকসিন পাওয়ার ৭ দিন পর প্রয়োগ শুরু হবে। এ সাতদিন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে।
ভ্যাকসিনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া খুবই কম উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর কোনো অসুবিধার দায় স্বাস্থ্য অধিদফতর বা সরকার নেবে না। তবে, ভ্যাকসিন গ্রহণের পর সামান্য জ্বর, মাথা ব্যথা, বমি ও ভ্যাকসিন দেয়ার স্থানে ব্যথা হতে পারে। এসব উপসর্গ শতকরা হিসেবে খুব কম মানুষেরই হতে পারে। এরপরও যদি কারও বড় ধরনের উপসর্গ দেখা দেয় সেজন্য টিকাদান কেন্দ্রে মোবাইল মেডিক্যাল টিম ও বেসিক মেডিসিন রাখা হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের নির্দেশনামত নির্দিষ্ট জায়গায় ভ্যাকসিন সরবরাহ করবে বেক্সিমকো। প্রথমে জেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন পাঠানো হবে বলে জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক। সারা দেশব্যাপী ভ্যাকসিন হবে বলেও জানানো হয়।
স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বলেন, টিকার ৫০ লাখ ডোজই প্রথম ধাপে দেয়া হবে। দুই মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় ডোজ দেয়া হবে। চলতি বছর ৬ মাসে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন দেশে আসবে। যা প্রয়োগ করা যাবে দেড় কোটি মানুষের ওপর। এছাড়া ভ্যাকসিন সরবরাহে পুলিশ সহায়তা করবে বলেও জানান মহাপরিচালক এবিএম খুরশীদ আলম। ভ্যাকসিন দেয়ার আগেই মোবাইলে মেসেজ পাঠিয়ে ভ্যাকসিন প্রদান কেন্দ্র ও ভ্যাকসিন গ্রহণের সময় জানিয়ে দেয়া হবে। এমনকি ভ্যাকসিন দেয়ার পর সার্টিফিকেট দেয়া হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট থেকে ভ্যাকসিন আসার পর সেগুলো স্টোরেজে রাখা হবে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরির জন্য। ভ্যাকসিন পাওয়ার ৭ দিন পর প্রয়োগ শুরু হবে। এ সাতদিন স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকদের ওপর পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। সারা দেশব্যাপী চলবে টিকাদান কর্মসূচি।
প্রফেসর ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ফাইজার এবং জার্মান সংস্থা বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি করোনার ভ্যাকসিন পাওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিøউএইচও) পরিচালিত কোভ্যাক্স কর্মসূচি থেকে বাংলাদেশে কাছে জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিনের বিষয়ে আগ্রহী কি না। ফাইজারের ভ্যাকসিনের সাফল্য পাওয়া গেলেও এর সংরক্ষণ ও বিতরণ নিয়ে জটিলতা আছে। সেজন্য দেশে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণের জন্য কতটি ফ্রিজ আছে সে হিসাব করে দু’একদিনের মধ্যেই কোভ্যাক্সকে চিঠি দেয়া হবে বলে জানানো হয়।
তবে, খুব বেশি ফাইজারের ভ্যাকসিন সংগ্রহ করা সম্ভব না বলেও স্বাস্থ্য মহাপরিচালক উল্লেখ করেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, দেশে থাকা ভ্যাকসিন সংরক্ষণের মোট ফ্রিজের মাত্র দশমিক ৪ শতাংশ ফ্রিজ আছে মাইনাস ৭০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণ করার মতো। করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কর্মসূচি কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে অন্তত ১৭২টি দেশে ২০০ কোটি ডোজ বিতরণের প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
ভ্যাকসিনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানিয়েছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগের পর মাথা ঝিমঝিম করা, ব্যথা, বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে। তবে সেটা ২ থেকে ৩ ভাগের বেশি না। যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রোধে ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম কাজ করবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে প্রথম দফায় পাবেন যারা
বাংলাদেশে যারা প্রথম দফায় করোনার ভ্যাকসিন পাবেন তাদের তালিকা প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। তালিকানুযায়ী কোভিড-১৯ স্বাস্থ্যসেবায় সরাসরি সম্পৃক্ত সরকারি, বেসরকারি ও প্রাইভেট স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রথমে ভ্যাকসিন পাবেন। এরপর রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাষ্ট্র পরিচালনায় কর্মকর্তা-কর্মচারী, সংবাদমাধ্যমকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
এরপর বয়স অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, লাশ সৎকার কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, জরুরি পানি-গ্যাস-পয়ঃনিষ্কাশন-বিদ্যুৎ-ফায়ার সার্ভিস-পরিবহন কর্মী, স্থল-নৌ-বিমান বন্দর কর্মী, প্রবাসী শ্রমিক, জেলা-উপজেলায় জরুরি জনসেবায় সম্পৃক্ত সরকারি কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্বল্প রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জনগোষ্ঠীরা করোনার ভ্যাকসিন পাবেন। এরপর ধীরে ধীরে দেশের সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হবে।
২১ থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে প্রথম ধাপে সেরামের ৫০ লাখ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন দেশে এসে পৌঁছাবে। এছাড়া ৬৪ জেলার মধ্য ২৮টি জেলায় ভ্যাকসিন সংরক্ষণাগার তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সাড়ে ৭ হাজার কেন্দ্র থেকে ভ্যাকসিন দেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট (এসআইআই) থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিন আনবে বাংলাদেশ। গত বছরের ৫ নভেম্বর এসআইআই এবং বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী সরকার সেরাম থেকে প্রতি ডোজ ভ্যাকসিন পাঁচ ডলার দামে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আনবে। ইতোমধ্যে ভ্যাকসিনের অর্ধেক টাকাও ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের জন্য দেশটির ব্যাংকে পাঠানো হয়েছে। ভ্যাকসিন আসলে প্রথম ধাপে কারা পাবেন, তার একটি অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি হচ্ছে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের নীতিমালাও মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। চুক্তি অনুযায়ী, সেরাম ইনস্টিটিউট ইন্ডিয়া থেকে প্রাপ্ত ৩ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ৬টি ধাপে সরাসরি বাংলাদেশের নির্ধারিত জেলার ইপিআই কোল্ড স্টোরসমূহে পৌঁছানোর দায়িত্বে থাকবে বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।